ভোট পেছানো কঠিন: ঐক্যফ্রন্টকে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ২১:৩৭ | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ২১:১০
বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দের বৈঠক

আগামী জাতীয় নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন বলেছে, এটা করা কঠিন। কারণ, জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমা রয়েছে।

বুধবার বিকালে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যায় কমিশনে। সেখানে দুই পক্ষ কথা বলে দুই ঘণ্টা।

গত ১১ নভেম্বর ভোটে আসার ঘোষণা দেয়ার সময়ই নির্বাচন এক মাস পেছানোর দাবি জানিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। ইসিতে দেয়া হয় চিঠি। কিন্তু ভোট পেছায় এক সপ্তাহ। আজকের বৈঠকে আগের দাবি আরও তুলে ধরে আরও তিন সপ্তাহ পর নির্বাচন দেয়ার দাবি জানানো হয়।

বৈঠক শেষে ফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা বলেছেন এ বিষয় তারা কমিশনে আলোচনা করবে। ’

ফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে তারিখ পেছানোর ব্যপারটা তারা (ইসি) বিবেচনা করবেন।’

তবে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘৩০ তারিখ নির্বাচন হলে এখানে অনেকগুলো রি ইলেকশন করতে হতে পারে, গেজেটের ব্যপার আছে, বিশ্ব ইজতেমার ব্যপার আছে। যব কিছু মিলিয়ে জানুয়ারিতে করা হলে নির্বাচনটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টদায়ক হয়ে যাবে। কমিশন বসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানাবে।’

নয়াপল্টনে সংঘর্ষে ইসির ‘দুঃখ প্রকাশ’

নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের বিষয়টি তুলে ধরে ভোট থেকে সরে যাওয়ার কথাও বলে আসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় ইসি দুঃখ প্রকাশ করেছে বলেও জানান ফখরুল।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনে থাকা না থাকা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের এবং বর্তমানে যে নির্বাচনকালীন সরকার আছে তাদের আচরণের উপরে। ’

‘বিরোধী দলের নির্বাচনে টিকে থাকাটা তাদের আচরণের উপর নির্ভর করছে। নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরেপেক্ষভাবে এটা করতে পারেন, সেটা দেখার বিষয়।’

কমিশন সচিব বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বিতরণ এবং জমা উৎসবমুখরভাবে চলছে। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেন না হয় সে ব্যপারে খেয়াল রাখবে কমিশন।’

এজেন্টদের নিরাপত্তায় জোর

বৈঠকে ভোট পেছানোসহ নানা দাবি নিয়ে আলোচনা হয় যার একটি হলো এজেন্টের নিরাপত্তা। চলতি বছর পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে এজেন্টরা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছে দলটি। আর তারা সেখানে থাকতে না পারায় সিল মারা হয়েছে বলে দাবি তাদের। যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছে, কাউকে বের করে দেয়া হয়নি। এজেন্টরা কেন্দ্রেই যায়নি।

বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে এজেন্টদের নিরাপত্তার কাথা বলেছি। এটা তারা নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষদের ব্যাপারে তাদের কোন বাধা থাকবে না।’

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতায় গুরুত্ব

রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে তালিকা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বলেন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।

জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের রদ বদলের ব্যাপারেও কথা বলেন ফ্রন্ট নেতারা। কমিশনের অমতে যেন কোনো বদলি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন তারা। একই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশে গ্রেপ্তার করা না করার একটি নির্দেশনাও চান।

ফখরুল বলেন, ‘তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে পজিটিভলি তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও কমিশনে তুলে ধরেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। ফখরুল বলেন, ‘তারা (ইসি) বলছে বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।’

‘কেন্দ্রে ক্যামেরা যেতে দিতে হবে’

ভোটগ্রহণের দিন কেন্দ্রের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচারের সুযোগ দেয়ারও দাবি জানান ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। যদিও নির্বাচন কমিশন এতে এখনও রাজি নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে তারা সরাসরি সম্প্রচারের সুযোগ দিতে চান না। আমরা বলেছি সরাসরি সম্প্রচার করতে দেয়া উচিত হবে। ’

আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ছবি তুলতে দিবে, রেকর্র্ড করতে দেবে কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করতে দেবে না।’

ইভিএম একেবারেই ব্যবহার না করার দাবি

সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন ফ্রন্ট নেতারা। জবাবে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইভিএম পুরোপুরি নিরাপদ নয়-এটা বোঝাতে পারলে তারা সেটা বিবেচনা করবেন।

বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনও দাবি ছিল নেতাদের। ফখরুল বলেন, ‘ইসি বলেছে, ইতিমধ্যে তারা সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে দেয়া যাবে কি না এটা তারা বিবেচনায় করবেন।’

বৈঠকে ফ্রন্টের পক্ষে আরও ছিলেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন, মওদুদ আহমদ; জেএসডির আ স ম আবদুর রব, আবদুল মালেক রতন; কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের স্ব্রুত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম; জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লহ চৌধুরী।

বিপরীত দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাসহ ছাড়াও কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম এবং নির্বাচন কমিশনের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/জেআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :