দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক এমপি শিবলী সাদিকসহ ১১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

তিন বছর আগে রশিদুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ ১১৩ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, সাবেক পৌরমেয়র ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপির কর্মী বিপ্লব আলম বিলু বাদী হয়ে রশিদুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগে বিরামপুর থানায় মামলাটি করেন।
বিপ্লব আলম বিলু উপজেলার ২নম্বর কাটলা ইউনিয়নের উত্তর দাউদপুর গ্রামের মৃত সাহের উদ্দিন সরকারের ছেলে।
মামলার পর শুক্রবার সকালে মামলার এজাহারে থাকা ৫১নম্বর আসামি স্বপন হাড়ি (৪০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার স্বপন হাড়ি উপজেলার ২নম্বর কাটলা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাড়িপাড়া এলাকার মৃত অভিলাষ হাড়ির ছেলে।
হত্যা মামলার আসামিরা হলেন- দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, ২নম্বর কাটলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী মণ্ডল, ৩নম্বর খানপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিহার রঞ্জন পাহান, ৭নম্বর পলিপ্রয়াগপুর ইউপি চেয়ারম্যান রহমত আলী, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাউল ইসলাম মণ্ডল, ছাত্রলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, সাবেক পৌরমেয়র লিয়াকত আলী সরকার ওরফে টুটুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন ওরফে ঝড়ু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ, যুবলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম ওরফে বকুল ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম ওরফে মানিকসহ ১১৩ জন এবং আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে বিরামপুর উপজেলার ২নম্বর কাটলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইউনুছ আলী মণ্ডল নৌকা প্রতীকে ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নাজির হোসেন আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে দক্ষিণ কাটলার ধানহাটি এলাকার মৃত নূরুল হুদার ছেলে রশিদুল ইসলাম (২৫) আনারস প্রতীকের প্রার্থী নাজির হোসেনের কর্মী হিসেবে ভোটে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে ইউনুছ আলী মণ্ডল নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন। পরে, গত ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় কাটলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী মণ্ডলের পক্ষে সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে আনারস প্রতীকের কর্মী রশিদুল ইসলাম কাটলাবাজারে অবস্থান করছেন এমন একটি সংবাদ নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী মণ্ডল মঞ্চে থাকা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিবলী সাদিককে দেন। এ সময় শিবলী সাদিক বাজারে অবস্থান করা রশিদুল ইসলামকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। পরে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ও মামলার ৩৩ জন আসামি ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কাটলাবাজারের খাদ্যগুদামের সামনে থেকে রশিদুল ইসলামকে ধরে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসেন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের নির্দেশে আসামিরা অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল নির্মাণের কাজে পড়ে থাকা বাঁশের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে রশিদুল ইসলামের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই রশিদুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, শুক্রবার সকালে বিরামপুর থানায় ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার পর এজাহারে থাকা স্বপন হাড়ি নামের এক যুবককে সকালে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিকে শুক্রবার দুপুরে দিনাজপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
(ঢাকা টাইমস/২৬অক্টোবর/এসএ)

মন্তব্য করুন