ভারতীয় তিন চ্যানেল সম্প্রচারের রায় চেম্বারেও বহাল
নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়া ও পারিবারিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার অভিযোগ এনে ভারতীয় তিনটি টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা সম্প্রচার বন্ধে রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
বুধবার চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের রায় স্থগিত আবেদনে ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। এর ফলে ভারতীয় তিনটি টিভি চ্যানেলের চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী এখলাস উদ্দিন ভূইয়া। তিনি জানান, রায় স্থগিতের ওপরে কোনো আদেশ দেননি। তবে নিয়মিত আপিল করতে বলেছেন আদালত।
গত ২৯ জানুয়ারি স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলার সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় এই তিন টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে আর কোনো বাধা নেই।
হাইকোর্টের রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মো. এখলাছ উদ্দিন ভূইয়া নিজেই। স্টার জলসা, স্টার প্লাসের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
রায় ঘোষণার পর মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ভারতীয় টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি বাংলা বন্ধ চেয়ে যে রিট আবেদনে যে রুল জারি করা হয়েছিল সেই রুল ডিস চার্জ করেছেন। রিটকারীর বিপক্ষে রায় দিয়েছেন।
রিট খারিজের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো অশ্লীল কোনো দৃশ্য থাকে অথবা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কোনো বিরোধ সৃষ্টি হলে সেই সমস্ত ক্ষেত্রে এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ কোথায় দায়ে হবে সেই বিষয়ে ক্যাবল নেটওয়ার্ক-২০০৬ আইনের সেকশন-৭ ধারা অনুযায়ী আবেদন করতে পারে। ওই আইনের ৭(২) বলা আছে, সাত দিনের মধ্যে সেটি নিষ্পত্তি করার জন্য। যদি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় সেক্ষেত্রে সাজার বিধান রয়েছে। কিন্তু রিটকারী এই সব বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নিয়ে সরাসরি রিট আবেদন করেছেন। সেই কারণে রুল ডিসচার্জ হয়েছে। এছাড়া রিটকারীর রিটটি ইতিপূর্বে খারিজ হয়েছিল সেই বিষয়টি তিনি তার রিটে উল্লেখ করেননি।
আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, আদালত বলেছেন, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিজ্য, আমাদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াতে পারে এই সব বিষয় সম্প্রচার করা যাবে না।
২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর এ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ভারতীয় এই তিন টিভি চ্যানেল বন্ধে নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ। রুলে তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়।
এর আগে ডাক ও রেজিস্ট্রি যোগে এ বিষয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ২০১৪ সালের ২ আগস্ট দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ‘পাখি প্রেমে প্রাণ বিসর্জন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের ঘরে-ঘরে বাড়ছে ভারতীয় ধারাবাহিক নাটকের জনপ্রিয়তা। এসব সিরিয়াল-প্রীতির কারণে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রমেই দর্শক হারাচ্ছে, দেশ হারাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি। কিশোরী-তরুণীদের ফ্যাশনেও এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ, ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসার ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের ‘পাখি’র প্রেমে প্রাণ গেল এক যুবক ও মেয়ে শিশুর।’ ‘পাখি চরিত্রে রূপদানকারী তরুণীর পোশাকের অনুকরণে এবার ‘পাখি’ নামের একটি পোশাক দেশের ঈদবাজারে জমজমাট ব্যবসা করেছে। ঈদে চড়া মূল্যের এ জামা নতুন স্ত্রীকে কিনে দিতে না পারার ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করেছে প্রান্তিক শ্রেণির এক যুবক।ঈদের আগের দিন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের নন্দতেঘরী গ্রামে শাহীন নামের ওই যুবক আত্মঘাতী হয়।
পাখির মরণকামড় থেকে ছাড় পায়নি দশ বছরের শিশুও। পাখি নামের পোশাক না পেয়ে অভিমানে ঈদের দু’দিন আগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নূরজাহান নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। একারণেই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জনস্বার্থে ভারতীয় চ্যানেলে বন্ধ চেয়ে রিট করা হয় বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/এমএবি/জেবি)