উপজেলা নির্বাচন
আঁর প্রার্থীরে ভোট ন দিলে কেন্দ্রে আইয়েন না: কাদের মির্জা
চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসার দরকার নেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার ২ নম্বর চরপার্বতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুলের সমর্থনে নির্বাচনি কর্মী সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এ সময় মঞ্চে চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুলও কাদের মির্জার পাশে বসা ছিলেন। কাদের মির্জার এই বক্তব্যের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওটি ঢাকা টাইমসের হাতে এসেছে। ইতোমধ্যেই এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে কাদের মির্জাকে বলতে শোনা যায়, ‘অন কোম্পানীগঞ্জে মারামারি হানাহানি আছেনি? এটা কার কারণে। স্বীকার করেননি? তো সামনের মুইঅ ভোট দেন ন দেন, আর ন দিলে এক্কান কাম করিয়েন, হুদাহুদি কষ্ট করি কেন্দ্রে আইয়েন না। বাড়িত হুতি ঘুম যাইয়েন। তাইলে পরে নিরাপদে আর বাকি পাঁচটা বছর খাইতে পারবেন। আঁর সোজাসুজি কতা। আঁই বেঁয়া-টেঁয়া কতা কই না। পরে ভেজাল বাজি যাইবো। কি কইছি বুইজ্জেননি। এন্নে ভালা আছেন। ভোটের হরে কেঅ কেঅরে থাবা এগ্গা দিছেনি? বিএনপি জমাতের বিরুদ্ধে কোনো মামলা অইছেনি। আমনেরা সাক্ষী থান। ভোট যদি আঙ্গো তিনজনরে (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান) দেন তা অইলে আঁই, ন অইলে ইয়ার হরে ঝামিলা অইলে আঁই বাবুরে দায়িত্ব নিতে হাইত্তান ন।’
তার এমন বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে কাদের মির্জার এমন হুঁশিয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্য প্রার্থীরা।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তাই প্রার্থী হয়েছি। কিন্তু উনার (কাদের মির্জা) এমন হুমকি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে না। এতে করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। দেশের মানুষ দেখবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল না।’
কাদের মির্জার এ বক্তব্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বাদল। একই সঙ্গে প্রচার প্রচারণায় সুষ্ঠু পরিবেশের নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।
সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাদের মির্জার সমর্থিত প্রার্থী বিপুল সংখ্যক ভোটে হেরে যাবেন। এ ভয়ে তিনি ক্ষমতা ব্যবহার করে সাধারণ ভোটারদেরকে হুমকি দিচ্ছেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয় ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৩ মে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উন্মুক্ত থাকায় সেতুমন্ত্রীর ভাইসহ চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা হলেন- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল, সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও কাদের মির্জা সমর্থিত গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল ও আমেরিকা প্রবাসী ওমর আলী। কিন্তু যাচাই বাছাইকালে সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই শাহাদাত হোসেনের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, কাদের মির্জা দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে তার প্রার্থী পিপুল চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। এজন্য হুমকিও দিচ্ছেন সাধারণ ভোটারদেরকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন পাটওয়ারী বলেন, আমি বিষয়টি মাত্র শুনেছি। খতিয়ে দেখবো। তাছাড়া কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/১০মে/পিএস/কেএম)