দায়িত্ব নিচ্ছেন বরিস: ব্রেক্সিট চুক্তির কী হবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৯, ০৮:৪০

ব্রিটেনে আজ নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা বরিস জনসন। দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা যখন শেষ হবে তখন বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন।

যুক্তরাজ্য কোন চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিদায় নেবে কিনা সেই সম্ভাবনার মুখোমুখি দাড়াতে হবে তাকে। এই একই বিষয়ের সুরাহা না করতে পারায় বিদায় নিতে হয়েছে টেরিজা মেকে।

চুক্তি বিহীন ব্রেক্সিট অর্থ কী?

সোজা কথায় এর অর্থ দাঁড়াবে এত বড় পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে দেশটির বিভিন্ন খাত ও জনগণকে কিছুটা সামলে নেয়ার সময় দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোন সাময়িক চুক্তি ছাড়াই বিদায় নিতে হবে।

দেশটিকে রাতারাতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানিতে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা যুক্তরাজ্য পেত সেটি আর পাবে না। ইইউ সদস্য দেশগুলো থেকে এতদিন আমদানি হত এমন পণ্যের ওপর কর বসে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য তার দাম বেড়ে যাবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেসব সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাজ্য সম্পর্কিত যেমন, ইউরোপিয়ান আদালত বা ইউরোপিয়ান পুলিশ, এরকম অনেকগুলো সংস্থা থেকে যুক্তরাজ্যকে বের হয়ে যেতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাৎসরিক বাজেটে যুক্তরাজ্যকে কোন অর্থ দিতে হবে না। বর্তমানে তা বছরে নয়শত কোটি পাউন্ড।

এটা কি ঠেকানো সম্ভব?

সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে দেশটির পার্লামেন্টে যে চুক্তি প্রস্তাব করেছিলেন সেটি হল যুক্তরাজ্য ২১ মাসের একটা সময় পাবে বিশাল এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে। তার এই প্রস্তাব সংসদে তিনবার প্রত্যাখ্যান করেছেন সংসদ সদস্যরা।এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য তার জন্য লাভজনক চুক্তি নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ পেত।

এখন যদি কোন ধরনের চুক্তি ছাড়াই হঠাৎ বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা এড়াতে হয় তাহলে দেশটির বিচ্ছেদের ব্যাপারে পরিকল্পনা নিয়ে সংসদে নতুন আইন পাশ করতে হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে সময় নিতে সমর্থ হতে হবে অথবা ব্রেক্সিট বাতিল করতে হবে। পার্লামেন্টে টেরিজা মের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হবার পর ব্রেক্সিটের সময়সীমা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বরিস জনসনের অবস্থান কী?

৩১ অক্টোবরের মধ্যেই যেকোনো মূল্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ নিশ্চিত করতে চান বরিস জনসন। এক রেডিও সাক্ষাৎকারে তিনি সেরকমই বলেছেন। তিনি বলেছেন, দরকারে কোন চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিদায় নেবে। টেরিজা মের প্রস্তাব পুরো বাতিল করে নতুন চুক্তির খসড়া করবেন তিনি।

ওদিকে ইউরোপীয় কমিশনের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অরসুলা ফন ডার লায়েন নভেম্বরের ১ তারিখ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, ব্রেক্সিটের জন্য সময় দেয়ার ব্যাপারে তিনি সমর্থন দেবেন। তবে যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কিভাবে বের হয়ে যাবে সে ব্যাপারে চুক্তি নিয়ে নতুন কোন আলাপ হবে না। সব কিছুর জন্য একদমই কম সময় রয়েছে হাতে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অবশ্য এখন গ্রীষ্মের বিরতিতে রয়েছে।

বাণিজ্যের জন্য যে অর্থ দাঁড়াবে

চুক্তি বিহীন ব্রেক্সিট মানে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন। যুক্তরাজ্যে অর্থনৈতিক মন্দাও দেখা দিতে পারে। চুক্তি বিহীন ব্রেক্সিট মানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোন বাণিজ্য চুক্তি করার সময় থাকবে না। তাদের মধ্যে বাণিজ্য হবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী। তার অর্থ হল ইউরোপের অন্যান্য দেশে যুক্তরাজ্য কিছু বিক্রি করতে চাইলে তার উপর শুল্ক আরোপ হবে। একই বিষয় ঘটবে যখন ইউরোপের অন্যান্য দেশের পণ্য যুক্তরাজ্যে ঢুকবে।

মুক্ত সীমান্তের সুবিধা অনুযায়ী খুব কড়াকড়ি ছাড়া পণ্যের আনাগোনা সম্ভব। কিন্তু চুক্তি বিহীন ব্রেক্সিট মানে বন্দরে বা সীমান্তে এখন দু’পক্ষই একে অপরের পণ্যে প্রবেশের আগে অনেক কড়াকড়ি হবে। তাতে কোন কিছু আমদানি রপ্তানি সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়বে। যদিও যুক্তরাজ্য বলছে শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা ৮৭ শতাংশ পণ্যের প্রবেশে তারা কোন শুল্ক আরোপ করবে না।

ব্যক্তির জন্য এর যা অর্থ দাঁড়াবে

সাধারণ মানুষের জীবনে এর নানাবিধ প্রভাব পড়বে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ভিসা মুক্ত যাতায়াতের সুবিধাও হারাবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা। এখন যেমন কাজের জন্য সহজে একে অপরের দেশে যেতে পারছে ইউরোপের দেশের মানুষজন। চুক্তি বিহীন ব্রেক্সিট মানে সেটি বন্ধ হয়ে যাবে।

তার মানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা দেশে যুক্তরাজ্যের সেসব লোকজন নানা খাতে কাজ করতেন তাদের জন্য বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়বে। সে হোক আইনজীবী বা ব্যাংকার। পণ্যের উপরে শুল্ক আরোপ হলে, বন্দরে সময় বেশি লাগলে বা বাণিজ্যে নানা সুবিধা বাতিল হলে বহু পণ্যের দাম বাড়বে। বিশেষ করে খাদ্য পণ্যে দাম বাড়লে তার প্রভাব অবশ্যই সাধারণ মানুষজনের গায়ে লাগবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আরেকটি সুবিধা হল যেকোনো সদস্য দেশে গিয়ে স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যায় পড়লে ইউরোপিয়ান হেলথ ইনস্যুরেন্স কার্ড নামে একটি বিশেষ বীমা ব্যবস্থার আওতায় যেকোনো সদস্য দেশের সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুবিধা পান নাগরিকেরা। সেটি আর থাকবে না যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য।

যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গেলে মোবাইল ফোনে রোমিং চার্জ আরোপ হতে পারে। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা দেশে বাস করছেন। ব্রেক্সিটের পর তারা বিদেশি হিসেবে বিভিন্ন নতুন আইনের আওতায় পড়তে হতে পারে।

ঢাকা টাইমস/২৪জুলাই/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :