জমি বিক্রি করেছেন মা, ক্রেতার কাছে চাঁদা চান ছেলে

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
  প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২০, ১৯:৪১
অ- অ+

রাজশাহী মহানগরীর আলীগঞ্জ মৌজায় তিন কাঠা জমি বিক্রি করেছেন রওশন আরা বেগম নামে এক নারী। কিন্তু এই জমি কিনে বিপদে পড়েছেন মিজানুর রহমান তালুকদার নামে এক ব্যক্তি। জমিতে গেলেই বিক্রেতা রওশন আরা বেগমের ছেলে আবদে রাব্বী চাঁদা চাইছেন। ছেলের সঙ্গে রয়েছেন ওই নারীর স্বামী মো. মহিউদ্দিন।

চাঁদা না দেয়ায় তারা জমি দখল করতে দিচ্ছেন না ক্রেতাকে। তারপরও জমি দখলে নিতে গেলে মিজানুর রহমানের শ্যালিকার ছেলে মো. সুমনের (৩০) পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে থানায় মামলা করেছেন সুমনের মামা আবদুস সাত্তার। পরে হেনস্থা করতে মহিউদ্দিনও তার নিকটাত্বীয়কে দিয়ে পাল্টা একটি মামলা করিয়েছেন। এখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার সনদই নেই। নাম নেই সরকারি গেজেটেও।

মহিউদ্দিন নগরীর বড়বনগ্রাম আমচত্বর এলাকার বাসিন্দা। আর মিজানুর রহমান তালুকদারের বাড়ি পিরোজপুর। তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে কুড়িগ্রামে আছেন। তার শ্যালক আবদুস সাত্তারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মিজানুর রাজশাহীতে না থাকায় শ্যালক সাত্তারকেই কেনা জমিটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে বলেছিলেন। সাত্তার তার ভাগ্নে সুমনকে নিয়ে জমিতে গেলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিক্রেতা রওশন আরার স্বামী ও ছেলে চাঁদা দাবি করছেন।

আবদুস সাত্তার তার মামলার এজাহারে বলেছেন, গেল বছরের ২৩ মে রওশন আরা ২৩ লাখ টাকায় তার ৩ কাঠা ভিটা জমি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। এরপর জমিটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য তাকে দায়িত্ব দেন মিজানুর। তিনি তার ভাগ্নে সুমনকে নিয়ে গত ৭ জুন জমিটিতে গেলে রওশন আরার স্বামী মহিউদ্দিন ও ছেলে রাব্বী ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলেন, জমি দখলে নিতে হলে তাদের এই টাকা দিতে হবে। তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে মহিউদ্দিন ও রাব্বী জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিতে শুরু করেন। এতে বাধা দিতে গেলে পিটিয়ে সুমনের হাত ভেঙে দেয়া হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে গত ১০ জুন নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মহিউদ্দিন ও রাব্বীসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবিরও অভিযোগ আনা হয়। এরপর উল্টো তাদের ওপর হামলার অভিযোগে মহিউদ্দিনও তার এক নিকটাত্মীয়কে দিয়ে থানায় পাল্টা একটি মামলা করান।

সাত্তার বলেন, মামলাটি মিথ্যা। তাদের হেনস্থা করতে মামলাটি করা হয়েছে। তারা ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। একইসঙ্গে তাদের কেনা জমির দখল বুঝিয়ে দিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

সাত্তার জানান, চাঁদা না দিয়ে জমি দখলে নিতে গেলে তাদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এসব বিষয়ে মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে মহিউদ্দিন সব জায়গায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। অথচ তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বুধবার দুপুরে মহিউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ধরেননি। আর তার ছেলে রাব্বীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। মহিউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার কেল্লাবারুইপাড়া মহল্লায়। পরে তিনি রাজশাহী শহরে বাড়ি করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গোদাগাড়ী পৌর সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুর রশিদ বলেন, এলাকার বাসিন্দা হিসেবে মহিউদ্দিনকে চিনি। কিন্তু একাত্তরে কোথায় লড়াই করেছেন তা জানি না। তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য বছরখানেক আগে মহিউদ্দিন দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। কিন্তু তার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার বিষয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা কিছু না জানার কারণে তিনি গেজেটভুক্ত হতে পারেননি। তারপরেও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিলে সেটি অন্যায়।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আলী আরিফ বলেন, মহিউদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা জমি বিক্রি করেছেন। যারা কিনেছেন তাদের সকল কাগজপত্র আছে। কিন্তু মহিউদ্দিন ও তার ছেলে তাদের জমির দখল নিতে দিচ্ছেন না। এটা অন্যায়। তিনি পাল্টা একটা মামলা করিয়েছেন জমির ক্রেতাদের নামে।

ওসি বলেন, মহিউদ্দিন এখন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। তিনি গেজেটভুক্ত হওয়ার আবেদন করেছেন সেই কাগজ সবাইকে দেখাচ্ছেন। কিন্তু আবেদন করা মানেই তো মুক্তিযোদ্ধা নয়। গেজেটভুক্ত হতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা