ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পদ প্রাপ্তি নিয়ে নানা গুঞ্জন, প্রশ্ন

প্রায় দেড় বছর পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংগঠনের গঠনতন্ত্র কতটা মানা হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনটির সাবেক নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটি করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ভাষ্যমতে, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কমিটি করলে সংগঠন বিতর্কিত হয়। কিন্তু এবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সেই দৃশ্যপট দেখা গেছে।
গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম (বাপ্পি) ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু স্বাক্ষরিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটির অনুমোদন দেয়। এরপরই সাবেক ছাত্রলীগসহ রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে এই কমিটি নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়।
ঢাকা মহানগরের সংগঠন বলা হলেও কমিটির বেশিরভাগ নেতা ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। কমিটিতে পদ পাওয়া অনেকের নামে একাধিক অভিযোগও আছে।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ একটি সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পাবে এবং ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছা্ড়া সহ-সভাপতি হবে ২১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নয়জন, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়জন, সম্পাদক ২৫ জন, সহ-সম্পাদক ২৫ জন, উপ-সম্পাদক ২৫ জন, সদস্য ৩৫ জন।
কিন্তু ২৮৬ সদস্য সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ। ২৫ জনের জায়গায় সম্পাদকীয় পদে রাখা হয়েছে ৩৮ জনকে। একইসঙ্গে প্রতিটি সম্পাদকীয় পদের বিপরীতে দুই থেকে ছয়জনকে উপসম্পাদক করে ১৩৫ জনকে পদ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কমিটি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগে আগে কখনো হয়নি বলে দাবি সাবেক ছাত্রলীগের নেতাদের।
২৮৬ সদস্যের মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি: সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একজন করে। এছাড়া সহ-সভাপতি ৭১ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন, সম্পাদক ৩৮ জন, সহ-সম্পাদক নয়জন, উপ-সম্পাদক ১৩৫ জন ও সদস্য নয়জন।
কমিটিতে দপ্তর সম্পাদক ১ জন হলেও আরও ৬ জনকে উপদপ্তর করা হয়েছে, প্রচার সম্পাদক ১ জন উপপ্রচার সম্পাদক ৬ জন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ১ জন উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক করা হয়েছে ৬ জনকে, শিক্ষা ও পাঠ্যচক্র সম্পাদক ১জন ৫ জনকে করা হয়েছে উপ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১জন উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক ৫জন,ক্রীড়া সম্পাদক ১ জন উপ ক্রীড়া সম্পাদক ৬জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ১ জন আর উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে ৫ জনকে, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ১ জন উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ৪ জন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ১ জন উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ৬জন, স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ১ জন উপ-স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ৪ জন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ১জন উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ৪জন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ১জন আরও উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ৪জন,স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা বিষয়ক সম্পাদক ১ জন উপ সম্পাদক ৪জন, নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক ১ জন উপনাট্য বিষয়ক সম্পাদক ২জন, আপ্যয়ান বিষয়ক সম্পাদক ১জন উপ আপ্যয়ান বিষয়ক সম্পাদক ৪ জন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ১ জন আরও উপ সম্পাদক ৪জন।
গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক, পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক , তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ,পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ক বিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক, মানব ও উন্নয়ন সম্পাদক বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক, মানবধিকার বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রী ও নারী বিষয়ক সম্পাদক, টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বিষয়ক সম্পাদক, উদ্যোগক্তা ও উদ্ধাবক বিষয়ক সম্পাদক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক, অটিজম বিষয়ক সম্পাদক, মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক একজন করা হলেও এসব পদে উপসম্পাদক করা হয়েছে তিনজন করে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে আছে ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। কিন্তু প্রয়োজনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতিক্রমে মহানগর কমিটির বর্ধিত করতে পারবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন। এ কমিটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টি আছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করার কথা উল্লেখ থাকলেও প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি নিয়ে কমিটি বর্ধিত করা যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/জেএ/কেএম)

মন্তব্য করুন