ফেসবুক পেজে বার্তা পেয়ে ৪ ধর্ষককে ধরল পুলিশ
ছোটবেলায় মায়ের মৃত্যুর পর মেয়েটির বাবা আবারও বিয়ে করেন। বাবার সেই সংসারে ঠাঁই হয়নি মেয়েটির। এরপর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় দাদির সঙ্গে থাকেন। কিন্তু আর্থিক অনটন থাকায় দাদির সংসার চলছিল অনেক কষ্টে। উপায় না পেয়ে এক বান্ধবীর আশ্বাসে সিরাজগঞ্জে রায়পুরের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। বান্ধবীর কাছে পৌঁছার আগে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার হন আনুমানিক ১৭ বছর বয়সী তরুণীটি।
বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে বার্তা আসার পর ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার রাতে টাঙ্গাইলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (জনসংযোগ ও গণমাধ্যম) সোহেল রানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. লালন, মো. রাসেল, মো. সুমন এবং মো. রিপন।
পুলিশের পক্ষ পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বান্ধবীর আশ্বাসে চাকরি পেতে বাড়ি থেকে কালিহাতির উদ্দেশে রওনা হন ওই তরুণী। কিন্তু করোনায় যাতায়াতের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় ভেঙে ভেঙে যান তিনি। যাত্রাপথে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত আসতে তার সন্ধ্যা হয়। একাকী কি করবে, কোথায় যাবে ভেবে পাচ্ছিল না মেয়েটি। রেলস্টেশনে একা দাঁড়িয়ে থাকে। খুঁজতে থাকে সিরাজগঞ্জ যাওয়ার উপায় অথবা নিরাপদে রাতটা পার করার কোনো আশ্রয়। এ সময় স্টেশনের পাশে থাকা এক লেগুনা চালক এগিয়ে আসে তার দিকে। আশ্বাস দেয় মেয়েটিকে সিরাজগঞ্জ পৌঁছে দেয়ার। পথেই ওই চালকের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকজন যুবক। তারা মেয়েটিকে নিয়ে হাতিয়া ও শল্লার মাঝামাঝি ছোট বটতলা গ্রামের দিকে চলে যায়। সেখানে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ধানক্ষেতে তাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। এরপর দলবেঁধে ধর্ষণ করে ভোরে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয়।
গত ৬মের ওই ঘটনাটি জানতে পেরে এক ব্যক্তি বার্তা পাঠান বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে। বার্তাটি পাওয়ার পর গতকাল বুধবার কালিহাতির ওসি সওগাতুল আলমকে বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে মেয়েটি ও তার ধর্ষকদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয় মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং। ওসি কালিহাতির তৎপরতায় ইন্সপেক্টর তদন্ত রাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে, এসআই রাজু আহমেদ এবং এএসআই তৈয়ব আলীসহ পুলিশের একটি টিম তদন্তে নেমে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশেষ ক্লু না থাকায় তদন্তে প্রথমে বেগ পেতে হলেও শেষমেষ মেয়েটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খুঁজে পায় দাদির ঠিকানা। সেখানেই পাওয়া যায় ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় কালিহাতিতে।
মেয়েটির বর্ণনা ও দেয়া তথ্যমতে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। এরপর গতরাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মেয়েটি বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন। তাকে পুনর্বাসনের জন্য চেষ্টাও করছে পুলিশ।
ঢাকাটাইমস/১৩মে/এএ/এমআর