গার্ডারচাপায় মর্মান্তিক মৃত্যু: রুবেলের লাশের দাবি ছয় স্ত্রীর!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৫

রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডারচাপায় নিহত পাঁচজনের একজন রুবেল মিয়া। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ছয়জন নারী নিজেদের রুবেলের স্ত্রী দাবি করে তার মরদেহ নিয়ে যেতে চান। এছাড়াও রুবেলের আরেক স্ত্রীর ছেলে দাবি করে মরদেহ নিতে চান এক যুবক। এতে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সময় এ চিত্র দেখা যায়।

সোমবার দুপুরে ছেলে হৃদয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে নববধূসহ পরিবারের সাতজনকে নিয়ে আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন রুবেল মিয়া। তিনি নিজেই তার প্রাইভেটকারে চালকের আসনে ছিলেন।

রাজধানীর উত্তরা জসিমউদ্দিন সড়ক পার হওয়ার সময় বিআরটি'র এলিভেটেড এক্সপ্রেসের ক্রেন উল্টে একটি গার্ডার প্রাইভেটকারটির ওপরে পড়ে। যেটির ওজন প্রায় ৭০ টন। এতে নবদম্পতি বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলে রুবেলসহ মারা যান পাঁচজন। চারঘন্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিস গার্ডার সরিয়ে গাড়ি থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।

এদিন রাত দশটার দিকে পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। মঙ্গলবার দুপুরে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সেখানে নিহত স্বজনদের মরদেহ নিতে ভিড় করে স্বজনরা।

এসময় রুবেলের মরদেহ নিতে একে একে হাজির হন ছয় নারী। তারা নিজেদের রুবেলের স্ত্রী দাবি করেন। হৃদয় নামে এক যুবকও এসে নিজেকে রুবেলের মৃত স্ত্রীর সন্তান দাবি করে মরদেহ নিতে চান। আগত নারীরা বলছিলেন তারা কেউই জানতেন না রুবেলের আরও স্ত্রী আছে। এর বাইরেও তার স্ত্রী আছে কি না তার প্রতিবেদক নিশ্চিত হতে পারেনি।

জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি সংসারেই রুবেলের সন্তান আছে। সবশেষ গাড়িতে থাকা হৃদয়ের কাছেই তার বাবার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তিনি (হৃদয়) মরদেহ নিয়ে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে গ্রামের বাড়িতে রওনা হয়েছেন।

নিহত রুবেলের স্ত্রী দাবি করা নারীরা হলেন, নার্গিস বেগম, পাতা খন্দকার, রেহানা, শাহেদা, সালমা আক্তার পুতুল, তসলিমা আক্তার লতা। আর মেয়ে দাবি করা একজন তার নাম ও মায়ের নাম বলতে চাননি। তবে তিনি দাবি করেন, 'তার জন্মের পরপরই তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর অনেক চেষ্টা করেছেন বাবার সহযোগিতা পাওয়ার। কিন্তু সেটা পাননি। পরে তিনি সৌদি আরবে চলে যান। সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন। সোমবার ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আজ এসেছেন শেষবারের মতো দেখতে।'

জানা গেছে, ২০১৪ সালে স্ত্রী মারা গেছে দাবি করে সালমা আক্তার পুতুল নামে এক নারীকে বিয়ে করেন রুবেল। যদিও সেটা কাজী রেজিস্ট্রার ছিল না। পুতুল জানান, তার আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর রুবেলের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। সপ্তাহে সপ্তাহে তিনি তার বাড়িতে থাকতেন। ২০২১ সালে এসে তিনি (পুতুল) জানতে পারেন, রুবেলের অর্ধডজনের বেশি বউ আছে। তখন দু'জনের মধ্যে অনেক রাগারাগি হয়। পরে আদালতে মামলা ঠুকে দেন। বর্তমানে সেটি বিচারাধীন রয়েছে।

পুতুল দাবি করেন, রুবেল তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সেসব টাকা আর ফেরত দেননি। রুবেলের সম্পর্কে তিনি জানতেন, সে একজন ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী।

এদিকে ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে রুবেলের আরেক স্ত্রীর সন্ধান পাওয়া যায়। তার নাম টিপু আক্তার। যদিও তিনি সন্তান প্রস্রবের সময় মারা যান। সেই ঘরেও একটি সন্তান আছে। যিনি বাবার মরদেহ দেখতে এসেছেন।

গার্ডার চাপা পড়ে নিহত রুবেলের প্রথম স্ত্রী রেহানার সঙ্গে বিয়ে হয় ৩০ বছর আগে। সেই ঘরে প্রথম ছেলে সন্তান হৃদয় সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরেন।

প্রথম স্ত্রী রেহানার বোনজামাই ও রুবেলের ভায়রা রহমত বলেন, 'আমরা শরীয়তপুরে থাকি। রুবেল ভাই বায়িং হাউজের ব্যবসা করতেন বলে জানতাম। তেমন একটা ঢাকায় আসতাম না। মৃত্যুর খবর শুনে আসলাম। শুনেছিলাম সে দ্বিতীয় আরেকটা বিয়ে করেছেন। কিন্তু এখন দেখি তিনি অনেক বিয়ে করেছিলেন।'

রুবেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম শাহেদা বলে জানা যায়। তার ঘরে রত্না নামে ১৪ বছরের একটি মেয়ে আছে। তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায়। থাকেন ঢাকার উত্তরা এলাকায়। এই সংসারে তার স্ত্রীর আগের পক্ষের একটি ছেলে আছে। শাহেদা নিজেকে রুবেলের প্রথম স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, 'আমার সঙ্গে ১৯৯৯ সালে বিয়ে হয়েছে। আমিই প্রথম। আমাকে সে কখনো বলেনি তার আরো স্ত্রী আছে।'

প্রথম স্ত্রীর আত্মীয় রহমত বলেন, 'দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার একটি মেয়ে হয়েছে শুনেছিলাম। সেই স্ত্রীর আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরের একটা ছেলেও আছে। ছেলেসহ রুবেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল।

তাসলিমা আক্তার লতা নামে আরেক নিজেকে নারী রুবেলের স্ত্রী দাবি করেছেন, যাকে রুবেল বিয়ে করেন ২০২০ সালের দিকে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এমনটা জানান পাতা খন্দকারের ভাগিনা। তিনি বলেন, তার খালাকে বিয়ে করার আগে ডিবি কর্মকর্তা পরিচয়ে দেয়া হয়।

তাসলিমা আক্তার লতা বলেন, 'আমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে অনেক দিন আগে। তবে কবে হয়েছে স্পষ্ট জানাতে পারেননি। তার দাবি তিনিই দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তাকে বিয়ে করা হয়।'

রহস্যঘেরা এই পুরুষের আরেক স্ত্রী পাতা খন্দকার দাবি করেন, 'তিনি এ পর্যন্ত রুবেলের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন। যে গাড়িটি চাপা পড়ে দুমড়েমুচড়ে গেছে, সেটিও কেনার সময় ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন রুবেলকে। মারা যাওয়ার আগেও তার বাসায় গিয়েছিলেন রুবেল। তার সঙ্গে সবারই ভালো সম্পর্ক। প্রথম স্ত্রীর বাড়িতেও তিনি যাতায়াত করতেন বলে দাবি করেন তিনি।'

এদিকে প্রথম স্ত্রীর ছেলে সন্তান হৃদয় বলেন, 'তার জন্ম ১৯৯৫ সালে। অন্যদিকে তা মা শাহেদার সঙ্গে তার বাবার বিয়ে হয় ১৯৯৯ সালে। শাহেদা জানতেন না তার বাবার আরেক স্ত্রী আগে ছিল। এজন্য তিনি নিজেকে প্রথম স্ত্রী দাবি করছেন।'

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এসএস/কেআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

রাজধানীতে ট্রেনের ধাক্কায় সদ্য এসএসসি পাস শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ঢামেক হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারের সামনে এসির কম্প্রেসর!

রাজধানীতে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পরিদর্শনে মেয়রদের সংগঠন ‘সি৪০ সিটিজ’

নগরবাসীর আস্থা-বিশ্বাসই আমার কাজের শক্তি: মেয়র আতিক

২০৫০ সালের মধ্যে ঢাকার কার্বন নিঃসরণ কমানো হবে ৭০ ভাগ

দাবি না মানলে আমরণ অনশন: হুঁশিয়ারি শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদের

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিশুদের মাঝে ১০ হাজার গাছ বিতরণ বাবুল্যান্ড ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডের

বন্যহাতির পায়ে পিষ্টে মৃত বাংলাদেশিদের ক্ষতিপূরণের দাবি

নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজধানীতে দুই ঘণ্টায় ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি, সড়কে ভোগান্তি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :