বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চীন ইতিবাচক, নির্বাচিত সরকার নিয়ে আশাবাদ: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চীনের মনোভাব ইতিবাচক বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সাথে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
সোমবার (৩০ জুন) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচির। সম্প্রতি মির্জা ফকরুলের নেতৃত্বে চীন সফর করে এসেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। সেই উপলক্ষে আয়োজিত হয় সংবাদ সম্মেলনটি।
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উ;যাপিত হওয়ার কথা উল্লেখ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল এবং যা পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে আরো ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। বিএনপি প্রতিনিধিদলের সফরের প্রতিটি বৈঠকে চীনা নেতারা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে এই দুই ব্যক্তিত্বের অবদান সসম্মানে ব্যক্ত করেন।’
বৈঠকে চীনা পলিসি ব্যুরোর সদস্য শি-লি-হংসং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সাথে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে পরীক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে চীনের অবদানের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর ধারাবাহিকতায় আগামীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে।’
চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ করে তারা এর অধিকতর প্রয়োগিক দৃষ্টান্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বি্এনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায় নির্যাতিতদের পক্ষে তাদের (চীনের) অবস্থানকে বিএনপি সম্মানের সাথে অভিনন্দিত করেছে এবং এর ব্যাপকতা দৃশ্যমানতার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে চীন অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে এই বিষয়টির ওপর কাজ করছে এবং মিয়ানমার সরকারকে তারা রাজি করানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান বিএনপির মহাসচিব বলেন।
তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রয়োজনটা ব্যাখ্যা করেছি এবং তারা (চীন) এটাতে ইতিবাচকভাবে সায় দিয়েছেন। এটার ওপর তারা কাজ করছেন। আমরা ভবিষ্যতে কখনো সরকার পরিচালনার এলে সেটা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব।’
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বিএনপির প্রতিনিধিদল তিনবার চীন সফর করছেন, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চীনের মনোভাব কেমন দেখা গেছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চীন অত্যন্ত ইতিবাচক।
পার্শ্ববর্তী একটা দেশের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক রাজনৈতিক সম্পর্ক বিগত দেড় দশকে অত্যন্ত টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বটা আরো দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চীনের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে যে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখব। আমরা কিন্তু চীনের এক নীতি থেকে কখনো সরিনি, তাইওয়ানের একটা ট্রেড সেন্টার এখানে কয়েক দিনের জন্য হয়েছিল। তারপরে সেটাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধ দল চীন সফরে গিয়েছিল। দলে আরও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সাথে সফর বিনিময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্য, এরই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে বিএনপির আরও দুটি প্রতিনিধিদল চীন সফর করে।
সর্বশেষ পাঁচ দিনের সফরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে মতবিনিময় হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল। তাদের মধ্যে আছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার সান হাইয়ান।
(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/মোআ)

মন্তব্য করুন