কচুরিপানায় সয়লাব কালিয়াকৈরের ঐতিহ্যবাহী মকস বিল

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বহুকালের ঐতিহ্যবাহী মকস বিলের সেই জৌলুস এখন আর নেই। বর্ষার মৌসুমে স্বচ্ছ জলরাশির এই বিল হয়ে উঠে পর্যটকদের প্রাণ কেন্দ্র। বৃহত্তম এই বিলের বুকে রঙ-বেরঙের নৌকায় ভরপুর থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার পর্যটকদের উপস্থিতিতে এ বিলের কয়েকটি এলাকায় চাঙ্গা হয়ে উঠে ব্যবসা বাণিজ্য। তবে সেই সম্ভাবনা এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মকস বিলের এক তৃতীয় অংশ জুড়ে সয়লাব হয়ে আছে কচুরিপানায়। যার ফলে এবারের ঈদে মকসে পর্যটকদের দৃষ্টি নেই তেমন একটা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঈদ প্রতিবছরের মতো এবারও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা মৌচাক ও মধ্যপাড়া দুই ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মকস বিলে পর্যটকদের আগমন ঘিরে উচ্ছ্বাস্বিত ছিলেন বিভিন্ন রেস্তোরা, জলকুটির, ক্যাফেসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এছাড়াও ঈদ মৌসুমে এসব এলাকার মাঝিরা সারা বছরের আয়ের আশায় প্রস্তুত করেছিলেন ছোট বড় নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো। কিন্তু শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। কারণ কচুরিপানার স্তুপের কারণে বিলে নৌকা চলাচল ব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, মকস বিলের তিনটি পয়েন্ট শোলহাটি, তালতলী, হাটুরিয়াচালা এলাকা ও তুরাগ নদী হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে শতশত নৌকা, ইঞ্জিন চালিত নৌকা, মিনি বোট চলাচল করত পর্যটক নিয়ে। আর এ খাতে ঈদ মৌসুমের এক মাসে আয় হতো অর্ধকোটি টাকা। এছাড়াও মকস বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা রেস্তোরা, জলকুটির, দই মাঠা ঘরগুলোতেও ঈদের এক মাসে আয় হতো এক কোটি টাকার উপরে। শুধু নৌকা আর রেস্তোরাই নয়। মকস বিলে পর্যটকদের আগমনে নানামুখী আয়ের উৎস সৃষ্টি হয় বছর জুড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ঐতিহ্যবাহী এই বিলটিতে প্রশাসনের নজরদারি নেই।
মকস বিলে জীবিকা নির্বাহে আসা হরেন্দ্র মাঝি ঢাকা টাইমসকে জানান, ঈদ সামনে দেইখা নৌকায় রঙ কইরা সাজিয়া গুছিয়া রাখছি। লোকজন আইব, নৌকায় কইরা ঘুরব। কিন্তু বিলের ভেতরে কচুরিপানার কারণে নৌকা চালাইতে পারুম না। পুরা বিলে কচুরিপানায় ভরা। ঈদের কয়দিন নৌকা চালিয়া যা কামাই তা দিয়া সারা বছর পরিবার নিয়া কোনরকম খাইয়া পইড়া বাঁচি। আমরা দাবি জানাই সরকারের পক্ষ থাইকা বিলটা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করার।
ইঞ্জিন চালিত নৌকার মালিক আমিনুর মিয়া, ফারুক হোসেন, কুদ্দুস মিয়া জানান, মকস বিলে এতো কচুরিপানা আগে দেখি নাই। নৌকা নিয়ে যে বিলে প্রবেশ করুম সেই পথও নাই। পুরা বিলে কচুরিপানায় আটকে আছে। এবছর আর নৌকা চলাচল করার কোন উপায় নাই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি বিলের ভাসমান কচুরিপানাগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে এই এলাকার মাঝি, জেলেদের আয় রোজগারের ব্যবস্থা হইতো।
এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার ঢাকা টাইমসকে জানান, বিষয়টি নিয়ে আগামী মিটিং এ আলোচনা করে মকস বিলের কচুরিপানা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এসএ)

মন্তব্য করুন