উলিপুরে ‘বাসন্তী নাটক’ সাজানোর অপচেষ্টা

পরিমল মজুমদার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৭:০৮ | প্রকাশিত : ২৩ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৫৪
প্রসূতি আনোয়ারাকে বিশেষ ব্যবস্থায় উলিপুর বিএনপি অফিসে এনে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে

৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সময় কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় তরুণী বাসন্তীর গায়ে জাল জড়িয়ে গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশের রেশ কাটেনি এখনও। তিন যুগ আগের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তির চেষ্টা হয়েছে একই জেলার অন্য এক উপজেলায়। উলিপুরে সাম্প্রতিক বন্যায় একটি বানভাসী পরিবারের প্রসূতিকে নিয়ে একই ধরনের অপপ্রচারের চেষ্টা হচ্ছে।

সম্প্রতি বন্যায় ভাসা অবস্থায় নৌকায় একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল। ওই শিশুর পরিবারটি ৯ দিন ধরে অভুক্ত অবস্থায় রয়েছে দাবি করে খবর প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্ত করে পুরো ঘটনাটিকে বানোয়াট বলেছে। যে পরিবারটিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, সেই পরিবারটির প্রধানও এই ধরনের প্রচারকে অসত্য বলেছেন।

সংবাদ প্রকাশের পর গত শনিবার ঘটনাস্থল উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দূর্গম চর পূর্ব বালাডোবা গ্রামে প্রসুতি আনোয়ারার বাড়িতে গেলে শিশুটির বাবা চাঁন মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, বন্যা শুরু হওয়ার আগে তার মেয়ে সন্তান প্রসবের জন্য স্বামীর বাড়ি পার্বতীপুর থেকে এখানে আসেন। গত ৯ আগস্ট তার মেয়ের প্রসব বেদনা শুরু হয়। এ অবস্থায় নদীর পানি বাড়তে থাকে। তিনি নৌকা নিয়ে এলাকার এক ধাত্রীকে নিয়ে আসেন। এরপর রাতে ঘরের ভেতরের উঁচু চৌকিতে সন্তান প্রসব করান। এ সময় বন্যার অবনতি হলে পানি আরো বাড়তে থাকায় পরিবারের লোকজন তখন নবজাতকসহ নৌকায় আশ্রয় নেন।

আনোয়ারা জানান, তিনি কখনই অভুক্ত ছিলেন না। দুই বেলা ভাত খেয়েছেন আলুর তরকারি দিয়ে। চুলায় আগুন জ্বালানোর সমস্যা থাকার কারনে কখনও এক বেলা রেঁধে দুই বেলা খেয়েছেন।

এই পরিবারটি মৎসজীবী হলেও তাদের বাড়িতে দেখা যায়, একটি বিশাল আকারের ষাঁড়, যার আনুমানিক মূল্য হবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও চারটি ভেড়া ও ১০/১২ টি হাঁস-মুরগি রয়েছে। দুইটি টিনের ঘর ও একটি ছনের ছাউনি ঘর রয়েছে। তাদের ঘরে সোলার প্যানেলও রয়েছে।

এই সংবাদটি যে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, সেই পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধিরাও জানেন না এ খবরটির সত্যতা প্রসঙ্গে। তারা এই সংবাদটি পাঠাননি বলে স্থানীয় উলিপুর প্রতিনিধি জানান।

কাল্পনিক এই সংবাদকে ঘিরে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে বলে অভিযোগ করেছেন কুড়িগ্রাম ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন তালুকদার। তিনি বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ঘোষিত যুদ্ধাপরাধী কাশেম মিয়ার পুত্র তাসভীর উল ইসলাম সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়ার জন্য ওই মহিলাকে তার উলিপুরস্থ বাড়িতে স্থাপিত পার্টি অফিসে এনে মিডিয়া কর্মীদের নিয়ে ত্রাণ দেয়ার নামে ফটো সেশন করেন।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই প্রসূতি মহিলাসহ পরিবারে কেউ অভুক্ত ছিলেন না। আমি সরেজমিন ঘটনাস্থল গিয়ে ওই সংবাদের কোনো সত্যতা পাইনি। এছাড়াও প্রসবের আগে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে বললেও ভর্তি হননি।’

আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, উলিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হায়দার আলী মিঞা ও উলিপুর পৌর মেয়র তারিক আবুল আলা সরকারি গাড়িতে বিএনপির ব্যানার লাগিয়ে দলীয় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সরকারি গাড়ি ও তেল পুড়িয়ে বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছেন।

সরকারি গাড়ি ব্যবহার প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :