ডিএসসিসির উচ্ছেদ কার্যক্রম

হাইকোর্টের রুল নিষ্পত্তি ছাড়াই কামরাঙ্গীরচরে বসানো হচ্ছে সীমানা পিলার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ২১:৩৪ | প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২৩, ২১:১৪

বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের সরকারি খাল উদ্ধারে কোনো নোটিস ছাড়াই ব্যক্তিমালিকানাধীন রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি, বাড়িরঘর, কারখানা কেন অধিগ্রহণ করা হবে তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ভুক্তভোগীদের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই রুল জারি করেন।

একই সঙ্গে ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম আইন ২০১৭’ অনুসরণ ছাড়াই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া কেন অবৈধ হস্তক্ষেপ হবে না, চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান, ভূমি সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে।

তবে আদালতের এই রুল জারির পর কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব ও পশ্চিম রসুলপুর এলাকার স্থাপনা উচ্ছেদ বন্ধ রাখলেও গত দুদিন ধরে সেখানে সীমানা পিলার স্থাপন করছে ডিএসসিসি।

এ বিষয়ে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ফুয়াদ হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, রুলটি পেইন্ডিং আছে। বিবাদীদের জবাব দিতে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছেন আদালত। এরপর ফের শুনানি হবে। রুল জারির পরও বিবাদীদের রুলবিরোধী কর্মকান্ডের বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরা হবে।

তিনি বলেন, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট স্থানে ডিএসসিসি কোনো ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে না। করলে তা অবৈধ ও বেআইনি হবে।

ওই আইনজীবী বলেন, কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব ও পশ্চিম রসুলপুর এলাকার ভুক্তভোগীদের পক্ষে আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। শুনানী শেষে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্লাহ’র বেঞ্চ গত ১২ মার্চ রুল জারি করেন।

তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, ডিএসসিসির স্থানীয় ৫৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত থেকে লেবারদের দিয়ে সীমানা পিলার স্থাপন করছেন। তিনি আদালতের রুলের কথা আমলেই নিতে চান না।

হাইকোর্টের রুল থাকার পরও অধিগ্রহণ কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কালুনগরের মাথায় যে ১২তলা বিল্ডিংয়ের মালিকও হাইকোর্টে রুল করছিল। আমরা তা (বিল্ডিং) ভেঙে অর্ধেক করে দিয়েছি।’

অধিগ্রহণের বিষয়ে ওই সম্পত্তির মালিকদের নোটিস দেওয়া হয়েছে দাবি করে কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা আছে। নোটিশ করা হয়েছে, মাইকিং করা হয়েছে। ৭-৮ মাস ধরে অধিগ্রহণের কাজ চলছে। লাল দাগ দেওয়া, ময়লা অপসারণ ও সীমানা পিলার বসানোর কাজ চলছে। সীমানা চিহ্নিত করা হচ্ছে। দুই কিলোমিটারে এই কাজ চলছে। এ বিষয়ে বাড়ি মালিকরা অবগত আছেন।’

বাড়ি মালিকরা লিখিত নোটিস না পাওয়ার কথা জানানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাউন্সিলর বলেন, ‘তারা (বাড়ি মালিক) তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য অনেক কথাই বলতে পারে।’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘পিলার বসানোর কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি কাউন্সিলরের মালিকানাধীন। এ কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে পিলার বসানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর।’

তারা আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল উদ্ধারে কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সরকারি খাল উদ্ধারের নামে সংস্থাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি বাড়িরঘর, কারখানা উচ্ছেদ করছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘আমরা কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব ও পশ্চিম রসুলপুর এলাকার ভুক্তভোগীগণ নিজস্ব সম্পত্তিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছি। এসব সম্পত্তি ধারাবাহিকভাবে সিএস, পেটি, এসএ, আরএস এবং মহানগর জরিপে রেকর্ডভুক্ত। এক সময় বর্ষাকালে এসব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকত। তবে ঢাকা নগর রক্ষা বাঁধ তৈরির কারণে সে অবস্থা আর নেই। বরং উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। জমির মালিকদের অনেকেই রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন নিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ কিংবা ধার- দেনা করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)-এর স্বেচ্ছাচারী ও জবরদস্তি মনোভাবের কারণে অনেকেরই আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে।’

তারা বলেন, ‘আদি বুড়িগঙ্গা খালে এক সময় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ছিল। বছরের সিংহভাগ সময়ে এ খালে নৌযান চলাচল করেছে। ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার পর নগর রক্ষা বাঁধ তৈরির পরই সে অবস্থা পাল্টে যায়। মূলতঃ বাঁধ বাণে সম্পৃক্ত তদানীন্তন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অর্থলিপ্সার কারণে খালের কিয়দংশ ভরাট করেই বাঁধ নির্মাণ হয়েছিল। তাছাড়া অবৈধ দখলদাররা খাল বন্ধ করে ইচ্ছেমাফিক দখল করে নেয়। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও দখলদারের তালিকায় রয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খালে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ বয়ে আনতে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অথচ একটি কুচক্রী মহল ব্যক্তিমালিকানাধীন বংশ পরম্পরায় ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবরদখলের মাধ্যমে সরকারের সেই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। খাল সংস্কারের নামে গত বছর ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রেকর্ডীয় সম্পত্তি থেকে অনেককে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়, পরবর্তীতে যদি সিএসভুক্ত জমি সরকারের কাজে লাগে তাহলে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দিয়ে তা অধিগ্রহণ করা হবে। অথচ সেটি উপেক্ষা করেই ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে।’

জমির মালিকরা বলছেন, আমরা নিয়মিত জমির খাজনা পরিশোধ করেও ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ আতংকে দিনাতিপাত করছি। এমনকি নাগরিক সুবিধা না পেয়েও ২০১২ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। উন্নয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের দুষ্টচক্র আদি বুড়িগঙ্গা খাল উদ্ধারের নামে কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রেকর্ডভুক্ত জমি থেকে আমাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। এরই মধ্যে টার্গেটকৃত জমিতে লাল চিহ্ন দিয়ে যাওয়ায় আতংক বেড়ে গেছে।’

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আসমা বিবি বলেন, আমাদের জমিতে লাল দাগ (খাসজমির চিহ্ন) দিয়েছিল। পরে মামলা করি। সরকারি খুটি গাড়তে আসলে মামলার কাগজ দেখালে তারা চলে যায়। তারপর লেবাররা এসে উৎপাত করে। আমাদের বলে-এই জায়গা আমরা রাখতে পারব না। এটা খাস জায়গা। আমরা যদি জমি না দেই তাহলে কমিশনার (কাউন্সিলর) নিজে এসে আমাদের জমি নিয়ে যাবে। সে না পারলে মেয়র আসবে। প্রশাসন নিয়ে এসে আমাদের উচ্ছেদ করবে।’

তবে তারা কোনো অধিগ্রহণ নোটিস পাননি বলেও জানান এই ভুক্তভোগী।

নোটিস না পাওয়ার কথা জানালেন আরেক ভুক্তভোগীও। জয়নাল নামে ওই ভুক্তভোগী ঢাকা টাইমসকে বলেন, দুই কাঠা জায়গায় আমাদের রুম ছিল ৩০ টি। নোটিস ছাড়াই সেগুলো ভেঙে ফেলে। এর মধ্যে অনেক অনুনয় করে দুটি রুম অক্ষত রাখতে পারি। এখন দ্বিতীয় দফায় সেই রুম দুটি ভাঙ্গতে চাইছে। কাউন্সিলর এসে বলেছেন, লাল দাগের মধ্যে যা আছে সব ভাঙতে হবে।

তিনি বলেন, ৩০ বছর দরে এখানে বসবাস করছি। সিএস থেকে বর্তমান সিটি জরিপেও এ জমি আমাদের। ২০২৩ সাল পর্যন্ত খাজনাও দেওয়া আছে। এরপরও আমার ৬ কাঠা জায়গার মধ্যে সোয়া তিন কাঠা নিয়ে গেছে। বাকি পৌনে তিন কাঠায়ও লাল দাগ দিয়ে গেছে সিটি করপোরেশন। এরপর আমরা হাইকোর্টের সহায়তা নিয়েছি। এখন মহামান্য হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করে দিয়েছে। এরপরও স্থানীয় কাউন্সিলর কয়েকজন লোক নিয়ে এসে আমাদের স্থাপনা ভাঙতে নির্দেশ দিয়ে যান। বলেন, লাল চিহ্নের ভেতরে যা আছে সব ভেঙ্গে পিলার বসাতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/আরআর/আরকেএইচ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :