অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ জনসচেতনতার অভাব

কাজী রফিকুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:০৬

রাজধানীর বাংলামোটর সিগন্যালের দুইপাড়েই বাসস্টপেজের স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার হয়ে বাংলামোটর মোড় দিয়ে কারওয়ানবাজারমুখী বাসগুলো থামে না সেখানে। একই দৃশ্য উল্টোদিকের কারওয়ানবাজার হয়ে শাহবাগ রুটে যাওয়ার স্টপেজটিতেও।

গণপরিবহনে যাত্রী ওঠা-নামার বদলে বাংলামোটর বাসস্টপেজটি এখন উবার-পাঠাও ও অটোরিকশার দখলে। পথচারীরাও কম যাচ্ছেন না। বাসস্টপ লাগোয়া নিরাপদ বাংলামোটর ওভারব্রিজ থাকলেও যখন-তখন এমনকি গণপরিবহন চলাচলের মাঝেই দৌড়ে দুইপাশের রাস্তা পার হচ্ছেন তারা।

শুধু বাংলামোটরই নয়, ঢাকাজুড়ে এমন সব অনিয়মের চিত্র ফের সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে, সন্ধ্যার পর থেকে যেগুলো আরও ভয়ানক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নিরাপদ সড়ক গড়তে শিক্ষার্থীদের সাড়া জাগানো আন্দোলনের সুফল তাই মেলেনি রাজধানীতে। বার বার ট্রাফিক সপ্তাহ ও ট্রাফিক মাস পালনেও সচেতন করা যায়নি মানুষকে, বদলেনি তাদের অভ্যাস।

সরেজমিন দেখা গেছে, ট্রাফিক বিভাগ ঢাকার বিভিন্ন স্পটে বাসস্টপেজ নির্ধারিত করে দিলেও কমেনি যত্র-তত্র যাত্রী ওঠা-নামার পাশাপাশি দুই বাসের রেষারেষির প্রবণতা। ফুটওভার ব্রিজ-আন্ডারপাস উপেক্ষা করে চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে দৌড়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপার চলছেই। গণপরিবহন চালক-শ্রমিকসহ নগরবাসীর এই অসচেতনতায় তাই প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

নগরবাসীর অভিযোগ, হাতেগোনা কয়েকটি বাস বাদে সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে লোকাল বাসের মতই চলছে গুপরিবহনসেবা। নানা দুর্ভোগ-বিভ্রান্তি, সমস্যা ও যাত্রী ঠকানোয় বিরক্ত তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর ১২১টি পয়েন্টে বাসস্টপেজগুলো নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে যাত্রী ওঠানো-নামানোর নিয়ম মানতে দেখা যাচ্ছে না অধিকাংশ গণপরিবহনকে।

শ্যামলী বাসস্টপেজে থামছে না গাবতলী-মিরপুরগামী অধিকাংশ বাস। শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে চলছে তাদের যাত্রী ওঠা-নামা। সড়কটির বিপরীত দিকেও মহাখালী, নিউমার্কেট ও গুলিস্তানগামী বাসগুলো থামছে যত্রতত্র। যাত্রী বাগিয়ে নেয়ার প্রবণতা-প্রতিযোগিতা থেকে রেষারেষিও চলছে আগের মতোই।

মিরপুর রোডের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে আসাদগেট পর্যন্ত রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে গণপরিবহনে ওঠা-নামা চলছে যাত্রীদের। ফলে নিয়মিত ভয়াবহ যানজটের শিকার সড়কটি। অথচ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের কিছুটা দক্ষিণে কলাবাগান মাঠের সামনে ডিএমপি নির্ধারিত বাসস্টপেজে দীর্ঘক্ষণেও বাস থামতে দেখা যায়নি।

হকার মিলন জানান, বাসস্ট্যান্ডটিতে বাস খুব একটা থামে না, সাভারগামী কিছু বাস মাঝে মাঝে থামে। রাসেল স্কয়ার সিগন্যালে যাত্রী তোলে নিউমার্কেট থেকে আসাদগেটমুখী সব গণপরিবহন।

পথচারী মিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাস কোথায় থামে আর কোথায় থামে না, কে জানে। হাত তুলতেই বাস দাঁড়ায়। সার্জেন্ট দেখলে মাঝে মধ্যে থামে না।’ ‘বাস থামতে বাসস্ট্যান্ড লাগে না। ওদের ইচ্ছামতো থামায়। আবার আমাদেরও দোষ আছে। আমরা যদি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াই, তাহলে ওদেরও বাধ্য হয়ে সেখানেই থামতে হবে। ওদের দরকার যাত্রী।’

বড় ধরনের অনিয়ম দেখা গেছে, একই সড়কের ধানমন্ডি ৩ নম্বরের (ঢাকা সিটি কলেজ) সামনে। ট্রাফিক সতর্কতায় যত্রতত্র যাত্রী তুলতে পারে না বাসগুলো। তাই ট্রাফিক সিগন্যালের আগেই বাসের দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। তবে সার্জেট কিংবা ট্র্রাফিক পুলিশ না থাকলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ইউটার্নেই চলে যাত্রী ওঠানামা।

নগরবাসীর অভিযোগ, এয়ারপোর্ট সড়কের কয়েকটি স্পট ছাড়া রাজধানীর আর কোথাও নিয়মের খুব একটা তোয়াক্কা করে না গণপরিবহনগুলো। ফুটওভার ব্রিজের ব্যবহারও নামমাত্র

সিটি কলেজ থেকে কিছুটা দক্ষিণে ড. কুদরত এ খুদা সড়কের সামনে রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ। আর একটি ফুটওভার ব্রিজ আছে কলেজের উত্তরে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে। কিন্তু কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই দেখা যায় না সেগুলো ব্যবহার করতে। ব্যস্ততম সড়কটিতে দৌড়ে কিংবা চলন্ত গাড়ি থামিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন তারা। দ্রুত রাস্তা পার হতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন অন্য পথচারীরাও।

ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অনেক পথচারীর থেকেই পাওয়া গেছে সেই চিরাচরিত অজুহাত ‘সময় বাঁচাতে’, ‘তাড়া আছে’, ‘পায়ে ব্যথা’, ‘অসুস্থ’।

তবে সচেতন নাগরিকরা ফুটওভার ব্রিজ থাকলে নিচ দিয়ে পার হন না। পথচারী মাহফুজ বলেন, ‘সচেতনতার অভাব আমাদের সবার মধ্যে কিছু না কিছু আছে। সেটা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন একটা বিষয় নিয়ে এত আন্দোলন হলো, তারপরও তারা কীভাবে নিচ দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে। লজ্জাবোধ থেকে হলেও এটা পরিহার করা উচিত।’

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মূল স্পটের একটি এই সিটি কলেজ। এখানে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে ছিলেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আশপাশের অন্যান্য স্কুল এবং কলেজ। অথচ আন্দোলনের কয়েক মাস পরেই সেই চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছে সিটি কলেজের সামনের মিরপুর রোড। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে গেছেন শিক্ষার্থীরা।

মিরপুর বাঙলা কলেজ, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ বড় বড় কলেজগুলোর পাশাপাশি একই চিত্র শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর-১ নম্বর, মিরপুর-১০ নম্বর, শাহবাগসহ রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায়। আবার আন্ডারপাস থাকার পরেও মূল সড়ক দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :