‘ক্ষুদ্র স্বার্থে পাহাড় সমান জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করলেন সু চি’

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) নিজ দেশের পক্ষে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি যে বক্তব্য দিয়েছেন এর সমালোচনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রহমান। নোবেলবিজয়ী বিতর্কিত এই রাজনীতিক ক্ষুদ্র স্বার্থে পাহাড় সমান জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করলেন বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক এই বিশ্লেষক।
বুধবার বিকালে বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির সংবাদ বিশ্লেষণমূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তারেক শামসুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে সব সংগঠন বিশেষ করে আইসিজের প্রসিকিউটর তার অনুসন্ধান প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে পরিকল্পিতভাবে উৎখাতের কথা বলেছেন। কিন্তু সু চি বলছেন ভিন্ন কথা। এর অর্থ হলো- সু চি মিয়ানমারকে একটি বৌদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। তার পেছনে আছে সেনাবাহিনী, আছে উগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের স্বার্থেই তিনি এসব কথা বলেছেন।’
মুসলমান ও বৌদ্ধদের সঙ্গে বহুবছর আগে সংঘাত এবং আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আরসা জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে-সু চির এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আরসার বিষয়ে সুচি যা বলছেন এটা নিয়ে তাদের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বলতে চেয়েছেন এরা মিয়ানমারকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এর মাধ্যমে নির্যাতন, গণহত্যার অভিযোগকে হালকা করা যাবে এই ধারণা থেকে একথা বলেছেন। কারণ জঙ্গির বিষয়টি বললে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে কনভেন্স করা সহজ মনে করে একথা বলেছেন।’
রাখাইনে সামাজিকভাবে, দারিদ্রের কারণে এমনটা ঘটেছে সু চির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে এটাকে ‘চালাকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন আন্তর্জাতিক এই বিশ্লেষক।
তারেক শামসুর রহমান বলেন, ‘সু চি রোহিঙ্গা শব্দ একবারও উল্লেখ করেননি। মুসলমানদের জন্মসনদের বিষয়ে কথা বলেননি। তিনি মিথ্যাচার করেছেন। নিজেকে একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে প্রমাণ করেছেন। আবার বলছেন, আরসার লোকজন নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে তারা দেশ ছেড়েছেন। এটা সত্যের অপলাপ।’
সু চির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র স্বার্থে পাহাড় সমান জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করলেন সু চি। তিনি বার্মাকে বৌদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার কাজ করছেন।’
হেগের আদালত থেকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন রায় আসতে পারে এমন আশা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘পুরো রায় হতে আরও দুই তিন বছর লেগে যেতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার অন্তবর্তীকালীন রায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখানে বেশ কিছু নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।’
সু চির বক্তব্যে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনো কথা না বলায় তার সমালোচনা করেন তারেক শামসুর রহমান। বলেন, ‘সু চি তার বক্তব্যে একবারও বলেননি বাংলাদেশে আসা ১০-১১ লাখ রোহিঙ্গার কী হবে, তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে কি না। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের কথা একবারও বললেন না। এতে বোঝা যায় মিয়ানমার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছেন তা বলা যাবে না। তাই এই সংকটটা রয়ে যাবে।’
তিনি পরামর্শ দেন, ‘এটার সমাধান কূটনৈতিকভাবে হতে হবে। মামলায় বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়। তারা পর্যবেক্ষণে গেছে। এখন কূটনৈতিক বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কীভাবে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করা যায়।’
রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি কবে নাগাদ সমাধান হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এটা দীর্ঘ প্রসেস। তাই এটা কবে নাগাদ হতে পারে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।’
মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশকে আহ্বান জানানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের বোঝাতে হবে। আর ইতিমধ্যে দেশটির চার সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এটাকে ধরেই মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ কীভাবে করা যায় সে বিষয়ে চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্যদের বোঝাতে হবে।’
সু চির বক্তব্যের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ বাধাগ্রস্ত করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় গাম্বিয়া যেসব তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। আর আদালত একজন মানুষের কথায় রায় দেবে বলে বিশ্বাস হয় না।’
(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/বিইউ/জেবি)

মন্তব্য করুন