নীলে সাদায় শরৎ

গাজী মুনছুর আজিজ
  প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:১২
অ- অ+

খানিক বৃষ্টি। মেঘের লুকোচুরি। দারুণ রোদ। কখনো গুমোট। কখনো ফুরফুরে বাতাস। এই হলো এখন আবহাওয়া বারতা। আকাশের রঙেও নীল বেড়েছে। আছে পেঁজা তুলার মতো মেঘের ভেলা।

এসব থেকে সহজেই আঁচ করা যায় প্রকৃতিতে এখন শরৎ। এরই মধ্যে অবশ্য ভাদ্র মাস শেষের পথে। তবে শরতের এ আবহাওয়ায় বেশি বদল আসে এই সময়েই। আমাদের জীবন-যাপনেও কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। বিশেষ করে খাওয়া-দাওয়া বা চলাফেরায়। তবে খাওয়া-দাওয়া বা চলাফেরার প্রসঙ্গের আগে আসুন চোখ রাখি শরতের প্রকৃতিতে। শরৎ যেন অনেকটা শুভ্রতারই উৎসব। আর এ উৎসবের অন্যতম প্রতীক হিসেবে কাশফুলের বন বা কাশবন অতি পরিচিত দৃশ্য। এটা শরতের ফুল। নদীর তীরে কিংবা খালবিলের পারে কাশফুলের দোল খেলা যেন শরতের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

তবে কংক্রিটের এ শহরে নদীর তীর বা খালবিল যেমন কম বা নেই, তেমনি নেই কাশবনও। কিন্তু গ্রামে নদীর পারে ঠিকই চোখে পড়ে। অবশ্য এখন তো আমাদের নদীর সংখ্যাও কম। নদী গবেষকদের মতে, ষাটের দশকেও বাংলাদেশে ৭৫০টি নদী ছিল। সেখান থেকে কমে এখন তা দাঁড়িয়েছে ২৩০টিতে। অর্থাৎ মাত্র ৫০ বছরে আমরা আমাদের দেশ থেকে ৫২০টি নদী হারিয়ে ফেলেছি। মূলত ব্যক্তি সচেতনতার অভাবে আমাদের নদী আমরাই মেরে ফেলছি। অন্যদিকে আকাশছোঁয়া দালানের জন্য তুলার মতো পেঁজা পেঁজা মেঘের ভেসে বেড়ানোও এ শহরের আকাশে তেমন দেখা যায় না। তবে এ শহরে না হোক, আশপাশে বা গ্রামের আকাশে ঠিকই এর দেখা মেলে।

কাশবনের পাশাপাশি শরৎ ঋতুর আরেকটি প্রতীক হিসেবে শিউলি বা শেফালি ফুলের ঘ্রাণ প্রকৃতিতে বেশ জানান দেয়। সাদা আর কমলার রঙের মিশেল ছোট ছোট শিউলি ফুল ফোটে শরতের রাতে। আর ঝরে পড়ে ভোরবেলায়। গাছতলায় বিছিয়ে থাকা শিশিরভেজা শিউলি ফুল দেখে পথিক বুঝে নেন শরৎকাল চলছে। কেউ কেউ এ ফুল কুড়িয়ে নিয়ে মালা গাঁথেন। সত্যিই শিউলি ফুলের মতো এমন মিষ্টি ঘ্রাণ এ দেশের অন্য ফুলে কমই আছে।

শরতের আরেক ফুল কামিনী। এটাও রাতে ফোটে, ভোরে ঝরে। সাদা রঙের ছোট আকৃতির এ ফুলটির ঘ্রাণও মুগ্ধকর। এছাড়া সাদা রঙের ছাতিম শরতের আরেক ফুল। দূর থেকেই এর দারুণ গন্ধ অনুধাবন করা যায়। এসবের পাশাপাশি শরতের আরও ফুল আছে। তার মধ্যে একটি হলো নীলপদ্ম।

প্রকৃতির এ উৎসবের পাশাপাশি শরতের সবচেয়ে বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা বা শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান বার্ষিক উৎসব। শরতের দ্বিতীয় মাস আশ্বিনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

শরৎ ঋতু ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের গান বা কবিতায়ও। তিনি গানে লিখেছেন ‘তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে’। তার কবিতা ‘এসেছে শরৎ’। যেখানে বলা হয়েছে: এসেছে শরৎ হিমের পরশ/লেগেছে হাওয়ার পরে/সকাল বেলায় ঘাসের আগায়/শিশিরের রেখা ধরে। আমলকীবন কাঁপে যেন তার/বুক করে দুরু দুরু/পেয়েছে খবর পাতা খসানোর/সময় হয়েছে শুরু। শিউলির ডালে কুঁড়ি ভরে এলো/টগর ফুটিল মেলা/মালতীলতায় খোঁজ নিয়ে যায়/মৌমাছি দুই বেলা।

কবি জীবনানন্দ দাশ প্রিয়তমাকে বর্ণনা করেছেন শরতের চরিত্রের সঙ্গে। অন্যদিকে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:

শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ

এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই...।

প্রকৃতির মতো জীবনযাপনেও পড়ে শরতের প্রভাব। ফ্যাশন ডিজাইনার ফয়েজ হাসান বলেন, শরতের এই সময়ে পোশাকে নীল বা হালকা রঙের আবেশ থাকলে ভালো লাগবে। আর এ সময়ে গরম কম পড়ে তাই সুতি জাতীয় পোশাক শরীরের জন্য উপযোগী।

চিকিৎসকরা জানান, ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকেই সর্দি-কাশিসহ ছোটখাটো অসুখ ভোগ করেন। বিশেষ করে শিশুদের বেলায় এটা বেশি লক্ষণীয়। তাই এ সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করাই উত্তম। বিশেষ করে শরীরে বেশি ঠান্ডা না লাগানো বা বেশি বেশি ঠান্ডা পানি না খাওয়া ভালো। আর যেকোনো অসুখেই হোক, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা অতি জরুরি।

আবহাওয়া বা প্রকৃতিতে শরৎ উপস্থিত হলেও নগরজীবনে তা অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। আর সেজন্য নাগরিকদের শরতের স্নিগ্ধতার পরশ দিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শরৎ উৎসবের আয়োজন করে থাকে নগরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছায়ানট, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠন শরৎ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এসব উৎসব সাজানো হয় গান-কবিতা-নাচসহ নানা আয়োজনে।

তবে শরতের প্রকৃত রং উপভোগ করতে আসতে হবে গ্রামে। ঘুরতে হবে নদীর পারে। যেখানে শিশিরভেজা শিউলি ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া যাবে। দেখা যাবে সাদা কাশবনের ঢেউ খেলানো নাচন।

ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দাঁড়িয়ে থাকা নসিমনকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ১ 
পঞ্চগড় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যুবকের মৃত্যু 
ঈদুল আজহায় ৯৯৯-এ ১৫ হাজারের বেশি কল, মারামারিতে ৪১০২ অভিযোগ
ম্যাচ উইনার হিসেবে দলে অবদান রাখতে প্রস্তুত নাহিদ রানা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা