বন্যায় ভেসে যাচ্ছে পাট চাষীদের স্বপ্ন

তামিম ইসমাইল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ জুলাই ২০২০, ১০:১৯ | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০২০, ১০:১৮

পাট চাষের জন্য ফাল্গুন মাসের বৃষ্টি কৃষকদের জন্য খুবই কাঙ্খিত। এছাড়াও আদ্রতা, গরম এবং হালকা বৃষ্টিপাত চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এবছর বেখেয়ালি প্রকৃতি ফাল্গুন মাসে বৃষ্টি ঝড়ায়নি। ফলে পাটের বীজ বুনতে বিলম্ব হয়। কেউবা কৃত্রিমভাবে জমিতে সেচ দিয়ে বীজ বুনেছিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। হঠাৎ করে বন্যার পানি ফসলের ক্ষেত্রে উঠে আসলে পাট কাটা, জাগ দেয়া, এবং পচানো পাট পরিস্কার করা নিয়ে বিপাকে কৃষক।

উপজেলার হাজি কান্দি গ্রামের পাট চাষী মিল্টন জঙ্গি বলেন, ‘এবার ফাল্গুন মাসে সময়মতো বৃষ্টি হয়নি। ফলে বীজ বুনতে দেরি হয়। এতে করে পাটও খুব বেশি বাড়েনি। যখন বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল না তখনই বৃষ্টি হয়েছে। পাট কাটার সময়ে হঠাৎ করে বন্যার পানিতে জমি তলিয়ে গেছে। এখন পাট নিয়ে আছি অসুবিধায়।’

উপজেলার পাটের জন্য সর্ববৃহৎ বাজার মাদবরচর হাট ঘুরে জানা যায়, বিরূপ আবহাওয়ায় পাটের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এতে কৃষকের নিচু জমিতে পাট ভালো হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দর প্রতি মনে দুই একশ টাকা করে বেশি হলেও এতে কৃষকের খরচের টাকা ওঠার আশা করা যায় না।

অনেক কৃষক পাটের প্রতি অভিমান করে কৃষি কাজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুধু এ বছর নয়, গত দুই তিন বছর ধরেই পাটের বাজারে মন্দা। ফলে পাট চাষ করতে সার, কীটনাশক, কৃত্রিম সেচ, পাটের পরিচর্যায় শ্রমিকের খরচ সহ পাটের পিছনে কৃষকদের মূল পুঁজি হাতে আসে না। এতে কৃষকরা পাট চাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।

কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ হাওলাদার বলেন, বাজারে বর্তমানে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা প্রতি মন পাটের দর রয়েছে। পাট কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও অনেক পাট জাগে রয়েছে। এখনো বাজারে সব পাট আসেনি। যদি আসে তাহলে পাটের দর কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দেশে নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা গুলোর মধ্যে শিবচর অন্যতম। মানুষের ঘরবাড়ি সহ আবাদি জমিও ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে এ স্বার্থপর পদ্মা। ভাঙ্গন কবলিত বাদশাহ শেখ নামের এক চাষী বলেন, আমি বেশ কয়েক বিঘা পাট বপন করছিলাম। পদ্মায় তা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। অল্প কিছু আছে, তাও বন্যার পানির জন্য মজুর পাওয়া যায় না, দিন মজুর পাওয়া গেলেও টাকা বেশি চায়'।

শুধু ভাঙ্গনে নয়, বন্যার পানি নিয়েও নানান বিপাকে পড়েছেন শিবচরের কৃষকরা। বন্যার অতিরিক্ত পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পাটের জাগ।

কুতুবপুর ইউনিয়নের কৃষক জসিম বলেন, 'পাটের জাগ বন্যার পানিতে কোথায় যেন ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঋণের টাকায় পাট চাষ করেছি। জাগ না পেলে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা আমার ভাত খাওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে'।

শিবচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিবচরে অন্তত সহস্রাধিক কৃষক পাট চাষের সাথে জড়িত। চলতি বছর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও যার মধ্যে উপজেলায় প্রায় ১৩ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাটের চাষ করা হয়েছে।

শিবচর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অনুপম ঢাকা টাইমসকে বলেন, এ বছর পাটের দর গতবারের তুলনায় প্রতি মনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বেশি। আমরা কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার পরেও বিরূপ আবহাওয়ায় পাট ভালো হয়নি। বন্যায় আরো বেশি সমস্যা করে দিলো।

(ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :