যেসব প্রশ্নে ভেস্তে গেল মুরাদনগর ছাত্র-জনতার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন, অতঃপর…

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪২| আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৪৫
অ- অ+

মুরাদনগর ছাত্র-জনতার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্ময়করভাবে ছাত্রলীগ নেতার পক্ষে সাফাই দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মুরাদনগর এনসিপির নেতারা উপস্থিত হয়ে যেসব বক্তব্য দেন, সেখানে কুমিল্লা-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বিষয়ে কোনো শব্দই উচ্চারণ হয়নি, বরং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও হুইপ এবং পাঁচবারের সাংসদ কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য বারবার উচ্চারিত হয়েছে।

কেন ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ এনসিপিতে ভিড়েছে মুরাদনগরে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকারী এনসিপি নেতা কামরুল হাসান কেরান ও অন্যরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করা ছাড়া জুতসই কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা দাবি করেন, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের অনুগামীরা মুরাদনগরের দখল, চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এমনকি থানা পর্যন্ত আক্রমণ করা হচ্ছে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তারা।

এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ করে এনসিপিকে মুরাদনগরে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। মুরাদনগরের জনতার ভালোবাসার মানুষ কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। যিনি অহিংস রাজনীতি ও মানবসেবার মাধ্যমে মুরাদনগরের মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজির বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্টের পরেও এলাকায় তার পক্ষে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে এর প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান কেরানের বক্তব্য চলাকালে হঠাৎ একজন যুবক সেখানে উপস্থিত হয়ে তার লিখিত বক্তব্য পাঠ থামিয়ে দেন। তিনি উচ্চস্বরে বলতে থাকেন- আপনাকে (কেরান) আর লিখিত বক্তব্য পড়তে হবে না। এখন লিখিত বক্তব্য পড়বেন মুরাদনগর উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি মিনহাজুল হক। এই মিনহাজুল তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের পক্ষে সাফাই শুরু করেন।

তার বক্তব্য শেষ হলে সাংবাদিকরা জানতে চান— এসসিপি কীভাবে মুরাদনগর উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করছে? কীভাবে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের পুর্নবাসন করা হচ্ছে? এমনকি এনসিপির ব্যানার লাগানো গাড়িতে যুবলীগ নেতা কীভাবে নিজ বাড়িতে ফিরলেন? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কেউ। সাংবাদিকদের তরফে এসব প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সেখানে উপস্থিত অনেকে।

জানা গেছে, সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে শ্রীকাইল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার এনসিপির ব্যানার লাগানো গাড়িতে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় তোলপাড় চলছে।

গোটা সংবাদ সম্মেলন চলে হট্টগোল আর অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে। যেই ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল তাদের সঙ্গে স্থানীয় আরও কিছু মানুষ উপস্থিত হন। তারা সংবাদ সম্মেলন চলাকালে একাধিকবার সাংবাদিকদের ওপর উত্তেজিত হন। সাংবাদিকদের নানা কটুক্তিমূলক কথা বার্তায় বলতে শোনা যায়।

পরে সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলন বয়কট করে সেখানে থেকে বেরিয়ে যান। এরপরও উপস্থিত এনসিপির অনুসারী কয়েকজন পেছন থেকে সাংবাদিকদের বলতে থাকেন- ‘এরা হলুদ সাংবাদিক।’ একজন উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করে তারা বলেন— ‘এরা আমাদের নেতাকে ছোট করতে এখানে এসেছে। এসব সাংবাদিক কায়কোবাদের লোক।’

যেসব প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হন উপস্থিত কর্মীরা

সংবাদ সম্মেলন শেষে উপস্থিত একজন সাংবাদিক জানতে চান- মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এনসিপিতে ভেড়ানো হচ্ছে। যেমন- গোলাম কিবরিয়া, যুবলীগের আনোয়ার হোসেন। এটা কেন?

এই প্রশ্ন শোনার পরই পেছন থেকে হইহুল্লোড় শুরু হয়। তারা বলতে থাকেন- এটা কোনো প্রশ্ন না। আমরা মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছি। একইভাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কেউ তার উত্তর দেননি।

পুনরায় সাংবাদিকরা কামরুল হাসান কেরান ও মিনহাজুল হকের কাছে জানতে চান, আপনারা কি মুরাদনগরে বৈষম্যেবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন? আন্দোলন চলাকালে কোথায় ছিলেন? আপনারা যে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন তার কোনো প্রামাণ্যচিত্র আছে?

এসময় তারা একে-অন্যকে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন। পরে কথা ঘুরিয়ে বলেন— ‘আমরা অবশ্যই মাঠে ছিলাম। না হলে আওয়ামী লীগের পতন হলো কীভাবে? শুধু আমরা না, ছাত্রলীগ-যুবলীগের অনেকে আমাদের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে। তারা আমাদের সাথে ছিল।’

লিখিত বক্তব্য চলাকালে ছাত্র সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক বলেন, ‘২৪ মার্চ সিএনজিতে কোম্পানীগঞ্জ নগরপাড় যাওয়ার সময় সিএনজিচালকের কাছে চাঁদাদাবি করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বিএনপির লোকজন আমার ওপর হামলা করে।

তার বক্তব্য চলাকালে সাংবাদিকরা জানতে চান— আপনি সেদিন কেন ছাত্রলীগ নেতা সবুজকে ডেকেছিলেন? নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা হয়ে সবুজ কীভাবে এনসিপির হয়ে কাজ করছে?

এমন প্রশ্নে ওবায়দুল হক বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের শুরু থেকে সে আমাদের সঙ্গে ছিল। তাই তাকে ঘটনার সময় ডাকা হয়েছিল।’

তখন সাংবাদিকরা পাল্টা প্রশ্ন করেন— জুলাইয়ে কেউ এক দিন মিছিল করলেই কি তাকে দলে নিতে পারেন? সে তো নিষিদ্ধ সংগঠনের এখনো পদধারী। তবে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি ওবায়দুল হক। তিনি কিছু সময় চুপ থাকার পর মাইক দিয়ে দেন কেরানের কাছে।

(ঢাকাটাইমস/১৩এপ্রিল/এলএম/এসএস/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শেখ পরিবারের ৫ সদস্যের জমি-বাড়ি ক্রোক, রিসিভার নিয়োগের আদেশ
ধাওয়া খেয়ে পিছু হটল ভারতের চার যুদ্ধবিমান
নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান
এসপি পদমর্যাদার ১৪ কর্মকর্তার বদলি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা