করোনা সংকটে মানুষের পাশে যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২০, ২০:২৮| আপডেট : ২৬ মে ২০২০, ২১:১৭
অ- অ+

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি ও উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার নির্দেশনা দিয়েছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যেন জনগণের পাশে থাকেন। কিন্তু সমালোচিত হয়েছেন অনেক জনপ্রতিনিধি। ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ উঠেছে অনেকের বিরুদ্ধে। এমন সমালোচনার মধ্যেও ক’জন জনপ্রতিনিধি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে ময়দানে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নিবেদিত কর্মী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের মানুষ এদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। দেশের পরীক্ষিত এমন আলোচিত ১২জন জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে ঢাকাটাইমসের এই প্রতিবেদন।

তোফায়েল আহমেদ এমপি

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে এলাকার সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশায় পাশে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ এমপি। তিনি বার বার এলাকার সাধারণ অসহায় মানুষের জন্য খাবার পাঠিয়েছেন এবং নিজ উদ্যোগে দুঃস্থদের তালিকা তৈরি করে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছেন। শুধু দুঃস্থ নয়, মধ্যবিত্ত ও যারা অভাবগ্রস্ত তাদেরও সহযোগিতা করেছেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি সব সময় এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন এই করোনার দুর্যোগময় মুহূর্তে।

নাছির উদ্দিন

চট্টগ্রামের নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দিন। নগরের অধিকাংশ এমপি, মন্ত্রীরা যখন স্বঘোষিত হোম কোয়ারেন্টাইনে নিরাপদ জোনে, ঠিক তখনই ৭০ লাখ নগরবাসীর দুঃখ কষ্টকে নিজের মাথায় তুলে নিয়ে, নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খাদ্য সহায়তা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন। যা দেখে তার শত্রুরাও অবাক হয়েছেন। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মহামারী করোনা ঝুঁকি তোয়াক্কা না করে নগরবাসীর খেদমতে মাঠে ময়দানে আছেন। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী, খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ, নিজে মাইক হাতে নিয়ে নগরের অলি-গলিতে সচেতনতামূলক মাইকিং, হাসপাতাল মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটিয়েছেন। নিজে সব সময় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ মানুষের পাশে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনা দুর্যোগে চট্টগ্রাম নগরীতে চষে বেড়িয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির ঢাকা টাইমসকে বলেন, যতক্ষণ বেঁচে আছি, আমার প্রিয় চট্টগ্রাম নগরবাসীর নিরাপত্তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। তিনি বলেন, করোনা প্রকোপ সহায়তা চাইতে না পারা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ছয় হাজারেরও বেশি পরিবারের নিকট ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। গত ২৩ মার্চ থেকে শুরু করে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সিটি মেয়র বলেন, প্রায় ৭০ লাখ নগরবাসীর মধ্যে এনজিওদের পরিসংখ্যানে ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ হতদরিদ্রের আওতায় পড়ে। কিন্তু আমাদের হিসাবে যা প্রায় ২০ লাখ। সরকারি, চসিক পরিবার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নগরের চার লাখ পরিবারের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরেছি। আর যারা বাকি রয়েছে, তারাও ত্রাণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন না, এটা আমাদের অঙ্গীকার। দুর্যোগ কাটিয়ে না ওটা পর্যন্ত এ ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

মেয়রের আটজনের একটা টিম প্রতিদিন সাহায্য প্রত্যাশীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। টিমের সদস্য আনিসুর রহমান চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, মেয়রের নিজের ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পেইজে এবং ব্যক্তিগত মোবাইলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত যারা লজ্জায় সবার সামনে সাহায্য চাইতে পারেনি, তারা ম্যাসেজ পাঠালেই খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ম্যাসেজ পেলেই মেয়রের টিমের নিকট সাহায্য প্রত্যাশীর ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে নাম-ঠিকানা জেনে তাদের নিকট মেয়রের দেয়া উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত শুধু ম্যাসেজের মাধ্যমে ছয় হাজার পরিবার ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ও সেবা সংগঠনের মাধ্যমে আরো ২৬ হাজার পরিবারকে চসিক মেয়র খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন বলে টিমের এই সদস্য জানান।

শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান। মহামারী করোনা সংকটের শুরু থেকে নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে আস্থা অর্জন করেছেন। শুরুতেই তিনি এলাকার দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এলাকায় যারা করোনা আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছেন। নারায়ণগঞ্জে নিজ উদ্যোগে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকায় যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, তাদের দাফনসহ সব কিছু নিজে তদারকি করেছেন।

নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন

ভোলা- ৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। বিতর্কিত হলেও মহামারী করোনা সংকটের সময় এলাকায় উপস্থিত থেকে জনগণের আস্থা অর্জন ও ত্রাণ সহায়তা দিয়ে এলাকায় অন্য আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন। ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখে তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশায় কাছে ছিলেন।

মির্জা আজম

জামালপুরের মির্জা আজম এমপি। করোনা মোকাবিলায় নিজ এলাকার জনগণের বন্ধু হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকটের মুহূর্তে তিনি জনগণের অভাব অনটন, দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার নিজ এলাকার হতদরিদ্র মানুষ যেন ত্রাণ সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করার জন্য সব সময় এলাকায় ছিলেন। চিকিৎসা সেবাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন।

এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী

চট্টগ্রামের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। মহামারী করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম তথা রাউজানের অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তিন কোটি টাকারও বেশি ত্রাণ তহবিল গঠন করে ৬৫ হাজার মানুষের নিকট খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। ফোন কলের মাধ্যমে ১০ হাজার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের নিকট খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। নিজ এলাকায় মোড়ে মোড়ে ১৫টি ভ্যানগাড়িতে ফ্রি মাছ ও শাকসবজি বিরতণ করেছেন। ১০০ জন ডাক্তার দিয়ে ফ্রি টেলি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছেন।

সারা রমজান মাসে করোনার সম্মুখযোদ্ধা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ প্রতিদিন দুই হাজার মানুষকে সেহেরির খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। তার নিজ নির্বাচনী এলাকা রাউজানের এক হাজার ৪০০ জন ইমাম-মুয়াজ্জিন, ৪০০ মন্দিরের পুরোহিত, ল্যাগোডার ২০০ ভিক্ষু এবং ২০০ প্রতিবন্ধীকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছেন। এমপিদের প্রথম তিনিই আট মাসের সম্মানির ১৫ লাখ টাকা ত্রাণ তহবিলে রাউজানের দুঃখী মানুষের নিকট বিলিয়ে দিয়েছেন।

শেখ সারহান নাসের তন্ময়

বাগেরহাটের শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি। নিজ নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। অন্যদিকে চিকিৎসাবঞ্চিত জনগণের পাশে থেকে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছেন। এলাকাবাসীর নিকট এসব উদ্যোগে তিনি ব্যাপকভাবে অভিনন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছেন।

মাশরাফি বিন মুর্তজা

নড়াইলের তথা বাংলাদেশের প্রিয় মানুষ মাশরাফি বিন মুর্তজা এমপি। শুরু থেকেই করোনা মোকাবিলায় নড়াইলবাসীর কাছে ছিলেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি নড়াইলবাসীর জন্য ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছেন। তেমনিভাবে নড়াইলের জনগণকে সচেতন করা এবং অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা সেবাও নিশ্চিত করেন।

নূর আলম চৌধুরী

মাদারীপুরের নূর ই আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) এমপি। দেশের ক্রান্তিকালে মহামারি করোনা সংকটের সময় নিজ নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিকভাবে এলাকাবাসীর পাসে ছিলেন। জনগণের সব ধরনের সমস্যা ও দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারের দিকে না তাকিয়ে নিজ উদ্যোগে নিয়মিত অসহায় গরীব মানুষের নিকট ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন।

শেখ হেলাল উদ্দিন

বাগেরহাট -১ আসনের সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি। ভাইরাস মোকাবিলায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। ফলে বাগেরহাট -১ সংসদীয় আসনে ত্রাণ নিয়ে কোনো সমস্যার অভিযোগ শুনা যায়নি। তিনি সব সময় অভাবগ্রস্ত নিরীহ মানুষের খাদ্য সংকট ও চিকিৎসা সেবাসহ নিজে তদারকি করেছেন।

শাহারিয়ার আলম

রাজশাহীর এমপি শাহারিয়ার আলম। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ত্রাণ সামগ্রী জনগণের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। এমনকি এলাকাবাসীর মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা ও দিয়েছেন। বিশেষ করে অসহায় গরীব মানুষের নিকট নিয়মিত খোঁজ খবর নিয়ে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে তার নির্বাচনী এলাকা রাজশাহীতে জনবন্ধু হিসেবে আলোচিত হয়েছেন।

একরামুল করিম চৌধুরী

নোয়াখালীর সাংসদ মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী এমপি। দেশের করোনা মহামারির দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজ উদ্যোগে নিজ এলাকার জনগণের নিকট ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। অসহায় গরীব ও দুঃস্থ জনগণের পাশাপাশি ও নিম্ন আয়ের মানুষের নিকট ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়ে তার নিজ এলাকার জনগণের কাছে জনবান্ধব এমপি হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা