নেত্রকোণায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে অকথ্য নির্যাতন
নেত্রকোণার মোহনগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে মারধরসহ গোপনাঙ্গে টাকার কয়েন ও কানের দুল ঢুকিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।
সাকিয়া আক্তার (৩২) নামে এই গৃহবধূর স্বামী উপজেলার বড়তলী গ্রামের মৃত আলী উছমানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৮)।
গুরুতর আহত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে বুধবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানান গৃহবধূ সাকিয়া আক্তার।
নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফকরুল হাসান টিপু বলেন, সাকিয়ার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা করা দরকার। হাসপাতালে তা করা হচ্ছে। সাকিয়া বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। তবে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে।
হাসপাতালে কর্মরত দুইজন সেবিকা শিরিন আক্তার ও স্বপ্না আক্তার সাকিয়াকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
তারা বলেন, গৃহবধূর গোপনাঙ্গ থেকে একটি এক টাকার কয়েন ও চেপ্টা আকৃতির কানের দুল বের করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাকিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী গতকাল রাত আনুমানিক ১২টার পর থেকে টানা চার ঘণ্টা নাগাদ আমাকে মারধর করে। রড দিয়ে পেটায়। হাত পা বেঁধে আমার বুকের ওপর ওঠে মেরে ফেলতে চায়। মুখে বালিশচাপা দেয়, গলায় রশি লাগায়। আমার গোপনাঙ্গে পয়সা ও কানের দুল খুলে খোঁচাতে থাকে ও এক পর্যায়ে ঢুকিয়ে দেয়।’
‘আমার চিৎকারে ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) নুরুল হক ও স্থানীয়রা ঘরের দরজা ভেঙে আমাকে উদ্ধার করেন’ বলেন সাকিয়া।
সাকিয়ার ভাই একই উপজেলার পেরিরচর গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে শাকিল মিয়া বলেন, ২০০৬ সালে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সাকিয়ার বিয়ে হয়। তাদের তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের এক বছর পর থেকেই জিয়াউর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এরপর থেকে আমার বোনকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে পাঁচবারের মতো গ্রাম্য শালিসও হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বোনের সুখের জন্য মাঝে মাঝে টাকা দেয়া হয়। গত ডিসেম্বর মাসেও ৫০ হাজার টাকা দিই। গত ১৫ দিন ধরে আরও দুই লাখ টাকার জন্যে চাপ দেয়। টাকা দিতে না পারায় সাকিয়ার ওপর এমন নির্যাতন করেছে।
জিয়াউরের বড় ভাই নুরুল হক বলেন, ঘটনার পর পরই আমার ছোট ভাই জিয়াউর পালিয়ে গেছে। সে নেশাগ্রস্ত। ইয়াবা খেয়ে প্রায়ই তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করে। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে লোকজন নিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে সাকিয়াকে উদ্ধার করে বুধবার সকালে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করি। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেখান থেকে বিকালে নেত্রকোণা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবা উদ্দিন আহম্মেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/২৪মে/প্রতিনিধি/জেবি)
মন্তব্য করুন