দিনাজপুরে লিচুর ফলন অর্ধেক, হতাশায় চাষিরা
লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুরে এবার বৈরী আবহাওয়ায় লিচু চাষে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিন টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও হয়েছে তার অর্ধেক। তারপরেও বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন লিচু চাষি ও লিচু বাগান ক্রেতারা। তবুও চলতি মৌসুমে প্রায় দুইশ কোটি টাকার লিচুর বাণিজ্য হচ্ছে এ জেলায় বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এখন লাল টস্ টসে রঙিন হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের বাগানগুলো। রসালো ও সুস্বাদু লিচু আকৃষ্ট করছে ভোক্তাদের। ‘প্রকৃতির রসগোল্লা’ খ্যাত মৌসুমী ফল এ লিচু এখন দিনাজপুরে অনেকে চাষ করছে। লিচু পাড়া, সংগ্রহ, বাছাই, কেনা-বেচা আর বহনের কাজে মৌসুমী কর্মসংস্থানে জড়িয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
এবার বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটেছে বলে জানিযেছেন, বিরল উপজেলার দক্ষিণ জগতপুর এলাকার লিচু বাগান মালিক প্রকৌশলী মাহবুব আলী। তিনি জানান, প্রায় ১৫ বছরের এমন হয়নি বাগানের অবস্থা। বৈরী আবহাওয়াই এর জন্য দায়ী বলে তিনি জানান।
লাভজনক ফসল হওয়ায় ধানের জেলা দিনাজপুরে লিচুর বাগান করেছে অনেকে। এবার এ জেলায় চার হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে হয়েছে লিচু চাষ। মাদ্রাজি, বেদেনা, বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, হাড়িয়া ও কাঁঠালী জাতের লিচুর চাষ হয়েছে বেশি।
বিগত বছরে ফরমালিন আতঙ্কে লিচুর বাজারে ধস নামায় এবার বিষমুক্ত লিচু চাষে নেমেছেন এ জেলার বাগান মালিকরা।
এদিকে লিচুর ফলন বিপর্যয় ও বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন লিচু চাষি ও লিচু বাগান ক্রেতারা। দশ মাইল এলাকার লিচু বাগান ক্রেতা মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এবার প্রচুর লোকসান হয়েছে তার। বাগান কিনেছেন বেশি দামে। কিন্তু আশানুরূপ ফলন আসেনি বাগানে। লিচুর দামও কম। লিচু বেচাকেনায় থানা মোড় নিউ মার্কেট, বাহাদুর বাজার ও পুলহাট, দশ মাইলসহ বেশ কিছু এলাকায় মৌসুমী লিচু বাজার গড়ে উঠলেও অনেকে বাগান থেকে কিনছে লিচু। লিচু কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাগানে ছুটে আসছেন মানুষ।
রাজধানী ঢাকা থেকে দিনাজপুরের বাগানের লিচু কিনতে এসেছেন সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, মূলত দিনাজপুরের লিচুর ভালো স্বাদ ও বিষমুক্ত হওয়ায় বাগান থেকে লিচু নিতে এসেছি। নিজের জন্য এবং অফিসের বস ও আত্মীয়-স্বজনকে দেব লিচু। তাই এতদূর ছুটে আসা।
চলতি মৌসুমে প্রায় ৩২ হাজার মেট্রিন টন লিচু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানিয়েন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ফলন হয়েছে তার অর্ধেক। তবুও বিষমুক্ত লিচু হওয়ায় এ জেলার লিচুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় দুইশ কোটি টাকার লিচুর বাণিজ্য হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ধানের জেলা দিনাজপুরে এবার লিচু চাষে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। একদিকে লিচুর ফলন না পাওয়ায় অন্যদিকে লিচুর ন্যায্যমূল্য না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে এ অঞ্চলে লিচু চাষের পরিধি কমে যাবে এমনটাই মন্তব্য করেছেন কৃষিবিদরা।
(ঢাকাটাইমস/০৭জুন/এসএএস/জেবি)
মন্তব্য করুন