রশির সূত্র ধরে উদঘাটিত সেই শিমু হত্যার বিচার কবে

আশিক আহমেদ, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৮ মে ২০২৩, ১৭:৩৭ | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২৩, ১৭:০৭

চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর লাশ উদ্ধার হয় ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি রশির সূত্র ধরেই তারা খুনিদের সন্ধান পেয়েছেন। আর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই মামলার তদন্ত শেষ করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ১৫ মে এই মামলায় দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসা দুই গৃহকর্মীকে যাতায়াত খরচ দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। তখন আদালত বলেছিলেন এর পরের বার সাক্ষ্য দিতে আসার সময় তাদেরকে যাতায়াত খরচ বাবদ এক হাজার টাকা করে দিতে হবে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই গৃহকর্মী শান্তা বেগম ও আমেনা বেগম আদালতে এসে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ার সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই মামলায় আগামী ১৫ মে আদালতে স্বাক্ষ্য দেওয়ার তারিখ রয়েছে। ওইদিন আদালতে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষ্য দেবেন। যারা ১৬৪ ধারায় এবং ১৬১ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি নিয়েছিলেন।

চাঞ্চল্যকর এই মামলায় আসামিরা হলেন, শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও এস এম ফরহাদ। ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেরাণীগঞ্জ থানার পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণের পর তা ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য হাকিম রাজিব হাসান। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন ৪০ বছর বয়সী শিমু। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি তিনি। তার সন্ধানে পরদিন কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্বামী নোবেল।

পরের দিন দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তা থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ওই লাশ শিমুর বলে শনাক্ত করেন তার বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন।

মামলা হওয়ার পর ওই রাতেই নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু ফরহাদকে আটক করে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তাদের আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে ২০ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশের ভাষ্য, “পারিবারিক বিষয়াদি ও দাম্পত্য কলহের’ কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে শিমুর স্বামী নোবেল ও লাশটি গুম করতে সহায়তা করেছে নোবেলের বন্ধু ফরহাদ।

কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে ১৯৯৮ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে শিমুর। পরের বছরগুলোতে দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, চাষি নজরুল ইসলাম, শরিফ উদ্দিন খান দিপুসহ আরও বেশ কিছু পরিচালকের প্রায় ২৫ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাকে। শাকিব খান, অমিত হাসানসহ কয়েকজন তারকার সঙ্গেও কাজ করেছেন। শিমু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় এবং প্রযোজনাও করেছেন।

ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি ঢাকার তৎকালীন পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ডের রহস্য প্লাস্টিকের একটি সুতোর সূত্র ধরে উদঘাটন করা হয়। অভিনেত্রীকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্বামী এবং গুম করতে সহায়তার অভিযোগে স্বামীর একজন বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এই পুলিশ করর্মকর্তা বলেন, শিমুর লাশ শনাক্তের পর ওইদিন রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তার স্বামী এবং স্বামীর একজন বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সেখানে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও প্রাথমিকভাবে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় এই ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বাংলাদেশ পুলিশের নিউজ ওয়েবসাইটে হত্যাকাণ্ড, লাশ গুমের চেষ্টা ও হত্যা রহস্য উদঘাটনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে।

যেভাবে হত্যাকারীকে শনাক্ত করল পুলিশ

পুলিশ নিউজ নামের ওয়েবপোর্টালে বলা হয়েছে, পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যা-রহস্য উদঘাটন করেছে প্লাস্টিকের একটি সুতোর সূত্র ধরে। সেখানে বলা হয়েছে, মৃতদেহ শনাক্তের পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করার পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। শিমুর লাশ গুম করতে দুটো বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই একটি বান্ডিল শিমুর স্বামীর গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল বলেও পুলিশ দেখতে পায়। তখন অভিনেত্রী শিমুর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। সেই জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। তখন গুমের চেষ্টায় সহযোগিতার অভিযোগে তার বন্ধুকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যা গুমের চেষ্টা

সেই জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ নিউজে বলা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী শিমুকে হত্যা করেছে। ১৬ই জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে ৮টার দিকে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর তার বন্ধুকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে আনেন তিনি।

লাশ গুমের বিষয়ে পুলিশের ওয়েবসাইটে বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে— তারা দুজন পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথমে তারা মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে তাঁরা আবার বাসায় ফেরেন। ওইদিন সন্ধ্যায় আবার তাঁরা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। তখন রাত সাড়ে নয়টা।

দুই সন্তানের মা শিমুর ছিল 'প্রেমের বিয়ে

নিহত শিমুর বোন ফাতিমা নিশার দাবি ‘কেন কে আমার বোনকে হত্যা করেছে, আমরা এখনো বুঝতেই পারছি না। আমার বোন জামাইয়ের সঙ্গে বোনের তেমন কোনো কলহ ছিল না। তাদের ১৮ বছরের সংসার, তারা লাভ ম্যারেজ করেছিল। তবে যেই হত্যা করুক, আমরা চাই সঠিক বিচার হোক।’

(ঢাকাটাইমস/০৮মে/এএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :