আখাউড়ায় ৮টি স্কুল ভবন এক লাখ ৭৯ হাজারে বিক্রি!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন স্কুল ভবন মাত্র ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকায় নিলাম দেওয়া হয়েছে। যা বাজার মূল্য থেকে অনেক কম বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিলামের পরে নিলামকারীদের মধ্যে আবার ‘ফিরতি নিলাম’হয়। তখন এই স্কুল ভবনগুলোই সরকারের বিক্রয়কৃত মূল্য থেকে ১০-১৫ গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
৮টি স্কুলের বিক্রয় মূল্য এত কম নির্ধারণ করায় নিলাম কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বড় ভাই নিলামের কারসাজি করেন বলেন অভিযোগ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। গত ২৪ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের ২য় তলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেয়ালে শিক্ষা অফিসার শাহ ইলিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রকাশ্য নিলামে ওই ভবনগুলো বিক্রি করা হয়। ৯২ জন ডাককারী নিলামে অংশ নেয়। ৮টি ভবনের ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করেছিল মাত্র এক লাখ ৬৮ হাজার ১১৬ টাকা। পরে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় ভবনগুলো নিলামে বিক্রি করে নিলাম কমিটি। ভিত্তি মূল্যের চেয়ে মাত্র আটশ থেকে তিন হাজার টাকা বেশিতে এসব ভবন বিক্রি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, একটি সিন্ডিকেট নিলাম কমিটিকে ম্যানেজ করে কম দামে স্কুল ভবনগুলো নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তারা নিজেদের মধ্যে ‘ফিরতি নিলাম’ আয়োজন করেন। এর ফলে সরকার কয়েক লক্ষ টাকা বঞ্চিত হয়েছে। মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট।
সরজমিনে রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একটি নতুন ভবনের কিছু অংশসহ টিনশেডের পুরাতন ২টি ভবন ৩৩ হাজার টাকায় নিলাম দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০ ফুট লম্বা একটি টিনশেডের ভবন। ৩ টি দরজা ও ১০টি জানালা আছে। টিনের চালায় কাঠ ও লোহার এঙ্গেল আছে। এ ভবনটি মাত্র ৯ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা ফেরদৌসি বলেন, ভবনটি যে দামে (নয় হাজার ৫০০ টাকা) বিক্রি হয়েছে সেটা খুবই কম। তবে কীভাবে দাম নির্ধারণ করা হয় সে বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান এসেছি। নিলাম হওয়া বিদ্যালয় ভবনগুলো সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নেই। উপজেলা প্রকৌশলী দাম নির্ধারণ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, খুব কম দামে স্কুলভবন বিক্রি করা হয়েছে। পরবর্তী নিলামে তারা অনেক বেশি টাকায় বিক্রি করেছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। ভবনগুলো মাপ ঝোপ করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও এভাবেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নিলাম ডাক কমিটির সভাপতি রাবেয়া আক্তার বলেন, যারা টেকনিক্যাল লোক তারা মূল্য নির্ধারণ করেছে। ভিত্তিমূল্যের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করা হয়েছে। ভিত্তি মূল্যের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন। দাম কম হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ফোনে বিস্তারিত কথা না বলে অফিসে যেতে বলেন।
(ঢাকা টাইমস/০৫ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন