১১ প্রস্তাব নিয়ে সংলাপে যাচ্ছেন আ.লীগের ২২ নেতা
সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১১ দফা প্রস্তাব নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচনী সংলাপে যোগ দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেবে সংলাপে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে আযোজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ইসির ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হয় গত ২৪ আগস্ট। সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সংলাপে এখন পর্যন্ত বিএনপিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। আজ সংলাপে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী সংলাপে অংশ নেবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, রাশিদুল আলম, অ্যাম্বসেডর জমির, ড. মসিউর রহমান; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান; কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কার্যনির্বাহী সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার।
তবে প্রতিনিধিদলের তালিকায় থাকা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিদেশে আছেন বলে জানা গেছে। সংলাপে তার অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
গত রবিবার সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, ইসির সঙ্গে সংলাপে তুলে ধরতে তারা ১১ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করেছেন। এসব প্রস্তাবে কী থাকবে তা বলেননি তিনি।
আ.লীগের প্রস্তাবে যা থাকছে
তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দলটির প্রস্তাবমালায় সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব দেবে। নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারীদের নিয়োগ না দিয়ে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের সুপারিশ করবে আওয়ামী লীগ।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন এবং কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্যশীল হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান না করার প্রস্তাব দেয়া হবে।
বিরাজমান সব বিধিবিধানের সঙ্গে জনমানুষের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করতে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের মতো আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটদান প্রবর্তন করার সুপারিশ করবে আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে নয়। দলটি মনে করছে, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি বা নির্বাচনকালীন তাদের নিয়োগের বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণেদিতভাবে দাবি তুলেছে। এভাবে সেনা মোতায়েন দেশের বিরাজমান আইন ও সাংবিধানিক নিয়মকানুনের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও আওয়ামী লীগ তার প্রস্তাবে তুলে ধরবে। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯-১৩১ ধারা মোতাবেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে তা উল্লেখ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বাহিনীকে সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাদের বিশেষায়িত অবস্থান বিনষ্ট হবে বলে ইসিতে তারা জানিয়ে দেবে।
আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রস্তাবে আরপিওর বাংলা সংস্করণে ইসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এর প্রতি সমর্থন থাকবে। নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে নির্বাচনসংক্রান্ত সংবিধানের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের নিরপেক্ষ ও কঠোর প্রয়োগের সুপারিশ করবে ক্ষমতাসীন দলটি।
আওয়ামী লীগ তার সুপারিশে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ওই দলের তৃণমূল নেতাকমীদের ভোটের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের বাছাই করে সংশ্লিষ্ট দলের মনোনীত প্রার্থীদের একটি চূড়ান্ত প্যানেল প্রণয়নে আরপিও করতে বলবে।
পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রভিত্তিক তালিকা ছবি ও এনআইডিসহ নির্বাচনের অন্তত তিন দিন আগে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রদান নিশ্চিতকরণ এবং প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক তাদের পরিচয়পত্র নিশ্চিত হয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ ও নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থানের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ তার প্রস্তাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত ইসির ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও প্রকারান্তরে এর বিরোধিতা করবে। ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে আবার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে তারা জানিয়ে দেবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাবের পাশাপাশি আরপিও-এর কিছু ধারা-উপধারার সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হবে। দলটি সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই সাংবিবিধানি প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ এর পরিবর্তে শুধু ‘নির্বাচন কমিশন’ রাখার কথা বলবে।
এছাড়া আরপিও সংশোধন করে ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, এনআইডির টিপসই ও স্বাক্ষরের সাথে মিল রেখে ব্যালট পেপারের কাউন্টার ফয়েলের (মুড়ি) স্বাক্ষর ও টিপসই, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রিজাইডিং অফিসারের করণীয় সুনির্দিষ্টকরণ, একাধিক দলের মনোনীত প্রার্থীকে কোনো দলের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া যাবে না মর্মে বিধান নির্ধারণ, জামানত বাড়ানো, নির্বাচনী মামলা নিষ্পত্তির সময় বেধে দেওয়াসহ আরো কিছু সুপারিশ করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৮অক্টোবর/মোআ)