সিপিডির তথ্য
বছরে ৩ লাখ কোটি টাকা কর ফাঁকি

দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত কর ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। করপোরেট ও ব্যক্তিপর্যায়সহ নানা খাতে ঘটছে কর ফাঁকির ঘটনা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে করের আওতা বৃদ্ধি ও কর অব্যাহতি দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শও দিয়েছে সিপিডি।
সোমবার ‘করপোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা এবং জাতীয় রাজস্ব ও বাজেটে এর কী প্রভাব পড়তে পারে’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব তথ্য তুলে ধরেন।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশের করপোরেট এবং ব্যক্তিখাত ছাড়াও অন্যান্য খাতে কর ফাঁকি ও কর এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আর্থিক অঙ্কে এর পরিমাণ ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যা আদায় করতে পারলে বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৮ গুণ এবং স্বাস্থ্য খাতে দ্বিগুণ বরাদ্দ রাখা সম্ভব।
কর অব্যাহতির নির্দিষ্ট সময় ও লক্ষ্য, আর্থিক খাতের সমন্বিত লেনদেন, ডিজিটালাইজেশন ও ইন্টারনেটভিত্তিক ট্রানজেকশন ও কর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলক সাস্টেইনেবল রিপোর্টিংয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন গোলাম মোয়াজ্জেম।
ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের ২০২২ সালের রিপোর্ট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার কর ক্ষতি হচ্ছে শুধু কর ফাঁকি এবং কর এড়ানোতে। এর মধ্যে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে হচ্ছে ৩১২ বিলিয়ন ডলার। ব্যক্তি পর্যায়ে সম্পদশালীদের মাধ্যমে হচ্ছে ১৭১ কোটি ডলার। কিন্তু এর মাধ্যমে অভিঘাত পড়ে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর ওপর। এ কারণে স্বাস্থ্য খাতের ৪৮ শতাংশ বাজেট কমে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক পর্যায়ে করপোরেট করহার কমে আসছে। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে বেড়েছে। করপোরেট করহার কমিয়ে করজাল বাড়িয়ে কর আদায় করা দরকার। করহার বাড়ানোর ফলে প্রচুর কালো টাকা থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের করপোরেট করহার দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে সর্বোচ্চ। কিন্তু কর-জিডিপি অনুপাত আফগানিস্তানের পরে সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশ। পারসোনাল ও সেলস ট্যাক্স কম না, কিন্তু সেটা আমরা নিতে পারছি না। উচ্চ করহার প্রদান করেছি ঠিকই, কিন্তু তার যে সুফল সেটা আমরা ভোগ করতে পারছি না। আবার কর কমিয়ে দিলেও রাজস্ব বাড়ে, সেটারও নিশ্চয়তা নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় কর-জিডিপি অনুপাত এবং করহারের মধ্যে ফারাকটা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। এর প্রধান কারণ কর কাঠামোর দুর্বলতা।’
সিপিডির গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে, বাংলাদেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার ৩০ শতাংশ। অথচ কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত বড় হলেই কর আদায় কম হবে, তা নয়। ব্রাজিলের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার ৩৩ শতাংশ। কিন্তু তার কর-জিডিপি অনুপাত ৩২ শতাংশ।
অন্যদিকে চীনের জিডিপিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু দেশটির কর জিডিপি অনুপাত ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থাকলেও যদি কর প্রশাসন শক্তিশালী হয়, সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি শক্তিশালী হয়, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং যদি মজবুত হয়, তাহলে কর আদায় বাড়ানো সম্ভব।
ঢাকাটাইমস/০৩এপ্রিল/আরকেএইচ

মন্তব্য করুন