মনোহরদীতে গবাদিপশুর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস
নরসিংদীর মনোহরদীতে গবাদিপশু ও মুরগির খামারের বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে বায়োগ্যাস। স্থাপন করা দুই শতাধিক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত গ্যাস বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে তিন শতাধিক বাসাবাড়িতে। পরিবেশবান্ধব ও কম খরচে লাভজনক হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এসব বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। জ্বালানি সাশ্রয়সহ বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে ব্যবহৃত উচ্ছিষ্ট অংশ ব্যবহার হচ্ছে পুকুরের মাছের খাবার ও কৃষি জমির জৈবসার হিসেবে।
সরেজমিন মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য গৃহপালিত গবাদিপশু, কোয়েল পাখি ও মুরগির খামার। এসব খামারের বর্জ্যে দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হওয়ায় বিপাকে ছিলেন এলাকাবাসী ও খামারিরা। কিন্তু এখন আর নেই পরিবেশগত এসব সমস্যা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার দুই শতাধিক বাড়ি ও খামারে তৈরি করা হয়েছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।
মাসিক ৮শ টাকায় গ্রাহকদের বাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দিয়ে লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের উচ্ছিষ্ট বর্জ্য ব্যবহার হচ্ছে মাছের খাবার ও কৃষি ফসলের জৈবসার হিসেবে। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় উপজেলাজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এসব বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।
মনোহরদী উপজেলার কুড়িপাইকা গ্রামের মো. খোরশেদ আলম বলেন, আমার খামারের আড়াই হাজার লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা ফেলে দিতে হতো। এতে দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষিত হওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। পরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করি। এখন মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে চলে যাওয়ায় পরিবেশ দূষিত হয় না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে নিজের বাসার রান্নার কাজ চলছে। পাশাপাশি পাঁচজন গ্রাহককে মাসিক ৮শ টাকায় গ্যাসের সংযোগ প্রদান করেছি।
হাররদিয়া গ্রামের মাসুদ মিয়া বলেন, বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে আমার বাড়িতে পালিত চারটি গরুর গোবর দিয়ে গ্যাস তৈরি করে বাসার রান্নার কাজ চালাচ্ছি। এতে লাকড়ি বা সিল্ডিন্ডার গ্যাস খরচ লাগছে না। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে উচ্ছিষ্ট বর্জ্য জমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করছি। ভবিষ্যতে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে আশপাশের বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ প্রদানের ইচ্ছে আছে।
কাচিকাটা গ্রামের খামারি মিলন মিয়া বলেন, কম খরচে নিজের খামারের বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করার চেয়ে আনন্দের আর কি আছে? বায়োগ্যাসের মাধ্যমে মুরগির খামারে বাচ্চা তাপ দেয়া, বাসার রান্নার কাজে ব্যবহার, জৈবসার উৎপাদন ও জেনারেটরের মাধ্যমে বাতি জ্বালাতে পারছি। এতে খরচ ভোগান্তি দুটোই কমেছে।
মনোহরদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম বলেন, জৈবসার উৎপাদন ও বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে খামারিদের বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাত্র ২৫ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকায় স্থাপন করা যায় এসব বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। সরকারিভাবে দেয়া হয় কারিগরি ও ঋণ সহযোগিতা। অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপন করছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।
(ঢাকাটাইমস/১৭মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন