নোংরা রাজনীতির অবসান কবে?

সাইদুর রহমান
| আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৩৪ | প্রকাশিত : ৩১ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০১

১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাত। ফ্রিডম পার্টির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার গভীর চক্রান্ত। সেই উদ্দেশে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর রবিবার (২৯ অক্টোবর) আদালত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ফ্রিডম পার্টির ১১ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। প্রায় ২৮ বছর পর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়েছে। জাতির জন্য স্বস্তির খবর। এই রায়ের ফলে প্রমাণিত হলো কাউকে হামলা বা হত্যাচেষ্টার ঘটনায় কেউ পার পেতে পারে না, আগামীতেও পাবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ পর্যন্ত ১৯ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারটি, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি এবং আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে চারটি হত্যা চেষ্টার কথা জানা গেছে। তার গাড়ি বহরে অসংখ্যবার হামলা হয়েছে। হামলা বা হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার বিচারকাজ চলছে বা শেষ হয়েছে। এসব ঘটনায় হয়তো আগামীতে আরও অনেক অপরাধীর সাজা পাবে। কিন্তু ঘটনার অবসান কবে হবে? আমরা হামলা নয়, শান্তি চাই। অবসান চাই নোংরা রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। ফিরে পেতে চাই সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক চর্চা।

১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদ এবং তিন লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছি আমরা। পবিত্র সোনার বাংলায় কোনো অপরাধী থাকুক, তা কেউ চায় না। শীর্ষ রাজনীতিককে হত্যারচেষ্টা বা হামলাকারী অপরাধীরা ক্ষমার অযোগ্য। ১৯৮৯ সালে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী। সেই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আমরা বিচার পেয়েছি। শেখ হাসিনা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশের উন্নয়নে ভূমিকা অপরিসীম। তার হত্যাচেষ্টা বা গাড়িতে হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত। এগুলো রাজনৈতিক নোংরা মানসিকতা ও বিকৃতি রুচির দৃষ্টান্ত।

তেমনি বেগম খালেদা জিয়া সাংবিধানিকভাবে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলীয় নেত্রী। বিএনপির মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করেছেন তিনি। দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বেগম জিয়ার। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো তার গাড়িবহরও হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ করতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে কয়েক দফা গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এর আগেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা হয়েছে। গত তিন বছরে পাঁচ দফা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে।

গত শনিবার খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী গণমাধ্যমের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর এবং সাংবাদিক মারধর করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হামলাকারী কারা? তারা যেকোনো ছাত্র, যুব বা মূল সংগঠনের নেতাকর্মীরা হতে পারে। আবার নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও হতে পারে। তবে হামলাকারী কারা তা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে সহজেই পাওয়া যাবে। কিন্তু উনার গাড়ি বহরে হামলা কেন? উনার কি রাজনীতি করার অধিকার নেই। এভাবে দেশটাকে আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? নোংরা রাজনীতির বীজ যেভাবে রোপণ করা হচ্ছে তা ভয়ংকর থেকে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতির রূপ নেবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি ক্রমশ বাড়ছেই। আমরা আশাবাদী হওয়ার চেয়ে আশাহত হচ্ছি।

শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা বা গাড়ি বহরে যারা হামলা করেছে তারা জঘন্য অপরাধী। একটি হত্যাচেষ্টা বা হামলাকে পাল্টা হত্যাচেষ্টা বা হামলা করে জায়েজ করা সমীচীন নয়। একটি ঘটনা আরেকটির সঙ্গে তুলনাও করছি না। প্রতিটি ঘটনায় নিন্দনীয়। নষ্ট রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ। বাংলার মাটিতে এসব হামলাকারীর স্থান নেই । শেখ হাসিনা কিংবা বেগম খালেদা জিয়ার হত্যার চেষ্টা বা গাড়িবহরে হামলাকারীরা নোংরা মানসিকতা সম্পন্ন। সমাজের কীটপতঙ্গ।

আজ অস্ত্র আছে কাল নিরস্ত্র হবে। আজ যে অস্ত্র অন্যর গাড়িতে পড়ছে, কাল কিন্তু তা নিজের ঘাঁড়ে পড়তে পারে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না, ক্ষমতা কারোর জন্য চিরস্থায়ী নয়। আজ যারা ক্ষমতায় কাল কিন্তু তারা ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। কিন্তু প্রতিটি ঘটনা থেকে যাবে জনমনে মানুষের হৃদয়ে। ২৮ বছর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হত্যাচেষ্টার বিচার যেভাবে হয়েছে, তেমনি আগামী ২৮ বছর পরও তোদেরও বিচার হতে পারে। হামলা করে তোরা পার পাবে না। তোরা নোংরা রাজনীতির সৃষ্টি, তোদের ক্ষমা নেই।

একটি ছোট গল্প দিয়ে লেখাটি শেষ করবো, এক বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে সন্তানের পরিবারে অশান্তি। মানে স্ত্রী বা পুত্র তার বাবাকে সহ্য করতে পারছে না। যে বাবা সন্তানকে দুই হাতে আদর যত্ন করে বড় করেছেন, তিল তিল করে সংসার গড়ে তুলেছেন, সেই সন্তানের কাছে বাবাই আজ বোঝা। নিরুপায় বাবা। নিজের স্থায়ী সুখের কথা চিন্তা করে পুত্র সিদ্ধান্ত নিলেন বাবাকে দূরের কোথাও রেখে আসবেন। সে জন্য ঝুঁড়ি বানালেন। বাবাকে ঝুঁড়িতে তুলে পিঠে করে দূরের কোথাও ফেলে আসবেন। এই দৃশ্য স্বচক্ষে দেখলেন বৃদ্ধার নাতি। যখন দাদাকে (বৃদ্ধাকে) ঝুঁড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন নাতি তার বাবা বললেন, বাবা দাদা ফেলে এসো, কিন্তু ঝুঁড়ি সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে এসো। বাবা (বৃদ্ধার সন্তান) তার সন্তানকে (নাতি) জিজ্ঞাসা করলেন, কেন? নাতির উত্তর তুমি যখন বৃদ্ধা হবে, তখন তোমাকেও দূরের কোথাও রেখে আসতে ঝুঁড়িটি আমার লাগবে। সন্তানের এ কথা শুনে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন বাবা। কিন্তু আমরা কি পারছি আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে?

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :