ভৈরবে দুমাস ধরে অরক্ষিত ট্রেনের তিন বগি, দেখার কেউ নেই

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৩৬

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার দুমাস পার হলেও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে বিধ্বস্ত তিনটি বগি। এরই মধ্যে দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন বগির মূল্যমান যন্ত্রাংশসহ দরজা জানালা সিট কভার চুরি হয়ে যাচ্ছে।

গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে আউটার সিগনালের কাছে লাইন ক্রসিংয়ের সময় একটি কন্টেইনার ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ‘এগারসিন্ধু এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে নিহত হন ১৯ জন। আহত হন শতাধিক যাত্রী।

এ ঘটনার পরদিন রাতেই আসে রিলিফ ট্রেন। এই ট্রেনটির সাহায্যে লাইনচ্যুত তিনটি বগি উদ্ধার করে লাইনের দক্ষিণে খাদে ফেলে রাখা হয়। এরপর থেকে একের পর এক বগিগুলোর মূল্যমান যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর দুই মাদকসেবী ট্রেনের বগির একটি মূল্যবান দরজা চুরি করে রিকশায় করে নিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয়রা এক চোরকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। পরে রেলওয়ে থানায় এ বিষয়ে পুলিশ একটি মামলা করে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার পর থেকে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে ট্রেনের তিনটি বগি। রাতের অন্ধকারে চুরি করা হচ্ছে এসব বগির মূল্যবান যন্ত্রাংশ। রেলওয়ে পুলিশ বলছে এসব পাহারা দেওয়া তাদের কাজ নয়। রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী এসব বগি পাহারা দিবে।

অপরদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলছে, দিনে তারা পাহারা দিলেও রাতে পাহারা দেওয়ার লোকবল নেই। গত দুমাসে পরিত্যাক্ত বগিগুলোর মূল্যমান যন্ত্রাংশসহ, দরজা, জানালা, সিট কভার, পানির টেপ, লোহা জাতীয় দ্রব্য চুরি হয়ে গেছে। কোটি টাকা মূল্যের তিনটি বগির কোনো কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হচ্ছে না অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনার দুমাস পার হয়ে গেলেও বিধ্বস্ত তিনটি বগি গ্রামের সড়কে পড়ে আছে। দেখভাল করার কেউ নেই। প্রতিদিন দিনে রাতে একটি চক্র মূল্যবান যন্ত্রপাতিসহ লোহার অংশ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তিনটি বগি সড়কে পড়ে থাকার কারণে গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। অতি দ্রুত বগিগুলো সড়ক থেকে সরানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবি জানান তিনি।

আরেক বাসিন্দা আসাদ মিয়া বলেন, এই সড়ক দিয়ে স্টেশনের পাশে পৌর কবরস্থান রয়েছে। আমাদের গ্রামের কেউ মারা গেলে সেখানে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুমাস যাবত ট্রেন দুর্ঘটনায় কবলিত তিনটি বগি সড়কে পড়ে থাকায় কারণে মরদেহ কবরস্থানে নিয়ে যেতে হলে অন্তত দুই গ্রাম ঘুরে নিয়ে যেতে হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামবাসী।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, বিধ্বস্ত তিন বগি সড়কে পড়ে থাকার কারণে রাত্র হলেই সড়কটিতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। যার ফলে সন্ধ্যার পর থেকে এই সড়ক দিয়ে কেউ চলাচল করলে ছিনতাইকারীরা পথচারীদের টাকা পয়সাসহ মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

বাদল মিয়া বলেন, পড়ে থাকা বগিগুলোর কারণে কয়েক হাজার গ্রামবাসী নানান সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। সরকার যদি এই সমস্যাটি দ্রত সমাধান করে দেয় তাহলে আমরা গ্রামবাসী বেশ উপকার হবে।

এ বিষয়ে ভৈরব রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলিম শিকদার জানান, দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত পরিত্যক্ত তিনটি বগি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। দিনরাত পাহারা দেয়ার মতো পুলিশ আমার থানায় নেই। তারপরও রেলওয়ে পুলিশ দিনের বেলায় টহল দল পাহারা দিয়ে থাকে। রাতের বেলা চুরি হলে আমরা কি করতে পারি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বগিগুলি দ্রুত খাদ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গাফলতি না দায়িত্বে অবহেলা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তা আমি বলতে পারব না।

ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের নিরাপত্তা ইন্সপেক্টর তাজবির আহমেদ বলেন, আমার জনবল মাত্র ৮/১০ জন। তার মধ্য সবাই একসঙ্গে ডিউটি করে না। আমি অরক্ষিত বগিগুলো দিনের বেলা পাহারা দিলেও রাতের অন্ধকারে এতদূরে নিরাপত্তাকর্মীরা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। বগিগুলো খাদ থেকে উদ্ধার করে দ্রুত সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউছুফ বলেন, স্টেশনের ট্রেন চলাচলসহ টিকিট বা অন্য সমস্যাগুলি দেখার দায়িত্ব আমার। অরক্ষিত বিধ্বস্ত বগি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আমার নয়। তবে বগির যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বগি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই।

(ঢাকাটাইমস/১৫ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :