ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুক্রবার, প্রার্থিতায় এগিয়ে কারা?

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ৪০ দিনের মাথায় শুক্রবার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে যাচ্ছে ইরানি জনগণ।
শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ৮০ জন রাজনীতিবিদ নিবন্ধন করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে মাত্র ছয়জনের প্রার্থিতা অনুমোদন করে দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল। এই ছয় প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনই কট্টরপন্থি এবং একজন মধ্যমপন্থি হিসেবে পরিচিত।
প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন– মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী, সাঈদ জালিলি, আলী রেজা যাকানি, আমির হোসেন কাজীজাদেহ হাশেমি ও মোহাম্মদ বাকের কলিবফ এবং একমাত্র সংস্কারবাদী মাসুদ পেজেশকিয়ান।
প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১. মাসুদ পেজেশকিয়ান– সংসদ সদস্য ও মোহাম্মদ খাতামির শাসনামলের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা মন্ত্রী। তিনি একমাত্র মধ্যপন্থি প্রার্থী, যিনি ইরানের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা সংস্কারবাদী শিবিরের সমর্থন পেয়েছেন।
২. মোস্তফা পুরমোহাম্মাদী– হাসান রুহানির সরকারের বিচারমন্ত্রী ছিলেন।
৩. ড. সাঈদ জালিলি– ইরানের সাবেক প্রধান পরমাণু আলোচক এবং ইরানের নীতি নির্ধারণী পরিষদ সদস্য। তিনি ১৩তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
৪. আলী রেজা যাকানি– তেহরানের মেয়র ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তিনিও ইব্রাহিম রায়িসির প্রতি সমর্থন জানিয়ে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
৫. সাইয়্যেদ আমির হোসেন কাজিজাদে হাশেমি– একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
৬. মোহাম্মদ বাকের কলিবাফ– তেহরানের সাবেক মেয়র ও ইরানের পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার।
ইরানে নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ছয়জন প্রার্থী মূলত সীমিত প্রচারণা চালিয়েছেন, যার মধ্যে টেলিভিশন বিতর্ক রয়েছে। যেখানে তারা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং পশ্চিমের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।
যদিও ইরানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের একটি উচ্চ আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আছে। কিন্তু দেশটির প্রকৃত ক্ষমতা সর্বোচ্চ নেতার হাতে। তিনিই বৈদেশিক বা পারমাণবিক নীতির মতো রাষ্ট্রীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারণা করা হচ্ছে– এবারও ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয়ী হবেন। যদিও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এই নির্বাচনে প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেননি। তবে মঙ্গলবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে খামেনি বলেছেন, ‘যিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের আনুকূল্য ছাড়া কিছুই করা সম্ভব না তিনি এই দেশকে সামলাতে পারবেন না।’
এদিকে খামেনির উপদেষ্টা ও দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘এমন একজন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করুন যার মতামত সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। জনগণের উচিত এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেওয়া, যিনি নিজেকে সেকেন্ড ইন কমান্ড মনে করবেন। প্রেসিডেন্টের উচিত হবে না বিভেদ সৃষ্টি করা।’
অন্যদিকে এবার ইরানের নির্বাচন অবাধ বা প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলেছেন, প্রার্থীর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত প্রভাব রয়েছে। এর কারণ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির বয়স এখন ৮৫ বছর। এবারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টই সম্ভবত দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা বা খামেনির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এবারের নির্বাচনে খামেনির ঘনিষ্ঠ এবং তার রক্ষণশীল ধারণা পোষণ করে এমন ব্যক্তিদেরই প্রার্থিতা অনুমোদন করে দেশটির গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
এর আগে ২০২১ সালের নির্বাচনে ইরানীরা ইব্রাহিম রাইসিকে ক্ষমতায় এনেছিল এবং তিনিই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পর দেশটি সর্বোচ্চ নেতা হবেন বলে বিবেচনা করা হতো। তবে গত ১৯ মে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ পূর্ব আজারবাইজানের খোদা আফারিন অঞ্চলে একটি বাঁধ উদ্বোধনের পর ফিরে আসার সময় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিহত হন।
হেলিকপ্টারটিতে প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, তাবরিজের জুমার নামাজের ইমাম আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আল-ই-হাশেম, ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালিক রহমেতিসহ মোট ৯ জন আরোহী ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরপরই দেশটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তিনি দুই মাস এ দায়িত্ব পালন করবেন।
(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/এমআর)

মন্তব্য করুন