‘বিসিএস কর্মকর্তা ও সাংবাদিকের তুলনা ঠিক নয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ মে ২০১৭, ২২:৫৬ | প্রকাশিত : ০৩ মে ২০১৭, ২২:০১

বেতন ও মর্যাদার প্রশ্নে সাংবাদিকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিসিএস ক্যাডারদের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। ‘বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যমের বর্তমান চিত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।

প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকরা নিজেরা একদিকে শ্রমজীবী বলে দাবি করি, আরেক দিকে নিজেদের তুলনা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে, কিংবা ক্যাডার সার্ভিসে যারা আছেন তাদের সঙ্গে। মর্যাদার প্রশ্নে, বেতনে প্রশ্নে। এইটা কি ঠিক হলো? মোটেও ঠিক হলো না।’

‘যদি তাদের সাথে তুলনা করতেই হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যেভাবে, যেই প্রসেসের মাধ্যমে, যেই ব্যাকগ্রাউন্ডের মাধ্যমে নিয়োগ পান; কিংবা একজন বিসিএস ক্যাডারের অফিসার যেই প্রসেসে, যেই ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে নিয়োগটা পান, আমি তো মনে করি সাংবাদিকদের জন্য এ রকম একটা প্রসেস, একটা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত, যার মাধ্যমে রিক্রুটমেন্ট হবে। কোনোভাবেই পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ ছাড়া সাংবাদিকদের নিয়োগ হওয়া উচিত নয়।’ বলে শফিুকর রহমান।

মেধার চর্চা দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে আসছে উল্লেখ করে প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, ‘এখানে অনেক পত্রিকা আছে। পত্রিকায় যে রিক্রুটমেন্ট হয়, তিন-চার লাইন বাংলা লিখতে পারলেই সাংবাদিক হওয়া যায়। আমাদের ফটোসাংবাদিকদের মধ্যে আছে, কোনো রকমে ক্যামেরা কিনতে পারলে সাংবাদিক হওয়া যায়। আমাদের এখানে কোনো রকমে তিন-চার লাইন বাংলা লিখতে পারলে সাংবাদিক। এমনকি এক লাইন বাংলেজি জানেনও না, ইনি ইংরেজি পত্রিকায় চাকরি করেন।’

শফিকুর রহমান বলেন, ‘হাজার হাজার পত্রিকা বের হবে, লক্ষ লক্ষ সাংবাদিক হয়ে যাবে একদিন। তার কারণ, আমি যদি এই পেশায় থাকতে পারি তাহলে ব্লাকমেইল করার সুযোগটা বেড়ে যায়, সুযোগটা বেশি পাওয়া যায়।’

সাংবাদিক নেতাদেরও সমালোচনা করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান। বলেন, ‘আমরা যারা ইউনিয়ন করি, নেতাগিরি করি, কয়জন আমরা লেখি? আমরা তো লেখিই না। এমনও পত্রিকার সম্পাদক আছেন, তারা রিপোর্টারদের বা সাংবাদিকদের দিয়ে কমেন্টারি লেখে নিজের নামে প্রথম পেজে ছেপে দেন।’ তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্রে দুটি জিনিস সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন- একটা হলো লেখাপড়া এবং লেখাপড়া। আর একটি হলো পেশার প্রতি সততা।’

সাংবাদিকদের বিভক্তি নিয়ে বলতে গিয়ে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিভক্তি। আমার বিশ্বাস যেখানে আছে, সাপোর্ট যেখানে আছে, সেখানে আমরা ঝুঁকে যাই।’

গণমাধ্যম মুক্ত নয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করে প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশল কোথায় বসে এই সমীক্ষাটি করল? আমাদের এখানে যদি এত কিছুই হতো তাহলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই রিপোর্টটি তো সব কাগজে ছাপা হতো না। ‘মুক্ত নয়’ কথাটিই তো সব কাগজে ছাপল। তাহলে কীভাবে বলে এটা।’

ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা সাংবাদিক সমাজ ভোগ করছে বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে কিছু কাগজ বন্ধ হয়েছে, সেগুলো কোর্টে আছে, কোর্ট সেগুলো দেখবে।’ মিডিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, ‘ (টিভির) টকশোতে বসে, এমনকি লেখাপড়া জানে না, গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানের মতো বক্তৃতা দিয়ে গালাগাল করছে। সাংবাদিকদের গালাগাল করছে, রাজনীতিবিদদের গালাগাল করছে। এসবই মিডিয়ার স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে বলে মনে করি।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মনজুরুল আহসান বুলবুল।

(ঢাকাটাইমস/৩মে/এমএবি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

গণমাধ্যম এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :