স্ট্যাটাসের কমেন্টে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা জানালেন ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:০০

স্ট্যাটাসের কমেন্টে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা জানালেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদত হোসেন কবির। গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইমপ্রুভ শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সংবাদকর্মী মো. রেজাউল করিমের দেয়া স্ট্যাটাসের উত্তরে তার কমেন্টে যানজট নিরসনে স্থায়ী সমাধানের কথা লেখেন তিনি। কমেন্ট পড়ে স্থানীয়রা আশ্বস্ত হন।

টাঙ্গালের তাঁতপল্লী নামে পরিচিত পাথরাইল বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পথচলা। স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশে-বিদেশের নানা প্রান্তের লোকজন আসে এই তাঁতপল্লীতে। কিন্তু এই বাজারে রয়েছে নানা সমস্যা। সমাধানের নেই কোন পরিকল্পনা। যানজট তার মধ্যে অন্যতম। জেলা শহর হয়ে সরাসরি মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাওয়া যায় এই সড়ক হয়ে। এই ব্যস্ততম সড়কের যানজট নিরসনে নেই কোন পদক্ষেপ। বিশেষ করে বাজারের অংশটুকুতে যানজটের কারণে জনদুর্ভোগ প্রতিদিনের চিত্র।

এই যানজট নিরসনে ওই সংবাদকর্মীর আইডি থেকে একটি অনুরোধপত্র সাথে কিছু পরিকল্পনা উল্লেখ করেন। স্ট্যাটাসটি নজরে আসায় ২৫ সেপ্টেম্বর একদিনেই উপজেলা প্রশাসন ও দেলদুয়ার থানা পুলিশ যানজট নিরসন করেন। কিন্ত পূজার পর স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনার কথা কমেন্টে জানালেন ইউএনও।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘বরাবর,

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল।

মাধ্যম: ইউপি চেয়ারম্যান, পাথরাইল, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল।

বিষয়: পাথরাইল বাজারে যানজট নিরসন প্রসঙ্গে।।

জনাব,

যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে বিনয়ের সাথে বলছি, পাথরাইল বাজার একটি ব্যস্ততম শিল্প এলাকা। এই বাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আসা-যাওয়া। কিন্তু বাজারের রাস্তাটা সরু। এর পরেও ভ্রাম্যমাণ দোকান, স্থায়ী দোকানের ভ্রাম্যমাণ মালামাল ও ছোট ছোট যানবাহনের অবস্থান সড়কটিকে আরো সরু করে রাখে। এদিকে সড়কে অটোরিকশা আর সিএনজি রাখায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ভীরের মধ্যে আতঙ্কে বাজার পার হয় স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা।

স্যার আপনাকে প্রায়ই দেখি, যাতায়াতের সময় আপনি মোবাইল দিয়ে যানজট ভিডিও করছেন। আমি নিশ্চিত যে, আপনি অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আগে থেকেই ভাবছেন। আশা করবো আপনার ও আমাদের ভাবনাটা বাস্তবায়িত হবে।

স্যার, আপনাকে বলার কিছু নেই। আপনি দেলদুয়ার পরিবর্তন করে আধুনিক দেলদুয়ারের জনক। সকল ভালো কাজের উদ্যোক্তা। আপনি উদ্যোগ নিলে বিষয়টি আপনার জন্য খুব বড় বিষয় বলে আমার মনে হয় না।

পরামর্শ: আপনাকে পরামর্শ দেওয়ার মেধা, সাহস কোনটাই নেই। কিন্তু কিছু কাজ বাস্তবায়নে পরমর্শ ও জনবল বিশেষ প্রয়োজন।

১. ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো মেইন সড়কে রাখা বন্ধ করা প্রয়োজন। এদেরকে শাখা সড়ক-মঙ্গলহোড় সড়ক, ইউপি সড়ক ও দেওজান সড়কে থাকতে দেয়া যেতে পারে।

২. মেইন সড়কে দোকানের কোন ভ্রাম্যমান মালামাল বাইরে রাখতে দেয়া বন্ধের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

৩. কনস্ট্রাকশন কাজের মালামাল সড়কে রাখা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

৪. টিন, রড, সিমেন্টসহ যেকোন মালবাহী ট্রাক থেকে রাত আটটার আগে বাজারে মাল নামানো নিষেধ করা প্রয়োজন।

৫. কোন অবস্থাতেই অটো রিক্সা, রিক্সা বা সিএনজি মেইন সড়কে অবস্থান বন্ধ করা প্রয়োজন।

৬. দেলদুয়ারমূখী সিএনজির স্ট্যান্ড পাথরাইল চৌধুরী টকিজ সিনেমা হলের সামনে থাকবে।

৭. টাঙ্গাইলমুখী সিএনজি পাথরাইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক সংলগ্ন মালীবাড়ির সামনে অবস্থান করবে।

৮. চলমান সিএনজি বাজারে যাত্রী নামাতে পারবে। উঠাতে পরবে না। না নামালে আরো ভালো হয়।

৯. রিক্সা ও অটোরিক্সা এলাকাভিত্তিক সড়কমুখে থাকার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। যেমন মঙ্গলহোড় সড়ক, দেওজান সড়ক ও ইউপি সড়ক।

এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে আমার বিশ্বাস পাথরাইল বাজার একটি যানজটমুক্ত বাজারে পরিণত হবে। এছাড়া এগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য পাথরাইল ইউপি একজন লোককে অস্থায়ী নিয়োগ দিতে পারে। যার ব্যয়ভার বাজারের ব্যবসায়ীরা বহন করবে।

ইউএনও স্যার ও পাথরাইল ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিনীত আবেদন বিষয়টি বাস্তবায়ন করে জনদুর্ভোগ নিরসন করুন।

আবেদনকারী-একজন সংবাদকর্মী’

এই স্ট্যাটাসটি আপ হওয়ার পর রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ নানা পেশার মানুষ সহমত পোষণ করেন। কেউ কেউ প্রশাসনকে দায়ি করেন। তবে প্রশাসন কাজে নেমেছেন তার উদাহরণ বাজারের পাল্টে যাওয়া চিত্রই প্রমাণ করছে। এছাড়া স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনাও জানিয়েছেন ইউএনও। স্থানীয়রা ইনবক্সে পরামর্শ দিয়েছেন কোন কাজ উস্কানিমূলক কথায় সমাধান হয় না। প্রয়োজন প্রশাসন ও স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধ।

ইউএনওর কমেন্টটি তুলে ধরা হলো-

‘Rezaul Karim সাহেবকে ধন্যবাদ একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসার জন্য। অনেকেই এখানে চমৎকার সব কমেন্ট করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। তবে রেজাউল করিমসহ সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, এরকম যে কোনো ইস্যু থাকলে নিজের ব্যক্তিগত আইডিতে না দিয়ে ‘উপজেলা প্রশাসন, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল’ পেইজে সেটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আমরা ঐ পেইজে যে কোনো আলোচনাকে স্বাগত জানাই। আপনাদের মতামত আমাদের পথচলাকে সহজ করবে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের মতামতই জনবান্ধব প্রশাসনের ভিত্তি। আসলে পাথরাইল বাজারের বর্তমান অবস্থা, বিশেষত বাজারের মধ্যদিয়ে যাওয়া দেলদুয়ার-টাঙ্গাইল সড়কের দৈন্যদশা ও যানজট পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। দুপাশ থেকে চাপ দিতে দিতে রাস্তাটিকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে দেখা যায় গাড়ি চলা তো দূরে থাক, পথচারীদের হাঁটার অবস্থাও থাকে না অনেক সময়। যা হোক, আমরা চেষ্টা করছি জনদুর্ভোগ লাঘবের জন্য। এর আগে অনেকবারই মোবাইল কোর্টের অভিযান চালানো হয়েছে। আপাতত দুর্গাপূজার জন্য দেলদুয়ার থানার সহযোগিতায় একটি বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে, বিশেষ করে বাজার কমিটি, ব্যবসায়ী, হকার, সিএনজি ও অটোচালক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় সুধীজন ও সর্বস্তরের জনতা তথা সবাইকে নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছি। গতকালও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। পূজার পরপরই আমরা প্রথমে সিএনজি ও ইজিবাইক চালকদেরকে নিয়ে একদিনের একটি ব্রিফিং সেশনে বসার পরিকল্পনা করেছি। এরপর পাথরাইল বাজারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসব। রেজাউল করিমের প্রস্তাবগুলো চমৎকার ও সময়োপযোগী। আমরা কাজ করার সময় অবশ্যই এগুলো বিবেচনায় রাখব। এর পাশাপাশি আরো কোনো মতামত পাওয়া গেলে সেগুলোকেও আমরা স্বাগত জানাই। ইনশাল্লাহ, সবার সহযোগিতা নিয়েই আমরা পাথরাইল বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে যানজটমুক্ত করার মিশনে নামছি।’

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/আরকে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :