উজানের ঢলে তিস্তায় বাড়ছে পানি, ভেঙেছে বাঁধ, ৫ জেলায় বন্যার শঙ্কা

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:৪৮

ভারতের উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে তিস্তা নদীর একটি বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তিস্তা নদীর নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নদীতীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। এ অবস্থায় নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার সর্বসাধারণের সতর্কতা অবলম্বনে মাইকিং করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বুধবার সকাল থেকে মাইকিং শুরু হয়। সেই সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, গজলডোবা পয়েন্টে পানি সমতল মঙ্গলবার মধ্যরাত হতে বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে স্থিতিশীল।

এদিকে তিস্তা নদী দোমুহুনী পয়েন্টে বুধবার ভোর থেকে প্রায় ১১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার তিস্তাতীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

তথ্য অনুযায়ী, তিস্তা নদী রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে আজ ভোরে বিপৎসীমার ২৮.৭৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করতে পারে।

এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তাতীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদী সংলগ্ন অঞ্চলসমূহে বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।

লালমনিরহাট

নদীপারের মানুষকে সতর্ক করতে লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের লোকজনকে পশুপাখিসহ প্রস্তুতি নিয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।

প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, ‘জেলার পাঁচ উপজেলার প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে, খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

নদীপারের মানুষকে গবাদি পশু ও মূল্যবান জিনিসসহ আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।’

নীলফামারী

জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপানী, গয়াবাড়ী, ঝুনাগাছচাপানী, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ১৫ গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে।

উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং মাইকিং করে তিস্তাপারের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নৌকা মজুদ রাখা হয়েছে।’

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনো ঘরবাড়িতে পানি না উঠলেও এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।’

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, বুধবার বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকাল ৪টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিমলা উপজেলা পরিষদকে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ আছে।

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে বন্যা মোকাবেলায় ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চরবাসীকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। এদিকে বন্যার আশঙ্কায় তিস্তার চর ও তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, পানি বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার মধ্যরাতে তিস্তা ব্যারাজ ও ভোরে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ২৭.৪, দিনাজপুরে ৫৪.৪, সৈয়দপুরে ২৭, নীলফামারীতে (ডিমলা) ১১.৯, কুড়িগ্রামে ১৫ এবং পঞ্চগড়ে ৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/ইএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রম দেখতে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন ইসি আলমগীর

নারীদের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী 

অভিশপ্ত মে মাস, আয়লা-আমফানের পর ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’! 

আরসার আস্তানায় গোলাবারুদ জব্দ: ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাচ্ছেন ১৮০ পুলিশ সদস্য

‘পূর্ব বা পশ্চিম, ফুচকা সেরা’, খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ লু

সৌদি আরব গেছেন ১৮ হাজার ৬৫১ হজযাত্রী

স্মরণশক্তিকে মেধা বলার মানসিকতা পরিহার করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

‘জলবায়ু ঝুঁকি থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার’

মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা প্রণয়ন: সেতুমন্ত্রীকে রোড সেইফটি কোয়ালিশনের অভিনন্দন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :