ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা
তিনটি দাবি পূরণ হওয়ার কথা জানিয়ে ক্লাস–পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৮ ডিসেম্বর টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় বসছেন তারা।
আজ বুধবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর রহমান (সায়েম)।
এ সময় শিক্ষার্থীরা দ্রুত দাবি পূরণ করায় বুয়েট প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরু থেকেই সচেষ্ট থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা গত ২ নভেম্বর বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে বুয়েটের উপাচার্য, ডিএসউব্লিউ ও ডিনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এ সময় তারা প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর এক সংবাদ সম্মেলন করে এই তিনটি দাবির প্রথম ও দ্বিতীয় দফা পূরণ হলে তারা আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ গ্রহণ করতে সম্মত হবেন বলে জানান। আর টার্ম ফাইনাল শুরু হওয়ার অন্তত ৭ দিন আগে তৃতীয় দফা পূরণ না হলে তারা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো ছিল, চার্জশিটের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা, আহসান উল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলের র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা করে বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত করা।
এরপর গত ২১ নভেম্বর বুয়েট প্রশাসন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ২৬ জনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করে এবং ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয় যেটি শিক্ষার্থীদের তিনদফা দাবির প্রথম দফা ছিল। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বুয়েট কর্তৃপক্ষ আহসানউল্লাহ এবং সোহরাওয়ার্দী হলে ঘটা পূর্বের র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদানের নোটিশ দেয় যেটি তাদের দ্বিতীয় দফা ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা বলেন, যেহেতু আমাদের দুটি দফা মেনে নেওয়া হয়েছে তাই আমরা গত বুধবার পরীক্ষার তারিখের ব্যাপারে এক্সাম কন্ট্রোলার, রেজিস্ট্রার এবং সকল অনুষদের ডিনদের উপস্থিতিতে ভিসি স্যারের সাথে কথা বলি। পরীক্ষা প্রস্তুতির সময় চেয়ে ২৯ তারিখ পরীক্ষা শুরুর কথা জানাই। তখন স্যারেরা ২৮ তারিখ পরীক্ষা শুরুর কথা বললে আমরা এতে সম্মত হই। সব শেষে গত ২ ডিসেম্বর বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী র্যাগিং এবং ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত থাকলে তাদের শাস্তির নীতিমালা করে নোটিশ প্রকাশ করে এবং আজ সকালে এই নোটিশ এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানায়। একই সাথে এখন থেকে নবাগত শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় বুয়েটের কোড অব কন্ডাক্ট জানিয়ে অঙ্গীকার নেয়ার পরিকল্পনা আছে বলে জানান শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীদের তিন দাবির মধ্যে কেবল তিতুমীর হলে আগের র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বাকি রয়েছে। এটি হলেই শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে।
চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তিতুমীর হলে র্যাগিংয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। ২৮ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে শিক্ষার্থীরা সম্মত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনে শক্তি জোগানোয় বুয়েটের সব শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ যারা আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাহমুদুর রহমান সায়েম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলন শুরু থেকেই এ ক্যাম্পাসের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর আন্দোলন ছিল। এ আন্দোলনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত সকলের উপস্থিতিতে নেওয়া হয়েছে, কারও একক সিদ্ধান্তে কোনো কাজ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেক মুখপাত্র অন্তরা মাধুরীও বক্তব্য দেন।
ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/ ইএস