মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেভাবে বাড়াবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২৪, ১০:১৯| আপডেট : ০৮ মে ২০২৪, ১০:২১
অ- অ+

মানসিক চাপ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি কিংবা একঘেয়ে জীবন মানুষের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত। একজন মানুষ পুরোপুরি তখনই সুস্থ, যখন তার শরীর ও মন দুটোই পরিপূর্ণভাবে সুস্থ থাকে। কিন্তু অনেক সময় আমাদের শরীর সুস্থ থাকলেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, দীর্ঘদিন মানসিক অস্থিরতা এবং সুস্থ, স্বাভাবিক আচার-ব্যবহার পরিপন্থী জীবনযাপন করার ফলে মানসিক সুস্থতা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ চাপ দীর্ঘসময় বয়ে বেড়ালে বিষণ্নতা, হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ সঙ্গী হতে পারে। দেখা দিতে পারে বড় ধরনের মানসিক রোগও।

বিশেষজ্ঞদের মতে মূলত কয়েকটি কারণে মানসিক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো হলো জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব, পরিবেশগত প্রভাব, শারীরিক ও মানসিক যৌন-নির্যাতন, অস্বাভাবিকভাবে শিশুর লালন-পালন, দীর্ঘমেয়াদী অস্বাভাবিক চাপ, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য নেশা দ্রব্যের প্রতি অধিক আগ্রহ, মস্তিষ্কের গঠন জনিত সমস্যা, নিউরো ট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা, কিডনি, যকৃত, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব। এছাড়া মৃগীরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিকস্, মাথায় আঘাত, ব্রেইন টিউমার, হৃদপিণ্ডের ফেইলিয়রও মানসিক রোগের কারণ হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন কোনো ব্যক্তির আচরণের বড় ধরনের ও লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়, বিশেষ করে আবেগ প্রকাশে পরিবর্তন আসে এবং সেটা দৈনন্দিন কর্মকান্ডে প্রভাব ফেলে তখন বুঝতে হবে সেই ব্যক্তি মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। বিশেষজ্ঞরা মানসিক রোগের কিছু লক্ষণ উল্লেখ করেছেন।

হঠাৎ করে কারণ ছাড়াই উত্তেজিত হয়ে ওঠা। অন্যদের সঙ্গ এড়িয়ে চলা। সবার সাথে ঝগড়া বা বাগবিতন্ডায় জড়ানো। অনেকদিন যাবত নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে রাখা। টানা ১৪ দিনের বেশি সময় ধরে বিষন্নতায় ভোগা। বিনা কারণে অন্যদেরকে সন্দেহ করা। গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করার মতো নিয়মিত কাজে গাফিলতি করা। নিজের প্রতি উদাসীন থাকা এবং শারীরিক যত্ন না নেওয়া। পূর্বে ভালো লাগতো এমন কর্মকান্ডে আগ্রহ কমে যাওয়া। খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া। অতিরিক্ত শুচিবায়ুগ্রস্থ হয়ে ওঠা। সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা। পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া। সময়মতো না ঘুমানো এবং ঘুমের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া।

শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য এক ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে। এটি মানুষের জৈবিক গঠন, মানসিক গঠন ও সামগ্রিক মনোদৈহিক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। অন্যান্য রোগের মতো মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বেশ কতগুলো কার্যকরী উপায় আছে। সেগুলো হলো:

পরিস্থিতি এড়িয়ে না যাওয়া

মানুষের জীবনে কখনো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর, কষ্টদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা সেটাকে এড়িয়ে যেতে চাই এবং সেখান থেকে মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এই ধরনের সিদ্ধান্ত মানুষের জন্য নেতিবাচক প্রভাব হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে না গিয়ে বরং সেটাকে মোকাবিলা করে সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আগামী দিনগুলো অতিবাহিত করা উচিৎ। এতে করে নিজেদের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস ও আত্মতৃপ্তি পাওয়া যাবে।

পর্যাপ্ত ঘুমান

মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম খুবই দরকারী। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে মানসিক ক্লান্তি ও বিষাদও দূর হবে। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

সঠিকভাবে খান

মানসিক চাপে থাকলে খাওয়ার প্রতি অনেকেরই অনীহা হতে পারে। মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকা চাপকে বা সমস্যাগুলোকে কমিয়ে দেবে না বরং খাবার আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে এবং চাপ দূর করার পদক্ষেপগুলো নিতে সাহায্য করবে। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিন। সকালের নাস্তা ভালোভাবে করুন। দিনে অন্তত ছোটবড় মিলিয়ে ছয় বেলা খাবার খান। গমে রুটি, পাস্তা ইত্যাদি খান। ভিটামিন এ এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। পাশাপাশি গ্রিন টি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান।

মানুষকে সঙ্গ দেওয়া

মানসিক চাপের কারণ নিয়ে কাছের বন্ধুর সাথে কথা বলুন। একাকিত্ব মানুষকে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করুন সবসময় ভালো মানুষদের সাথে থাকতে। সকলের সাথে হাসিখুশি আচরণ করলে এটা আপনাকে মানসিক তৃপ্তি দিবে এবং আপনি বিচলিত হবেন না বরং প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

মদ্যপান, ধূমপান এবং মাদক থেকে দূরে থাকুন

মদ্যপান, ধূমপান এবং মাদক এই তিনটি জিনসই শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেকেই মানসিক চাপ অনুভব করলে ধূমপান করে থাকেন, তবে এই অভ্যাসটি আপনার ভালো তো করেই না বরং অনেক বেশী ক্ষতি করে ফেলে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল—প্রচলিত এই কথাটি একদমই সত্য। আর শারীরিক ভাবে ভালো ও ফিট থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। হতে পারে সেটা প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি অথবা কোন জিমে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ব্যায়াম করা। আপনার শরীর সব ধরনের পুষ্টি পাচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পুষ্টিকর খাবারই পরিমিতভাবে গ্রহণ করুন। যদি জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার সময় না হয় তবে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। সেটিও মানসিক চাপ কমাতে কাজে দেবে।

সৃজনশীল ও কর্মঠ হয়ে ওঠা

সৃজনশীলতা মানুষকে নতুন কিছু সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আর মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করতে পারলে তার আনন্দিত হয় এবং তৃপ্তি দেয়। এতে করে নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রাখা সম্ভব এবং অন্যান্য দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখা সম্ভব। সৃজনশীল কাজ মন ফুরফুরে রাখে। মন হালকা রাখতে ভরসা রাখুন জাপানি কিছু পদ্ধতিতে।

মেডিটেশন বা ধ্যান: আলো-বাতাসের অবাধ যাতায়াত আছে, এমন জায়গায় হাঁটু মুড়ে পদ্মাসনে বসে চোখ বন্ধ করে ধ্যান করার পদ্ধতিকে জাপানি সংস্কৃতিতে ‘জ়াজেন’ বলে। রোজ দিনের কিছু ক্ষণ সময় ধ্যানমগ্ন থাকলে মন এবং মস্তিষ্ক দুইই শান্ত হবে। মনের ভার কমবে অনেকটাই।

ইকেবানা: বাড়িতে অতিথি এলে কিংবা কোনও উৎসবের দিনে অনেকেই ফুল দিয়ে ঘর সাজান। অন্দরে প্রবেশ করেই যদি এক গোছা ফুল চোখে পড়ে, তা হলে মন ভাল হয়। রং এবং রূপ অনুযায়ী ফুল সাজানো সহজ নয়। তবে এই কাজটি করলে মন শান্ত থাকে। জাপানিরা যাকে ‘ইকেবানা’ বলেন।

ওনসেন: মনের অন্দরে জমে থাকা মেঘ দূর করতে জাপানি ’ওনসেন’ পদ্ধতি বেশ কার্যকর। উষ্ণ জলে স্নান করে মন ভাল করার এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। হালকা গরম পানি পেশিগুলি শিথিল করে, রক্ত সঞ্চালন সচল রাখে, উদ্বেগ দূর করে।

কিনহিন: হাঁটার সময় মন চঞ্চল হতে দেওয়া যাবে না। একটা জায়গায় স্থির রাখতে হবে। এই অনুশীলনকে জাপানে ‘কিনহিন’ বলা হয়। ধীরে ধীরে পথ হাঁটলে মন শান্ত হয়। মন একটি জায়গায় স্থির থাকে। তবে এটি নিয়মিত করতে হবে। ধারাবাহিকতা না থাকলে কোনও সুফল মিলবে না।

শিনরিন-ইয়োকু: বুনো গাছের গন্ধ আর জঙ্গলের আলো-আঁধারিতে মন শান্ত হতে বাধ্য। জাপানে যাকে ‘শিনরিন-ইয়োকু’ বলা হয়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সবুজ গাছপালার মধ্যে বেশি ক্ষণ থাকলে কর্টিসল হরমোন কম ক্ষরিত হয়। এই হরমোন ক্ষরণের কারণেই বাড়ে অবসাদ।

(ঢাকাটাইমস/৮ মে/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সুনামগঞ্জে পিকআপের ধাক্কায় শিশু নিহত
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে শুরু
ঈদুল আজহায় ১০ দিন ছুটির সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদের
আমি ওয়েস্টার্ন পোশাক পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি: মিম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা