কুষ্টিয়ায় প্রকৌশলীর স্ত্রী হত্যা মামলা তদন্তে ধীরগতির অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ মে ২০২২, ১৯:০৮

কুষ্টিয়া শহরের হাউজিংয়ে শেফালী রানী বিশ্বাস (৫৫) নামে এক প্রকৌশলীর স্ত্রীকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যত কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এই নারী হত্যার ঘটনা বৃত্তের পরিসর খুব ছোট বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্মকর্তারা মনে করলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এখনো এর রহস্য উদঘাটনে কোনো দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি বলে মামলার বাদীর অভিযোগ। তবে এই মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সাহেব আলীর দাবি, “শেফালী বিশ্বাস হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে আইনগত সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ করছি।’ তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।”

মামলায় বাদীর এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখ বেলা সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ডি ব্লক ২৭৫ নং ৪ তলা ভবনের ২য় তলার বাসিন্দা আনন্দ কুমার বিশ্বাস নামের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর স্ত্রী শেফালী বিশ্বাস। তার মরদেহের সুরতহাল ও প্রত্যক্ষদর্শীর দেয়া তথ্য মতে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম, গলায় ফাঁস ও পরনের কাপড়ে আগুন সংযুক্ত অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল ৫টায় শেফালী বিশ্বাসকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মৃত্যুর দুইদিন পর নিহতের ছোট ভাই মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত রনজিৎ বিশ্বাসের ছেলে দীপক বিশ্বাস বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অজ্ঞাত নামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

এজাহারে বাদী বলেন, ঘটনার দিন সকাল থেকে ওই বাড়ির ৪র্থ তলায় ঢালাইয়ের কাজ চলছিল এবং বাড়ির মালিক আনন্দ কুমার বিশ্বাস ঘটনার সময় ৪র্থ তলায় মিস্ত্রিদের সঙ্গে অবস্থান করছিল। আনন্দ কুমার ২টার দিকে স্ত্রী শেফালী বিশ্বাসের সঙ্গে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন এবং ৩টার দিকে মিস্ত্রিদের কাজ দেখতে আবারো ৪র্থ তলায় ওঠেন। ঢালাইয়ের মালামাল শেষ হয়ে যাওয়ায় বেলা ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে মিস্ত্রির লোকজন নিচ তলার স্টোররুমে নামার সময় দোতলার ড্রয়িং রুম থেকে ধোঁয়া বেরুতে দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। চিৎকার শুনে ৪র্থ তলা থেকে গৃহকর্তা আনন্দ কুমার ২য় তলায় নেমে আসেন। এ সময় ঘরের মধ্যে ডাইনিং স্পেসের মেঝের ওপর শেফালী বিশ্বাসকে অচেতন ও পরিধেয় কাপড়ে অগ্নিসংযুক্ত থাকায় ধোঁয়া বের হতে দেখতে পান।

ঘটনার সময় সেখানে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে পাশের বাড়ির বাসিন্দা একজন শিক্ষিকা ছুটে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। তিনি জানান, ‘মৃতের গলায় ও চোখের ওপর রক্তাক্ত জখম ছিল। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল। সেটা এতটাই টাইট ছিল যে সেটা খুলতে একজন মিস্ত্রির সাহায্য নেয়া হয়েছিল।’

ঘটনাস্থল সংলগ্ন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কার্যালয়। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সেখানে তাৎক্ষণিক ছুটে গিয়েছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান,‘ওই দিন ছাদ ঢালাইয়ের কাজে মিস্ত্রি কর্মচারী ও বাড়ির মালিকসহ ওই বাড়িতে ঘটনার সময় ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। এসময় বাড়ির মালিক নিহত শেফালী বিশ্বাসের স্বামী আনন্দ কুমার বিশ্বাস ছিলেন ৪র্থ তলায়। দুপুর ২টায় স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান। ৩টার দিকে আনন্দ কুমার আবারো কাজ দেখতে ৪র্থ তলায় ওঠেন। ৩টা ২৫ মিনেটের দিকে মিস্ত্রির লোকজন দোতালায় ধোঁয়া দেখতে পায়। মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় পেয়েছে খুনী। এরই মধ্যে বাসায় প্রবেশ করে আঘাত করা, গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো, হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া ও আলামত নষ্টের চেষ্টায় ভিকটিমের শাড়ীতে আগুন লাগলো এবং লকার খুলে অর্থ ও সোনা লুটের ঘটনাটিও সাজানো। এত অল্প সময়ে বাড়ির বাহির থেকে এসে এত কিছু করা অপরিচিত এক বা একাধিক অপরাধীর পক্ষে অসম্ভব। অবস্থা পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, খুনের ঘটনা অত্যন্ত পরিকল্পিত। সময়মত নিরাপদে এসব কাজ করার জন্য ঐ বাড়িতেই খুনি চক্রে জড়িতরা অবস্থান করছিল এবং সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান প্রদান করছিলো। শাড়ীতে আগুন ধরিয়ে নিহতের শরীরে যে জায়গায় অগ্নিদগ্ধ হয়েছে তাতে মৃত্যু কোন কারণ বলা যায় না। বরং ঘটনাটি ভিন্ন খাতে মোড় ঘোড়ানোর চেষ্টাই প্রমান করে পরিচিত আপনজনেরাই এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে সন্দেহের শীর্ষে রয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার (ওসি) ছাব্বিরুল আলম বলেন, “শেফালী বিশ^াস হত্যা মামলাটি খুব নিবির ভাবেই পর্যবেক্ষন করছে পুলিশ। মোটামুটি একটা ধারণা পরিস্কার হয়ে গেছে পুলিশের কাছে। যে কোন সময় আমরা এই মামলার দৃশ্যত: অগ্রগতি দেখাতে পারবো। শেফালী হত্যার ঘটনায় পরিবারের কেউ তো মামলাই করতে আগ্রহী হচ্ছিল না। শেষমেশ পুলিশ নিহতের ভাই দীপককে বাদী করে মামলাটি করিয়েছেন বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

নিহতের স্বামী বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)র অবসর প্রাপ্ত প্রকৌশলী আনন্দ কুমার বিশ্বাস তার নিজ নামে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরাদ্দকৃত প্লটটিতে ২০১৫ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন। তাদের একমাত্র কন্যা ঋতুপর্না তার স্বামীর বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ায় বসবাস করেন।

(ঢাকাটাইমস/০৯মে/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :