সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, দুর্দিন দেখছেন পটুয়াখালীর জেলেরা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
  প্রকাশিত : ১৯ মে ২০২৪, ২০:৩৮| আপডেট : ১৯ মে ২০২৪, ২০:৪৮
অ- অ+

প্রতি বছরের ন্যায়ে এবারও দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজননে আজ মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য বিভাগ।

সোমবার ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই মঙ্গলবার পর্যন্ত সকল ধরনের মাছ শিকারে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার ফলে সমুদ্রগামী জেলেদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।

মৎস্য বিভাগের দেয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের বংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।

পটুয়াখালীর মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর সরেজমিনে জেলেরা জানান, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় লাখো জেলে ও ব্যবসায়ীর মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। জেলেরা যে সরকারি প্রণোদনা পান তা অপ্রতুল। ফলে তাদের জীবন কাটে চরম দুর্দশা এবং হতাশায়। মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিল ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ না হতেই আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপকূলীয় জেলেরা। এই ১৪৭ দিন ছাড়াও ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকারের উপরেও রয়েছে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা। ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞার ফলে বছরে অল্প যে সময় মাছ শিকারে পাচ্ছেন তা থেকে নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরছেই না, বরং ঋণগ্রস্ত রয়েছে অধিকাংশ জেলেরা বলে জানা যায়।

জেলে জালাল মাঝি বলেন, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৮০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৬৫ দিনের অবরোধ, এই ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা ঋণের বোঝা আরো বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, অবরোধকালীন সময়ে প্রতিবছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করলেও রোধকল্পে প্রশাসনের তৎপরতা দেখি না।

আরেক মাঝি গনি মুন্সী বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধকালে আমরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও পার্শ্ববর্তী ভারতীয় জেলেরা আমাদের দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে। কিন্তু সরকার এখনো এর কোনো প্রতিকার করতে পারলো না। আমাদের দাবি, এই সময়ে আমাদেরও মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করত: নয়তো অবৈধভাবে ভারতীয় জেলে ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ বন্ধ করা হোক।

ভাইভাই ফিসের পরিচালক শাহআলম হাওলাদার জানান, পটুয়াখালী জেলার সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দুবার নিষেধাজ্ঞা, বৈরী আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।

ট্রলার মালিক ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা দাদন নিয়ে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। ২ বছরে এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। এর উপর আবার অবরোধ, এখন এই পেশায় টিকে থাকা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জেলেদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে।

তিনি আরো বলেন, মূলত দুটি কারণে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রজনন সুবিধায় যাতে মাছ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে। আর অপরটি হলো-ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। যার জন্য বর্তমানে বড় আকারের ইলিশ জেলেদের জালে বেশি ধরা পড়ছে। বরাবরের মতো মৎস্য বিভাগের দেয়া অবরোধ ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করছি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

(ঢাকা টাইমস/১৯মে/এসএ)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কাজী নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ ভূষিত করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন 
ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রিজাইডিং অফিসারকে লাঞ্ছিতের মামলায় শাহিন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা