কোটা ব্যবস্থায় যৌক্তিক পর্যায়ে সংস্কার প্রয়োজন: নুর
২০১৮ সালের চেয়ে এবারের কোটা বিরোধী আন্দোলন অল্পসময়ে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকারের কারণে তৈরি হয়েছে। সরকার ২০১৮ সালে আমাদের ওপর হামলা-মামলা করেছিল কিন্তু তাতে সফল হয়নি। এবারও যদি মনে করে শক্তি প্রয়োগ করে ছাত্রদের রাজপথ থেকে উঠিয়ে দিবে সেটা কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত হবে।’
বৃহস্পতিবার রাতে বর্তমান কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা টাইমসকে এসব কথা বলেন নুরুল হক নুর। ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নামে গঠিত সংগঠনের অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে তিনি আলোচনায় আসেন। আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সেসময় দফায় দফায়। নুরের নামে একাধিক মামলাও হয়েছিল। পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে দীর্ঘদিন গোপনে হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে তাকে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পাঁচটার দিকে শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শাহবাগে জড়ো হন। গেল কয়েকদিন রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে এই আন্দোলন। এবার অবরোধের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
শিক্ষার্থীদের নবতররূপের এই আন্দোলনের সম্ভাবনা ও মূল্যায়নও করেছেন নুর।আন্দোলনে বাধা এলে কেমন হবে তাও বলেছেন তিনি। পুলিশ আক্রমণ করলে সেটার স্ফুলিঙ্গ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করেন ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের ওপর আঘাত করে কোনো সরকার তার গদি টেকাতে পারেনি, পুলিশও রাজপথে টিকতে পারেনি।’
২০১৮ সালের চেয়ে এবার আন্দোলন অল্পসময়ে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘সেসময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই জনমত গড়ে তুলতে পেরেছে এবং রাজপথে নামতে পেরেছে। সরকারের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গেই এই দাবির সমাধান করা। ২০১৮ সালে সরকার এই আন্দোলনের তীব্রতা দেখেছে। আন্দোলন দেখে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার সেটা না করে আদালতের মাধ্যমে কোটাকে সামনে এনে জটিলতা তৈরি করল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ে নানান ধরণের মন্তব্য করে আন্দোলনকে আরও উস্কে দিছে।’
প্রশাসন-সরকার-ছাত্রদের মধ্যে মুখোমুখি অবস্থানের তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন নুর। তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের কারণেই তৈরি হয়েছে। সরকারকেই যৌক্তিক সমাধান দিতে হবে। ২০১৮ সালে অনেক ছাত্র এই আন্দোলন করতে গিয়ে আহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। দীর্ঘপ্রায় আটমাসের আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদের ত্যাগের মাধ্যমে এই পরিপত্র অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখা অথবা কোটাকে একেবারে বাতিল করা সময়ের দাবি। অথবা যৌক্তিক পর্যায়ে সংস্কার প্রয়োজন। সরকার যেটাকে ভালো মনে করুক, বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরণের আক্রমণ, হুমকি-ধামকি থেকে বিরত থাকতে হবে’ -বলেন বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের এই সভাপতি।
অন্যপ্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, ‘পুলিশ ভুল কাজ করবে না; পুলিশ আক্রমণ করলে সেটার স্ফুলিঙ্গ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। ছাত্রদের ওপর আঘাত করে কোনো সরকার তার গদি টেকাতে পারেনি, পুলিশও রাজপথে টিকতে পারেনি। বর্তমানে ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে, তাতে ছাত্ররাই যে রাজপথে আছে সেটা কিন্তু না। তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, সচেতন নাগরিক সমাজ ছাত্রদের প্রতি সংবেদনশীল। কারণ, তারাও মনে করে অযৌক্তিক কোটা মেধাবীদের বঞ্চিত করা করছে। কোটার মাধ্যমে দেশকে পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করার যে ষড়যন্ত্র সেখানে থেকে উত্তরণের জন্য এবং মেধাবীদের মূল্যায়ন করার জন্য কোটা বাতিল হওয়া দরকার বা সংস্কার হওয়া দরকার। তাই এই আন্দোলনের প্রতি সবার সমর্থন আছে। ছাত্রদের ওপর আক্রমন হলে সবাই রাজপথে নামবে, প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সরকার ২০১৮ সালে আমাদের ওপর হামলা-মামলা করেছিল কিন্তু তাতে সফল হয়নি। এবারও যদি মনে করে শক্তি প্রয়োগ করে ছাত্রদের রাজপথ থেকে উঠিয়ে দিবে সেটা কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত হবে; সরকার সেটা পারবেও না।’
(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এসএস/এসআইএস)
মন্তব্য করুন