ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে সুপার ফুড পটল

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২৪, ০৯:৪৬

গরমের পর প্রকৃতিতে এখন বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় গরম আবহাওয়া থেকে স্বস্তির পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য তালিকায় এই সময় পুষ্টিকর খাবার থাকা প্রয়োজন। এ সময় শরীর সুস্থ রাখতে গেলে সবজিই ভরসা। এই মৌসুমে যখন পটলের মতো সবজি মিলছে, তখন আর অন্য খাবারে ভরসা রাখবেনই বা কেন। পটলের নাম শুনলে অনেকেই নাক সিঁটকায়। আবার এমন মানুষ রয়েছেন, যারা ভাজা হোক বা ভর্তা‌, পটল খেতে ভালোবাসেন। রোজ পাতে পটল রাখলে কী হয়, জানেন? সুগার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য, একাধিক রোগের হাত থেকে মুক্তি মেলে।

পটল উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম ট্ৰাইকোছান্ঠেছ ডায়োইকা। এক ধরনের বর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। এই গাছের ফল (পটল) সবজি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ, ভারতের পূর্বাঞ্চলের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা বিহার এবং ভারতের উত্তর প্রদেশ চাষ করা হয়ে থাকে। এই লতার প্রতিটি গাঁইট থেকে মূল বের হয়। এর পাতা বেশ খসখসে। পাতার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭.৫০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৫ সেন্টিমিটার। পাতার অগ্রভাগ সরু। দেখতে প্রতীকী হৃদপিণ্ডাকার। এর বোঁটা পশমযুক্ত। বোঁটার দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ সেন্টিমিটার। পটল গাছের ফুলগুলো একলিঙ্গিক। এর পুরুষ ফুলগুলো জোড়া জোড়া থাকে। স্ত্রীফুল এককভাবে দেখা যায়। স্ত্রীফুলে পুষ্পদণ্ড বেশ ছোট। এর পুষ্পনলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ সেন্টিমিটার।

পটলে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজের প্রাচুর্য। তাই এই সবজি আপনাকে রোজ পাতে রাখতেই হবে। তবেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। এবার আসুন এই সবজির ম্যাজিক গুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন খুবই বেড়েছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই হয়ে যেতে হবে সতর্ক। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আপনি পটল খেতেই পারেন। পটল ও পটলের বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপযোগী। পটলে ফ্ল্যাভিনয়েড জাতীয় উপাদান থাকে। থাকে কপার, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানগুলি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী। আসলে পটলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ফলে রক্তে সুগার বাড়ায় না। অপরদিকে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে পটল। তাই খাদ্য পাতে রাখতে হবে।

অ্যানিমিয়া দূর করে

এই পটলে রয়েছে ভালো পরিমাণে ভিটামিন বি, সি এবং আয়রন। এবার এই সব খনিজ আপনার শরীরের নানা সমস্যা কমিয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যানিমিয়া দূর হয়। শরীরে ব্যথা কমে। এমনকী ক্লান্তিও কেটে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে

পটলে ভিটামিন এ, বি১, বি২, সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদান রয়েছে, যা ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া পটলে ফাইবার থাকায় হজমের সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে।

হার্ট ভালো রাখে

হার্ট হল আমাদের প্রায়োরিটি। এবার হার্ট ভালো রাখার কাজেও পটল ভীষণ উপকারী। এবার এই খাবারে রয়েছে ভালো পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়া অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণও রয়েছে। তাই হার্টের নানা রোগ দূর করে দিতে পারে এই সবজি।

রক্ত পরিশোধক

বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে দূরে থাকতে শরীরের রক্ত পরিশোধন জরুরি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে রক্ত পরিশোধনে উপকারী পটল। রক্ত ছাড়া শরীরের কোষও পরিষ্কার করে পটল, এতে করে ত্বক ভালো থাকে।

​বয়স ধরে রাখে​

বেশিরভাগ মানুষই বয়স ধরে রাখতে চান। বয়স বাড়লেও সেই ছাপ যাতে শরীরে না দেখা যায়, তা নিশ্চিত করার পিছনে দৌড়াতে থাকেন। এই কাজটায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে পটল। এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং সি। এই দুই ভিটামিন শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। এছাড়া এতে আছে ভরপুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বয়স ধরে রাখে, তাই নিয়মিত পটল খান।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

পটলে যে ফাইবার পাওয়া যায়, তা পাচিত হতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে। ফলে দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না। আবার ১০০ গ্রাম পটলে থাকে মাত্র ২০ ক্যালোরি। ফলত যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন ও বুঝতে পারছেন না কোন খাবার খাওয়া উচিত, তাঁদের জন্য পটল একটি ভাল বিকল্প হতে পারে।

কোলেস্টেরল কমায়

পটল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমাতে ও ভাল কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে হৃদ্‌যন্ত্র ভাল থাকে। কমে স্ট্রোকের ঝুঁকি। কোলেস্টেরলের রোগীরা নিয়মিত পটল খেতে পারেন। সুস্থ থাকা সহজ হবে।

হার্ট সুস্থ থাকে

পটলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া, পটল রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

ফ্লুয়ের বিরুদ্ধে কার্যকরী​

এই সময়টায় অনেকেই ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে সহজেই রোগ জীবাণু শরীরকে ঘায়েল করছে। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা কমাতে চাইলে পটল খেতে পারেন। আয়ুর্বেদ মতে, ফ্লুয়ের শারীরিক সমস্যা দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে পটল। এতে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দূর হয়। এমনকি বাড়ে ইমিউনিটি। তাই এই সময়ে সুস্থ থাকতে পটলের তরকারি পাতে রাখতেই পারেন।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

পটলে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবার কিন্তু পেটের নানা সমস্যার বিরুদ্ধে দারুণ কার্যকরী। এমনকি হজম ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলা ভার।গবেষণায় দেখা গেছে, এই সবজি সহজেই গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজমের মতো সমস্যা দূর করে দিতে পারে। তাই যারা নিয়মিত এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা পটল অবশ্যই খাবেন। এতেই শরীর নীরোগ থাকবে। পাবেন একাধিক উপকার।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

তীব্র এই গরমে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে চেষ্টা করুন দিনে অন্তত একটা পটলের পদ রান্না করে খাওয়ার। পটলে রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার, যা পেট পরিষ্কারে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে প্রতিদিন পাতে থাকুক পটল।

(ঢাকাটাইমস/৮ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :