বিত্তে করে চুরি ভিখারি করে দান

শেখ সাইফ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল ২০২০, ২৩:১৩
অ- অ+

‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।‘ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘দুই বিঘা জমি’তে পাষণ্ড জমিদার কতৃক দরিদ্র কৃষকের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়ার করুণ গল্প ফুটে উঠেছে। বর্তমানে এমন জমিদারের অভাব নেই। এই করোনাকালেও এমন রক্তচোষা জমিদাররুপ মানুষ নয় পশু-জানোয়ার দেখা যাচ্ছে।

সরকারের দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী অসহায়, দরিদ্র পীড়িত, দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না করে জনগণের নামধারী কিছু প্রতিনিধিরা নিজেদের ঘরে বোঝায় করছেন। লুকিয়ে রাখছেন মাটিতে পুতে। এমনকি ধরা পড়ার ভয়ে পুকুরেও ফেলে দিচ্ছেন।

যখন মানুষের দুবেলা দুমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার। সেখানে কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি নিজের জন্য সব কুক্ষিগত করছেন।

অথচ এই সমাজেই কিছু ভিক্ষুক আছে যারা ভিক্ষা করে দান করছে এসময়। তারা ক্ষুধার মর্ম বোঝে। শুধু এসময় দান করে তা নয়। আমার নিজ চোখে দেখা। ভিখারি মসজিদে নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় দান বাক্সে কিছু দান করে যাচ্ছেন।

আমি এমনও দেখেছি, এক বয়ষ্ক ভিক্ষুক আর এক বিকলাঙ্গ ভিক্ষুককে দান করছে। এরা কত বড় মনের। কত মহান। অথচ রাজার হালে চলা জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণের চাল চুরিতে ব্যস্ত। ত্রাণের তেল চুরিতে ব্যস্ত। কত ক্ষুধা তোমাদের পেটে হে জন হিতৈষী?

সোশ্যাল মিডিয়ার ঘুরে বেড়াছে কিছু ছবি। একজন ভিক্ষুক তিনি মসজিদের দান বাক্সে দান করছেন। আবার এক ভিক্ষুক তারা সারা জীবনের জমানো অর্থ দান করে দিচ্ছেন। এই মসিবতের সময়ে সবার বিপদে তিনিও সামিল হচ্ছেন।

ভিক্ষুকের জমানো দশ হাজার টাকা যে তার কাছে কতটাকা সেটা এই রক্তচোষা জনপ্রতিনিধিরা কখনই বুঝবে না। একজন ভিক্ষুকের কত বছর, কত পথ, কত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এই দশ হাজার টাকা জোগাড় করেছেন। তার মর্ম কী করে বুঝছে। এই হায়েনারা। বুঝবে না কোনো দিন।

কী করে জনপ্রতিনিধিরা অন্যের পেটে লাথি মেরে নিজের উদর ভরছেন এ সময়ে? যখন দরিদ্র অসহায়দের পকেটে টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই। বাইরে নেই কোনো কাজ। তখন তাদের দুমুঠো ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে কী করে তাদের অভুক্ত রাখছেন হে জন প্রতিনিধি?

নির্বাচনের আগে কত স্লোগান- অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র। কত শত ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি। আর এখন এই আকালের সময়। মহামারির সময় যখন সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে সবার স্বার্থে। তখন আপনারা এই অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করছেন? তাদের হক-অধিকার হরণ করছেন। তাদের খাবারে ভাগ বসাচ্ছেন। কত ক্ষুধা আপনাদের হে প্রতিশ্রতিশীল নেতা।

এখন আমরা বাইরে বের হচ্ছি না। সবকিছুই বন্ধ। খুব প্রয়োজনে বাইরে গেলে কাঁচাবাজার বা মুদি দোকানের সামনে ভিক্ষুকদের ভিড়। এক জনকে দিতে গেলে দশজন চলে আসে। সামনে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবার চোখ কোঠরের মধ্যে চলে গেছে। এবারে চলতে থাকলে হাড্ডি কঙ্কালসার দেহ বের হয়ে আসবে।

কোথাও কোথাও আবার ত্রাণ নিয়ে কী প্রচণ্ড রকমের প্রহসন। ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে আবার ত্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ পরিতাপ, এ দুঃখ কারে বলি। আমরা মানুষ হব কবে?

পরিশেষে শুধু এটুকু মিনতি। পশুর খোলস ছেড়ে মানবতার পোশাক পরুন। আপনাদের চেহারা হিংস্র জানোয়ার-পশুর চেয়েও ভয়ঙ্কর। খুব কুৎসিত। নগ্ন জানোয়ার থেকে বের হোন। বুনো মনকে হত্যা করুন। মানবতার পোশাক পরুন। গেয়ে উঠুন জীবনের জয়গান। অনাহারের মুখে খাবার তুলে দিন। হাসি ফুটে উঠুক সকল প্রাণে।

ছোট বেলার কবিতার মতো হোক জীবনের পথ চলা। পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের কবিতায় লাইন হয়ে উঠুক জীবনের ভাষ্য। ‘ সবার সুখে হাসব আমি কাঁদব সবার দুঃখে, নিজের খাবার বিলিয়ে দেবো অনাহারীর মুখে। আমার বাড়ির ফুল বাগিচা ফুল সকলের হবে, আমার ঘরের মাটির প্রদীপ আলোক দিবে হবে। আমার বাড়ি বাজবে বাঁশি সবার বাড়ির সুর আমার বাড়ি সবার বাড়ি রইবে না করে দূর।’

ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজধানীর পল্লবীতে বাসে আগুন
প্রধান উপদেষ্টা জামায়াত আমিরের খোঁজ খবর নিচ্ছেন: প্রেস সচিব
অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে পার্কে ঘোরাঘুরি, অতঃপর যা হলো এসআই মাহবুবের
শাহজালালে ১৫৭৭ গ্রাম সোনাসহ দুই চোরাকারবারি আটক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা