ছেলের নিষ্পাপ চাহনি মনে করিয়ে দিত ‘বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে’

মধ্যবৃত্ত পরিবারের বড় সন্তান মোহাম্মদ জাহিদ হাসান অপু। সব বাধা পেরিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জন করেছেন সাফল্য। ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
তার জন্ম ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কাকচর নামক গ্রামে। স্কুল-কলেজের পাঠ চুকিয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করেছেন টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে থেকে। একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তার বাবা আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মচারী, মা মাহফুজা আক্তার গৃহিণী। অপুর সাফ্যল্যের কথা ও পরামর্শ তুলে ধরতে থাকছে আরও বিস্তারিত।
আপনার শৈশব-কৈশোর কিভাবে কেটেছে?
শৈশব কৈশোর দুরন্ত ছিল। প্রতিদিন বিকেলে খেলাধুলা করা, সন্ধ্যার পর কারেন্ট চলে গেলে লুকোচুরি খেলা, ঘুড়ি উড়ানো, শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা আমার দুরন্তপনার অংশ ছিল। সকল খেলাধুলায় বন্ধুদের মধ্যমনি ছিলাম। কলেজে ভর্তির পর এই সব দুরন্তপনা হারিয়ে গিয়েছিল।
বিসিএস-র স্বপ্ন কি স্কুল জীবন থেকেই ছিল?
-সত্যি বলতে আমার বাসার পাশেই ইউএনওর বাসা ছিল। উনাদের জীবনযাপন আর মানুষের তাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা ছিল তা আমার কিশোর মনকে আকৃষ্ট করত। আমিও ভাবতাম ইস আমি যদি কখনও ইউএনও হতাম! স্বপ্নের বীজটা তখনই বপন করেছিলাম আমার হৃদয়ে।
বিবিএস বা প্রফেশনাল জীবনে আসার জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন কে?
-প্রফেশনাল জীবনে আসার জন্য আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল আমার মা। পাশাপাশি আমার বাবার হাড়ভাঙা খাটুনি আমাকে উদ্দীপ্ত করত। সবচেয়ে কঠিন সময়ে আমার স্ত্রী সঙ্গে থেকে আমার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার অক্সিজেন দিত। আমার পরিবারের সবার বিশ্বাস ছিল আমি পারব কিন্তু প্রায়শই আমার মনে হত ক্যাডার পাওয়া হয়ত আমার পক্ষে অসম্ভব কারণ আমার শুধু জেনারেল ক্যাডার হওয়ার সুযোগ ছিল। সবশেষে আমার ছেলের নিষ্পাপ চাহনি আমাকে মনে করিয়ে দিত আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে পরিবারের নতুন পরিচয় সৃষ্টির জন্য।
জীবনে কতবার ব্যর্থ হয়েছেন?
-আমার জীবনটা অনেক উথালপাথালময়। আমার জীবনে আমি যতবারই সিদ্ধান্ত নিতে দোটানায় ছিলাম ততবারই ব্যর্থ হয়েছি। অনেকগুলো ভাইভা পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছি। জীবনে সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে যখন ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় নন-ক্যাডার হই।
ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো কি ছিল?
-সিদ্ধান্তহীনতা, আত্নবিশ্বাস হারানো, সময়ের অপচয়, পড়াশোনায় উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে হয়ত আমি জীবনে অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু আমি বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি, শ্রম দিয়েছি সফল হওয়ার জন্য। সফলতার জন্য প্রচণ্ড জেদ থাকতে হবে, নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধ করতে হবে, লেগে থাকতে হবে। প্রতিটি সুযোগকে শেষ সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে। দিনশেষে এটা বলতেই হবে শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।
বিসিএসের জন্য কিভাবে পড়াশোনা করতেন?
-বিসিএসের জন্য নিয়মমাফিক সিলেবাস ধরে পড়তাম। আমি নিয়মিত ইংরেজি পড়তাম পাশাপাশি যেকোন এক বিষয় পড়তাম। প্রতিদিন অনুবাদ করতাম। সংবিধান মুখস্ত করার চেষ্টা নিয়মিত করতাম। প্রয়োজনের বাইরে কিছুই করতাম না।
বিবিএস বা প্রফেশনাল জীবনের জার্নিটা কিভাবে?
-মাস্টার্স পাশের এক বছরের মধ্যেই ২০১৮ সালে এসে আমার কয়েকটা ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি হলে আমি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদান করি। কিন্তু মনটা বিসিএস পরীক্ষায় পড়ে থাকত। তখন আমি একসঙ্গে ব্যাংক বিসিএস পড়া শুরু করি। ২০২০ সালে এসে আমার আবার ৩টা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসারের চাকরি হয় এবং আমি রূপালী ব্যাংকে যোগদান করি। এ সময় করোনা প্রাদুর্ভাব এর মধ্যে ৪০তম বিসিএস ভাইবা দেই কিন্তু নন-ক্যাডার হই। পরবর্তীতে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা ব্যাংকের প্রচণ্ড কাজের চাপের মধ্যে ম্যানেজার স্যারের আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেই এবং প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই।
আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজদের জন্য আপনার কি পরার্মশ থাকবে?
-নতুনদের উদ্দ্যেশ্যে বলতে চাই বিসিএস পরীক্ষা যতটা না মেধার তার চেয়ে বেশি ধৈর্যের। তাই শুধু বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে পরে না থেকে অন্য চাকরির জন্য সমানতালে প্রস্তুতি নিতে হবে নতুবা একটা সময় হয়ত পূর্বের অনেকের মতো খালি হাতে ফিরতে হবে। বিসিএস পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য পড়ার চেয়ে বাদ দেওয়া শিখতে হবে আগে। নতুবা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই খেই হারিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। প্রিলির পড়াকে কিভাবে লিখিত পরীক্ষায় ব্যবহার করা যায় সেই কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি কনফিডেন্সের সঙ্গে একটি ভালো ভাইবা দিতে হবে। তবেই রেজাল্ট শিটে নিজের রোলটি বহুল কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার লিস্টে পাওয়া যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএম

মন্তব্য করুন