মে দিবসে বিএফইউজে-ডিইউজের আলোচনা
সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিয়ে কর্মহীন সাংবাদিকদের কাজের নিশ্চয়তা বিধান, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংবাদিক ছাঁটাই বন্ধ, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের দাবি এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালন করছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে।
এ উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, শ্রমিকের রক্ত, শ্রম ও ঘামে গড়া আধুনিক সভ্যতা। কিন্তু আজ এই শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সাংবাদিকরা আজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, কথায় কথায় আজ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কোনো প্রতিকার নেই। উল্টো রাষ্ট্র তাদের (নির্যাতনকারীদের) পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ৬০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কোনো বিচার নেই। শুধু তা-ই নয়, সরকার গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে একের পর এক কালাকানুন তৈরি করছে। বর্তমানে দেশে নয়টি আইন রয়েছে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে। আরও তিনটি আইন চূড়ান্ত খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের বিষয়টি ধরলে এমন আইনের সংখ্যা হবে ১৩টি। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া বারবার দেখতে চাওয়া সত্ত্বেও গণমাধ্যমের কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি।
ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের উপস্থাপনায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএফইউজে মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী।
আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের সহ সভাপতি খায়রুল বাশার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারুল আলম দিদার, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসাইন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রফিক লিটন, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য মোদাব্বের হোসেন, নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আবু হানিফ, আবুল হোসেন খান মোহন, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য মো. আবদুল্লাহ মজুমদার, নির্বাহী সদস্য কাজী ফখরুল ইসলাম, ডিইউজের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ডি এম আমীরুল ইসলাম অমর, বাবুল তালুকদার, এম এ মোনায়েম, সাখাওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী প্রমুখ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, আজ দেশে গণতন্ত্র নেই,মানুষের ভোটাধিকার নেই।মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই।ন্যায়বিচার নেই।ভাতের ব্যবস্থা নেই।বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই।শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে।
সংবাদপত্র জগতে ওয়েজবোর্ডের কোনো বালাই নাই মন্তব্য করে গাজী বলেন, অধিকাংশ পত্রিকায় নবম ওয়েজবোর্ড তো দূরে থাক, সপ্তম অষ্টম ওয়েজবোর্ডও কার্যকর হয়নি। সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর যাতে প্রকাশ না পায় সে জন্য আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, দিনকাল বন্ধ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে চারটি পত্রিকা বাদে সব বন্ধ করা হয়েছিল। আর এখন সব মিডিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে। সবখানে তাদের নিজদের লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নয়াদিগন্ত সম্পাদককে হুমকিদাতাকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে রুহুল আমিন গাজী বলেন, অন্যথায় সাংবাদিকরা মাঠে নামতে বাধ্য হবে। ব্যাংক বিটের সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মে দিবস হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর শ্রমজীবী সমাজের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করার দিন। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই অধিক। কিন্তু এই শ্রমজীবী মানুষেরা এখনো তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। বন্ধ হয়নি শ্রমিক শোষণ। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে যেসব শ্রমিক কাজ করেন, তারা সবচেয়ে বেশি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকদের এখনো আট ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হয়। সে অনুযায়ী তাদের মজুরি ও বেতন-ভাতা নেই।
কাদের গনি বলেন, মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও বাংলাদেশে শ্রমিকেরা বেতনবৈষম্যের শিকার। দুই-একটি খাত ছাড়া শ্রমিকদের কর্মপরিবেশও নাজুক। বিশেষ করে জাহাজভাঙা শিল্প, পরিবহন শিল্প, ইমারত নির্মাণ শিল্পে শ্রমিকদের কাজ করতে হয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে। আবার অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বাড়তি সময় কাজ করিয়ে নিলেও ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, সব শ্রমিকের জন্য বীমা চালু, কর্মক্ষেত্র কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা নিশ্চিত করা, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক ও শ্রমিক হত্যার বিচার, সাংবাদিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের নামে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার, সব গণমাধ্যমে নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর এবং সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানান বিএফইউজে মহাসচিব।
শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশে রাষ্ট্রীয় ও প্রাকৃতিক দুইধরনের বিপর্যয় বিদ্যমান। কোনো জনপথের শাসক জালেম হলে, তখন এরকম বিপর্যয় নেমে আসে। আমাদেরকে মে দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/০১মে/জেবি/কেএম)