এই শোক আমরা সইব কেমন করে!

মোহাম্মদ কানিছুর রহমান
 | প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২০, ১৯:১৫

কোনও এক মধ্য দুপুরে ছোট ভাই জসিম ফোন করে জানালো বিকালে একটু সময় রাখতে। মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাওযার জন্যই এই সময় রাখতে বলা।

আমরা যথাসময়ে আমাদের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন স্যারসহ গুলশান ন্যাম ভবনে পৌঁছে যাই। আনিসুজ্জামান স্যারের বাসার নিচে বসে থাকি। অনেক গল্প করছেন ভিসি স্যার। কিন্তু কোনও কথা আমার মাথায় ঢুকছে না। শুধু হ্যাঁ হু করে যাচ্ছি।

আমি ভাবছিলাম আনিসুজ্জামান স্যারের কাছে গিয়ে কিভাবে দাঁড়াব। তিনি কিছু মনে করবেন কি-না। অনেক কথা অনেক ভাবনা। আমরা স্যারের বাসায় ঢুকে দেখি স্যার চেয়ারে বসে আছের। আমরা যাওয়ার সাথে সাথে সবাইকে এমনভাবে আপন করে নিলেন যেন আমরা সবাই ঘরের মানুষ।

আমার একটু আগেও সব ভাবনা ভুলে গিয়ে মনে হলো আপন আলয়ে এসেছি। একটু পর স্যারের স্ত্রী এসে সবাইকে যে আন্তরিকতার সাথে আপন করে নিলেন মুগ্ধ হয়ে গেলাম। উনি ঘরে তৈরী অনেক খাবার আমাদের সামনে হাজির করলেন। বললেন ‘তোমাদের কেউ না খেয়ে থাকতে পারবে না’। ভিসি স্যার ডায়াবেটিস রোগী তিনিও মিষ্টিসহ সব খাবার খেতে বাধ্য হলেন।

আমি আনিসুজ্জামান স্যারের কাছে গেলে মাথায় হাত রেখে যখন বললেন- আমরা সবাই মিলে কাজ করব। তোমরা এক একে সবাই বলো। আমাদের মধ্যে প্রথমে ভিসি স্যার, তারপর শায়ক ভাই ও জসিম বললেন।

আমরা স্যারকে বললাম বঙ্গবন্ধু নববীক্ষণ নামে একটা বই বের করতে চাই। তিনি শুধু বললেন বঙ্গবন্ধু একটি চলমান মহিরূহ তাই এটি হবে ‘বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ’।

এক কথায় সবাই মেনে নিলাম। শায়ক ভাই বললেন স্যার আপনাকে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হতে হবে। স্যার আমাদের সবার অনুরোধে রাজি হলেন। শুরু হলো স্যারের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ। তারপর যতবার বইয়ের কাজে বা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গেছি আপন করে কাছে টেনে নিয়েছেন।

স্যারের কাছে গেলে মনের মধ্যে একধরনের প্রশান্তি কাজ করত। গতকাল থেকে বুকের ভেতর কোথায় যেন খালি খালি লাখছে। চিনচিন করে ব্যথা করছে। আর বাসায় গেলে মায়াভরা মুখে ডাকবেন না। বলবেন না কেমন আছ। আর বলবে না কেউ সবটুকু খাবার খেতে হবে। আর কখনো কেউ বলবেন না ঢাকা থেকে এসেছ না টাঙ্গাইল থেকে। আর জিজ্ঞেস করবেন না কেউ কতটুকু কাজ হয়েছে।

অনেক সময় স্যারের সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয়েছে। সবশেষ ১৭ মার্চ আমরা সবাই মিলে আবার স্যারের বাসায় যাই। বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ এর প্রথম খণ্ডের কপি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। স্যারের হাতে বই তুলে দিই আমরা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যরা। স্যার খুব খুশি হয়েছিলেন। স্যারের স্ত্রীর হাতেও একটি কপি তুলে দেই।

ফিরে আসার সময় স্যারকে বলি- আপনি ভালো থাকবেন। এই অবস্থায় আমরা আর আসব না। আপনি ভালো থাকবেন স্যার। তিনিও আমাদের বললেন- তোমরাও ভালো থেক।

করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতি ঠিক হলে আবার দেখা হওয়ার কথা ছিলো। আবার হয়ত পৃথিবী স্বাভাবিক হবে। আমরা যদি বেঁচে থাকি তবে সেই মুক্ত পৃথিবী আমার শুন্যই থেকে যাবে। বুকের ভেতর শুন্য জায়গাটা আর কখনো পূর্ণ হবে না। আজ বুকের ভেতর থেকে কান্না আসছে চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে। কার কাছে গিয়ে দাঁড়াব আমরা। আমাদের বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ পরিবারের সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের মাঝে নেই এই শোক কিভাবে সইবো আমরা!

স্যার, আমরা চেষ্টা করবো আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজটুকু সমাপ্ত করতে। ওপারে থেকে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি ছিলেন মহিরূহ আর আমরা সেই তুলনায় তৃনলতা। তবুও লতাপাতা দিয়ে আমরা আপনার দেয়া পরামর্শ ও শক্তি নিয়ে কাজটি সমাপ্ত করব ইংশাল্লাহ। মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের স্যারকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেন।

লেখক: সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, বঙ্গবন্ধু বীক্ষণ ও উপ-রেজিস্ট্রার, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :