গ্রাম ছেড়ে শহরে সবজি চাষ!
আবদুল মোতালেব। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। সেখানে সহায়-সম্পত্তি বলতে ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। স্ত্রীসহ তিন মেয়ে ও এক ছেলের সংসারে অভাব তাই নিত্যসঙ্গী। অবশেষে পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। জীবিকার সন্ধানে ঢাকা এসে মোতালেব বেশ কিছুদিন বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে কাজ খোঁজেন। কিন্তু বৃদ্ধ বলে কেউই তাঁকে কাজে নিতে চায় না। শেষমেশ বেছে নেন সবজি চাষ। বর্তমানে তিনি অন্যের জমিতে সবজি আবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ীর সামাদনগর এলাকায় ১০ শতাংশ জায়গা বর্গা নিয়ে শীতকালীন বিভিন্ন সবজি চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেটি আরও বড় আকার ধারণ করে। বর্তমানে তিনি প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করছেন।
ষাটোর্ধ্ব মোতালেবের ভাষ্য, বর্গা জমিতে সবজি চাষ করে খুব বেশি একটা লাভ হয় না। তবে কোনো রকম সংসার চলে যায়।
এই বয়সেও জমিতে কাজ করছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে মোতালেব মুখটা ভার করে বলেন, ‘পোলা-মাইয়ার মুখে ভাত তুলে দিতে এ বয়সেও হারাদিন ক্ষেতে পইড়া থাহি। সবজি বেইচ্চা তিন বেলা ডাল-ভাত জোটে আর কি।’
আবদুল মোতালেব ছাড়াও সামাদনগরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবজি আবাদ করছেন অনেকে। কেউ কেউ নিজের বাসার ছাদেও হরেক রকমের সবজি চাষ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যাত্রাবাড়ীসহ, কাজলা, রায়েরবাগ, শনিরআখড়া এবং চিটাগং রোডের বিভিন্ন বাজারে এখান থেকে সবজি সরবারহ করা হয়।
অনেকে আবার দূর-দূরান্ত থেকে সরাসরি ক্ষেতেই চলে আসেন সবজি কিনতে। মার্জিয়া সুলতানা নামের এক নারী তার সন্তানকে সঙ্গে সামাদনগরে এসেছেন সবজি কিনতে। বাজার থেকে না কিনে এখানে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আসলে বাজারে টাটকা সবজি পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখানে দামটা অনেক কম। তাই আাসি।’
দামটা আসলেই অনেক কম। আর টাটকা তো বটেই। লালশাক এক আঁটি চার থেকে পাঁচ টাকা। অথচ পার্শ্ববর্তী বাজারে খবর নিয়ে জানা গেল ১০ থেকে ১২ টাকা। ফুলকপি প্রতি পিছ ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর অন্য বাজার ঘুরে দেখা গেল ২০ থেকে ২৫ টাকা। দাম আর মানের দিক থেকে সামাদনগরে সবজি কিনতে রীতিমত হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেকই।
(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/টিআর/জেডএ)