লাইভ কনসার্টে আসছে ‘ঢাকাইয়া গলি বয়’

কাজী রফিক
 | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০১৯, ১৭:৩৩

ফেসবুকে র‌্যাপ সং গেয়ে আলোড়ন তোলা পথশিশু রানাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে লাইভ কনসার্টের জন্য। তীব্র অর্থ সংকটের কারণে পড়ালেখা করতে না পারা ছেলেটি এর মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‘এক মাস সেহরি খাইয়া রোজা রাখা সোজা, আমি রানা হারা বছর সেহরি ছাড়াই রোজা।’ গানের কথাগুলোতে ফুটে উঠেছে এক পথশিশুর জীবন। আর গানটিতে কন্ঠ দিয়েছে দশ বছর বয়সী রানা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় ‘ঢাকাইয়া গাল্লি বয়’ নামের গানটি। ২ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের গানটি নজর কাড়ার পাশাপাশি, মানবিক আবেদন সৃষ্টি করেছে। গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে পথশিশুদের জীবনের সংকট, অভাব, নানা অপ্রাপ্তি, অপূর্ণ ইচ্ছার কথা।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসিন্দা পূর্ব রসূলপুর এলাকায় রানার বসবাস। মায়ের সঙ্গে টিনসেড বাসায় একটি ঘরে বসবাস করে রানা ও তার ১৪ বছর বয়সী বড় ভাই। মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। বাবা থাকেন ফরিদপুরে। সেখানে মাছ ধরার খাঁচা তৈরি করেন। সামান্য আয়ে যখন খাওয়া পড়াই দুষ্কর, সেখানে পড়াশোনার বিষয়টি আপেক্ষিকই রয়ে গেছে রানার ক্ষেত্রে।

অভাবের সংসারে রানার আহার জোটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সকালে ঘুম থেকে উঠেই রানা চলে আসে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। সারাদিন ঘুরে ফিরে এর ওর কাছে হাত পেতে আহার জোটে। কখনো না খেয়েও থাকতে হয়।

কথা হয় রানার সঙ্গে। জানায়, পড়াশোনা করে বড় হওয়ার ইচ্ছের কথা। তবে এখনো তেমন কোনো লক্ষ্য নেই তার। বলেন, ‘স্কুলে যাইতে চাই। কিন্তু ট্যাকা নাই। ইচ্ছা আছে, পড়াশুনা করুম। ডাক্তার হমু। গান গামু।’

আলোচিত গানটির কথা, রেকর্ড ও কম্পোজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাসান তবীব। গত ২৩ শে মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের সামনে প্রথমবার রানাকে দেখেন তিনি।

‘রানা এসে খেতে চায় এবং মোটর সাইকেলে করে ঘুরতে চায়। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি গান জানো? তখন সে একটি গান শোনায়।’

এরপর রানার জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে রানা বিস্তারিত জানায়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনযাপনকে ঘিরে একটি গান লেখেন তবীব নিজেই। এরপর তা মুখস্ত করিয়ে রেকর্ড করা হয় এবং পরবর্তিতে ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা প্রকাশ করা হয়।

গত ৩১ মে ঢাবি মেট্রো-১৯২১ নামে একটি ফেসবুক পেজে গানটি প্রকাশ করা হয়। এরপরই তা ছড়িয়ে পরে হাজার হাজার ফেসবুক আইডিতে।

রানার মত অনেক পথশিশুই আলোচনায় এসেছে। কিছুদিন আলোচনায় থাকার পরে তারা হারিয়েও গেছে। রানার ক্ষেত্রে এমনটা যেন না ঘটে এমন প্রত্যাশা রানাকে টাইমলাইনে নিয়ে আসা মাহমুদ হাসান তবীবের। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘রানার মতো অনেকেই এসেছে, আবার হারিয়ে গেছে। কিন্তু রানার ক্ষেত্রে এমন হতে দিতে চাই না। আমি রানাকে নিয়ে আরো দুই তিনটা গান করছি। কিছুদিন পর সেগুলোও প্রকাশ করা হবে।’

রানার ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে চান তবীব। বলেন, ‘বর্তমানে লাইভ কনসার্টের জন্য রানাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন প্রশিক্ষণ পেলে সে লাইফ কনসার্ট করতে পারবে, সাথে তার একটা আয়ের পথও তৈরি হবে। আর তাকে একটা স্কুলেও ভর্তি করে দেয়া হবে।’

‘কেউ যদি রানাকে কোনো অনুদান দিতে চান, তাহলে আমি বলব, রানার বাসায় গিয়ে তাকে বাংলা রিডিং পড়া শেখান। এটা তার জন্য সবচেয়ে বড় ডোনেশন হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :