গায়ক ইমরানের জীবনের এই গল্প জানতেন?

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২৯ | প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৫

বর্তমান সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন বাংলাদেশি গায়ক ইমরান মাহমুদুল। একাধারে তিনি গীতিকার এবং সুরকারও। ২০০৮ সালে ‘চ্যানেল-আই সেরা কণ্ঠ’ নামে গান বিষয়ক প্রতিযোগিতায় প্রথম-রানারআপ হওয়ার মধ্যদিয়ে ইমরান তার পেশাদার গায়কী জীবন শুরু করেন।

গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন অ্যালবামসহ চলচ্চিত্রের গানে নিয়মিত কণ্ঠ দিচ্ছেন এই শিল্পী। সিনেমায় গান গেয়ে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন তিনটি ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’, একটি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস এবং একটি ‘বাংলাদেশ-ভারত চলচ্চিত্র পুরস্কার’।

গায়ক ইমরান সম্পর্কে এই তথ্যগুলো হয়তো অনেকেই জানেন। কিন্তু তার এমন কিছু অজানা গল্প রয়েছে, যেগুলো হয়তো তেমন কেউই জানেন না। একবার একটি সাক্ষাৎকারে নিজের এবং পরিবারের সেসব অজানা কথাই শেয়ার করেছিলেন বর্তমানের জনপ্রিয় এই গায়ক।

সাক্ষাৎকার থেকে যা জানা যায়

ইমরান পড়াশোনা করতেন রাজধানীর আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে স্বনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে বছরই ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। ফলে দেয়া হয়নি পরীক্ষা।

২০০৮ সালে ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হন ইমরান। কিন্তু এরপর আর পড়াশোনা আগাননি। যখন থেকে পেশাদার গানের জগতে পা রেখেছেন, তখন থেকেই পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করেন। মধ্যবিত্ত পরিবারে ব্যাংকার বাবা মোজাম্মেল হকের কষ্ট দেখে এ উপলব্ধি তৈরি হয় তার মধ্যে।

ইমরান বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। মা, দুই বোন আর আমাকে নিয়ে বাবা অনেক কষ্টে সংসার চালাতেন। তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার আয় দিয়ে আমার দুই বোন নীলা, সুমী আর আমার পড়াশোনার পাশাপাশি গান শেখার কাজও চলত। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবলাম, বাবার ওপর থেকে সংসারের চাপ কীভাবে লাঘব করা যায়। টুকটাক আয় শুরু হওয়ার পর বাবার পাশাপাশি সংসারের কিছু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিই।’

২০০৮ সালে ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ’ আয়োজনে প্রথম রানারআপ হওয়ার পর টুকটাক কনসার্টে অংশ নেয়া শুরু করেন ইমরান। সেখান থেকে কিছু বাড়তি আয় হয়। ইমরান বলেন, ‘জীবনের প্রথম বড় অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ হয় ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। ওই অনুষ্ঠান থেকে অনেক টাকা পুরস্কার পাই। পুরাটাই বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম।’

গায়ক বলেন, ‘২০০৮ সালে সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর টুকটাক শো করেছি। এই শো থেকে যা আয় হয়েছে, তার পুরোটাই পরিবারের কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। শুরু থেকে বাবাকে দেখেছি অনেক কষ্ট করেছেন। বাবা যেহেতু ব্যাংকার ছিলেন, আয় ছিল সীমিত। আমার আয় শুরুর পর পরিবারে বাবা একটি সাইড দেখতেন, আমি আরেকটি।’

ইমরান জানান, ‘যখন আমার ছোটবোনের বিয়ের কথা চলছে, বাবার হাতে অত টাকা ছিল না। ব্যাংকে আমার একটি ফিক্সড ডিপোজিট ছিল, সেটা দেখিয়ে ঋণ নিই। বাবা তার জায়গা থেকে চেষ্টা করেন, আমি আমার অবস্থান থেকে। বাবার সন্তান এবং বোনদের ভাই হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব মনে করেছি। এসব আমাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। বাবাকে হারিয়েছি ২০১৭ সালে। এখন পরিবারের পুরো ভার আমারই। এটা যে কী পরিমাণ আনন্দের, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

ইমরানের বড় বোন নীলার বিয়ে হয় ২০১০ সালে আর ছোট বোন সুমীর ২০১৫ সালের নভেম্বরে। বড় বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, আর ছোট বোন তার স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকায়।

ব্যাংকার বাবা মোজাম্মেল হক শুরুর দিকে চাননি তার সন্তান বড় হয়ে গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। বাবার ইচ্ছা ছিল, তার সন্তান যেন বড় হয়ে ব্যাংকার অথবা প্রকৌশলী হয়। কিন্তু মা আর বড় বোনের উৎসাহ এবং নিজের চাওয়ার তীব্রতা ইমরানকে গানের দিকে বেশি টেনে নেয়। একপর্যায়ে বাবা ইমরানকে সমর্থন করেন। সন্তানের গানের রেওয়াজ যাতে নিয়ম করে হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতেন।

ইমরান তার গানের জীবনের স্বপ্নের কথা বলেন এভাবে, ‘স্বপ্ন ছিল গান নিয়ে কিছু করব। ছোটবেলা থেকে যখন পছন্দের শিল্পীরা টেলিভিশনে গান করতেন, নিজেকেও ওখানে দেখতাম। মানে আমারও ইচ্ছা ছিল তাদের মতো গান গাওয়ার। আমাকে নানা সময়ে সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ ও বাপ্পা মজুমদার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগাতেন।

পরিবারের মধ্যে সবার আগে ইমরানকে শিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে দেখার স্বপ্ন ছিল তার নানির। নানির সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ইমরান ২০০৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় নাম নিবন্ধন করেন। দেশাত্মবোধক গান আর নজরুলসংগীতে বাদ পড়লেও ঢাকা বিভাগ থেকে রবীন্দ্রসংগীতে চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য মনোনীত হন। টিভির পর্দায় দেখা গেল ইমরানকে। তাতেই নানি অনেক খুশি।

সেই ইমরানকে এখন প্রায়ই টেলিভিশনে দেখা যায় নানা অনুষ্ঠানে। গানের অনুষ্ঠানের বিচারক পর্যন্ত হয়েছেন। নিয়মিত কনসার্ট তো করেনই। শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েও। গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক থেকে শুরু করে সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে ইমরানের কদর এখন অন্য পর্যায়ে।

মঙ্গলবার জনপ্রিয় এই গায়কের জন্মদিন। ১৯৯১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ইমরানের জন্ম হয় ঢাকার উত্তরায়। ৩২ পেরিয়ে ৩৩ বছরে পা দিলেন তিনি। ইমরানের জন্মদিনে এরইমধ্যে তাকে সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তার বেশ কয়েকজন সহকর্মী। ইমরানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ঢাকা টাইমসও।

(ঢাকাটাইমস/০৫সেপ্টেম্বর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :