সেই টাম্পাকো মালিককে প্রশংসায় ভাসালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, টঙ্গী (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫৩

এক বছর আগে গাজীপুরের টঙ্গীতে যে প্যাকেজিং কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৪১ জনের মৃত্যু ও ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছিল, সেই কারখানার মালিক সৈয়দ মকবুল হোসেনের প্রশংসায় পঞ্চুমখ হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এই বিস্ফোরণের পর পুলিশ ও নিহত এক শ্রমিকের করা হত্যা মামলার আসামি মকবুলকে মন্ত্রী বলেছেন, ভালো মানুষ, আদর্শ শিল্পপতি।

বুধবার গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকায় টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইমারত বিধিমালা এবং ফায়ার সেফটি বিধিমালা মেনে ভবনটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে টাম্পাকো কর্তৃপক্ষ। নতুন কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৮ হাজার ৫০০ টন। প্যাকেজিং খাতে এটি দেশের সর্বাধুনিক কারখানা হবে বলেও অনুষ্ঠানে জানান হয়। প্রস্তাবিত কারখানাটি থেকে বছরে ১৫০ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হবে এবং অন্তত ৫০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে।

২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ওই কারখানায় বিস্ফোরণে ৪১ জনের মৃত্যু ছাড়াও আহত হয়েছিলেন ৫০ জনেরও বেশি। এই ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যান সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মকবুল হোসেন। তার তার বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যা মামলা করে পুলিশ এবং নিহত এক শ্রমিকের বাবা।

কয়েক মাস আত্মগোপনে থাকার পর উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে আগাম জামিন নেন সৈয়দ মকবুল হোসেন। আর গত বছরর ৩০ নভেম্বর তিনিসহ ছয় আসামি গাজীপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে সৈয়দ মকবুল হোসেনকে বিচারক জামিন দিলেও তবে তাঁর ছেলে টাম্পাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তানভীর আহমেদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিউস সামি ওরফে আলমগীর হোসেন, মহাব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনির হোসেন ওরফে মনিরুজ্জামান ও ব্যবস্থাপক হানিফ ওরফে আবু হানিফকে কারাগারে পাঠান বিচারক।

এই বিস্ফোরণের পর দীর্ঘদিন টাম্পাকোর শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পাননি। পরে ধীরে ধীরে তা পরিশোধ করা হয়। আর দুর্ঘটনার এক বছরের মাথায় আবারও নতুন করে কারখানা শুরু করতে যাচ্ছেন সৈয়দ মকবুল হোসেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘টাম্পাকো মালিকের ভিশন রয়েছে, তাদের ব্যবস্থাপনায় এই শিল্প ইউনিট আরো সুন্দরভাবে স্থাপিত হবে। তারা কমিটমেন্ট করেছেন এবং সেটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন।’ নতুন কারখানায় টাম্পাকো বিস্ফোরণে নিহতের পরিবারের একজন সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, মালিক আহতদের চিকিৎসা খরচ দিচ্ছেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই বলেছেন তিনি (সৈয়দ মকবুল হোসেন) একজন ভালো মানুষ, একজন ভালো শিল্পপতি। আমিও মনে করি তিনি একজন ভালো ব্যক্তিত্ব। অবশ্যই তিনি সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

‘তিনি (সৈয়দ মকবুল হোসেন) যেভাবে, যেই সাহস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। এতো বড় ক্ষতির পরেও তিনি কিন্তু দমে জাননি, মুষড়ে যাননি। তিনি আবারো চিন্তা করছেন তার এই ইউনিটটাকে এগিয়ে নেবেন।’ বলেন মন্ত্রী।

সৈয়দ মকবুল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একজন আদর্শ শিল্পপতি হিসেবে আপনার সুনাম রয়েছে। এই এলাকার মানুষ কিন্তু সেজন্যই আপনাকে সহযোগিতা করছে। আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আপনাকে সহযোগিতা করছে, কারণ আপনি একজন আদর্শ শিল্পপতি। তার উল্টোটা যতি হতেন তাহলে আপনার কারখানা বন্ধ করে দিত এই এলাকার মানুষ। আপনি এই এলাকায় আর কখনো কারখানা করতে পারতেন কিনা খোদা জানে।’

টাম্পাকো মালিক যা বললেন

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে টাম্পাকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মকবুল হোসেন বলেন, ‘বহু শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে টাম্পাকো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি। আমরা মন-প্রাণ দিয়ে টাম্পাকোকে আবার গড়ে তুলব, যাতে করে ভবিষ্যতে একজনও কর্মচারীর ক্ষতি না হয়।’

মকবুল বলেন, ‘টাম্পাকোর যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল আমার জানামতে সমস্ত টঙ্গীর কারখানাগুলোর চেয়ে আমরা বেশি বেতন দিতাম। টাম্পাকোর কর্মচারীরা জীবনে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করেনি। টাম্পাকোর পোড়ার পর শ্রমিকরা আমাদের পক্ষে আন্দোলন করেন। কারণ তাদের আস্থা ছিল টাম্পাকো পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলে তাদের প্রতি সুবিচার করা হবে।’

১৯৭৮ সালে টাম্পাকো প্রতিষ্ঠার পর ৩৯ বছর কারখানাটি উৎপাদনে ছিল বলে জানান মকবুল হোসেন। তিনি জানান, কারখানা বন্ধ থাকলেও গত ১১ মাস শ্রমিকদের বিনা পরিশ্রমে বেতন দিয়েছেন। নিহত ও আহতের পরিবারের ৩৯ জন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও জানান মকবুল হোসেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খান, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/আইআর/ডব্লিউবি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :