নিজের ২৬০০ প্রত্নসম্পদ বগুড়া জাদুঘরে দান

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে
 | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০১৭, ১৮:৪৫

৪০ বছরের বেশি সময় ধরে নিজের হাতে সংগ্রহ করা ২৬০০ প্রত্নসম্পদ বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরকে দিয়েছেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। এতে রয়েছে পুঁতির দানা থেকে প্রাচীন আমলের পণ্য বিনিময়ের কড়ি, মৃৎসামগ্রী থেকে শুরু করে তামা, পিতল ও ব্রোঞ্জের তৈজসপত্র; খাট-পালঙ্ক, দরজা-কপাটসহ নানা প্রত্নসামগ্রী।

মহাস্থানের মাটিতেই বড় হয়েছেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। তারুণ বয়স থেকে প্রত্নসামগ্রী সংগ্রহের প্রতি ঝোঁক ছিল তার। জীবনের দীর্ঘ সময় নানা জায়গা ঘুরে তিনি নিজের মুঠোয় তুলে আনেন পড়ে থাকা হাজার বছরের নানা প্রত্নসম্পদ।

‘ইতিকথা পু-্রবর্ধন’ নামের একটি ইতিহাসগ্রন্থ আছে অধ্যাপক মান্নানের। সেই ইতিহাসগ্রন্থ রচনা করতে গিয়ে চষে বেড়ান পুরো মহাস্থান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা। তখন তার নজরে আসে অনেক প্রত্নসামগ্রী নানা স্থানে নানাজনের কাছে অনাদরে পড়ে আছে। তিনি ওই গ্রন্থের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পাশাপাশি অনাদরে পড়ে থাকা প্রত্নবস্তুও সংগ্রহ শুরু করেন।

অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের সংগ্রহের যাত্রা শুরু ১৯৭৫ সালে। দীর্ঘ সময় ধরে সংগ্রহ করা সেসব প্রত্নসম্পদ সযতেœ রাখেন নিজের কাছে। নিজের কাছে থাকা সেই সম্পদগুলো তিনি শনিবার বিকেলে বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘর চত্বরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন। তার এই মহতী উদ্যোগে বগুড়ার প্রত্নসম্পদ আরো সমৃদ্ধ হলো।

যেসব সামগ্রী হস্তান্তর হলো

দুই হাজার ৬০০-র বেশি প্রত্নসামগ্রী প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর করেন অধ্যাপক মান্নান। এর মধ্যে পোড়ামাটির অলংকৃত ইট, পোড়ামাটির ঢাকনা, ঢাকনাসহ পাতিল ও বাটি, লাল ও কালো রঙের কলসি, ব্রোঞ্জের বাটি, খাড়–য়া, বালা, লকেট, গলার হার, চুলের কাঁটা, কোমরের বিছা, চিনামাটির থালা, আলাদিনের প্রদীপসদৃশ পাত্র, লোহার মসলা বাটার পাত্র, অলংকার সংরক্ষণের জন্য ছোট বাক্স, কাচের মূর্তি, পাখির প্রতিকৃতির মূর্তি, হুক্কা, ছোট হাস্যবদন বুদ্ধমূর্তি, সাদা পাথরের বটিকা, পিতলের বাটি, থালা ও কুপি, ঘটি, জলদানি, নলযুক্ত পোড়ামাটির কলস, পিতলের রিকশা, পানদানি, আতরদানি, সুরমাদানি, রুপার মুদ্রা, তামার মুদ্রা, কড়ির মালা, হাঁড়ের তৈরি নরমু- মালা, কাঠের মালা, সোনার প্রলেপযুক্ত কয়েন, তামার ফরসি লিপি, পোড়ামাটির সিলিং (মোহর), নানা রঙের বিটিং (পুঁতি), প্রাচীন আমলের দরজা (কপাট) ও খাট (পালঙ্ক) উল্লেখযোগ্য।

অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জানান, প্রত্নবস্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি এসব সামগ্রী সংগ্রহ করেছিলেন। ইচ্ছ্ াছিল সেগুলো প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন, যেন মানুষের মধ্যে ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। সেই ইচ্ছা থেকেই তিনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে সেসব হস্তান্তর করেন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেন, অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে পাওয়া প্রত্নসম্পদ মহাস্থান জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি সামগ্রীর নিচে তার সৌজন্যে পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে। প্রত্নসম্পদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা, মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মজিবর রহমান, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিইউজে) সাধারণ সম্পাদক জে এম রউফ প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :