বগুড়ায় চলছে ৪৫০ বছরের ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলা

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৪০ | প্রকাশিত : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:২১

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের দিনেই বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলা। ৪৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো এই মেলা প্রথা অনুযায়ী মাঘের শেষদিনের নিকটবর্তী বুধবারে ইছামতী নদীর পাড়ে আয়োজিত হয়। মেলাটি সন্যাস মেলা, মাছের মেলা নামে পরিচিত। তবে হাল আমলে এসে এ মেলা জামাই মেলা নামে বেশি পরিচিতি পেয়েছে। যে কারণে রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে নিয়ে যেতে চলছে জামাইদের নীরব প্রতিযোগিতা। এ বছর মেলায় ৫ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে বলছে আয়োজক কমিটি।

কথিত আছে, ৪৫০ বছরের বেশি সময় আগে মেলা সংগঠনের স্থানে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। একদিন সেখানে এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব হয়। পরে দলে দলে সন্ন্যাসীরা এসে একটি আশ্রম তৈরি করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে সেটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয়। পরবর্তীতে, প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে পূজার দিনটি একটি গ্রাম্য মেলার গোড়াপত্তন হয়। এক সময় সন্ন্যাসীরা স্থানটি ত্যাগ করে চলে গেলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন সন্ন্যাসী পূজা বন্ধ করে দেননি। এভাবেই বাড়তে থাকে মেলার পরিচিতি।

মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকত দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইর মাছ। তবে, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাঘাইড় মাছকে মহাবিপন্ন ঘোষণা করায় তিন বছর ধরে মাছ‌টি বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে পুকুর-নদী-বিলের তাজা রুই, কাতলা, ব্রিগহেড, ব্লাককার্প, গুজিয়া, বোয়াল, আইড়, পাঙ্গাশ ছাড়াও আছে বিভিন্ন সামুদ্রিক হিমায়িত মাছ। এবার মেলায় সবচেয়ে বড় মাছ ৪০ কেজি ওজনের গোলপাতা বা পাখি মাছ। দাম নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার ভিন্নমত থাকলেও বেচাকেনা চলছে জমজমাট। পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ বড় সাইজের মাছের পরেই বড় এবং বিভিন্ন আকৃতির মিষ্টির। এছাড়া রয়েছে নাগরদোলা, সার্কাসসহ ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড।

টাঙ্গাইল থেকে আসা শরীফ তালুকদার নামে এক মাছ ব্যবসায়ী জানালেন, সামুদ্রিক মার্লিন মাছ কক্সবাজার থেকে নিয়ে এসেছেন। তারা ফেসবুকের বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করে থাকেন। বগুড়ার মেলাটির বিষয়ে জানতে পেরে তারা মাছটি নিয়ে মেলায় এসেছেন। তারা দাম চাচ্ছেন ১৫০০ টাকা কেজি। মাছটির ওজন ৪০ কেজি হতে পারে।

মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল জানালেন, আমরা দেশীয় প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছি। মোট ১০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আশা করছেন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই সব মাছ বিক্রি শেষ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত (সকাল ১০টা) ২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। একেকটা রুই-কাতলের ওজন ১২ থেকে ১৫ কেজি। ১২ কেজি ওজনের রুই কাতল ৯০০ টাকা কেজি। সিলভার কার্প ১০ কেজি ওজনেরটা ৫০০ টাকা কেজি।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা থেকে ১৩৫ মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে এসেছেন আনারুল নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী। তিনি জানালেন, একদিনে প্রায় ৮ লাখ টাকার উপরে মাছ বিক্রি করবেন তারা।

মেলায় আসা জাফর আলী নামে এক জামাই জানালেন, আমি এলাকার জামাই। শ্বশুরবাড়ির দাওয়াতে এসেছি। প্রতি বছর আমাকে দাওয়াত করা হয়। এবার দিয়ে ১৩ বছর হবে। মেলায় আমি মাছ কিনতে এসেছি। শুধু আমি না। শ্বশুরবাড়িতে আরও অনেক লোকজন এসেছেন। আমরা ঈদের দিনের মতো আনন্দ করি এই মেলায়।

মনির হোসেন নামে আরেক জামাই জানালেন, মেলা উপলক্ষে অনেক বাড়িতেই লোন পর্যন্ত নেওয়া হয়। আমার শ্বশুরই কিস্তির লোন তুলেছেন ৪০ হাজার টাকা। যেমন আজ সকালে আমার শাশুড়ি আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। আমি যেহেতু এলাকার জামাই আমাকে সবচেয়ে বড় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মাছ কিনতে হবে। ৫ কেজির মতো মাংস কিনতে হবে। মিষ্টি কিনতে হবে। মেলা উপলক্ষে আমরা সবাই একত্র হতে পারি। এটা আমাদের কাছে অনেক আনন্দের।

গাবতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে।

মেলায় জুয়া এবং অশ্লীল নৃত্যের অভিযোগ শোনা যাচ্ছিলো, এর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম অভিযোগ পাওয়ার পর গতকালই আমরা পর আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। মেলায় আবারও এরকম কোনো ঘটনার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো।

মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, মেলাটি মূলত মাছের। মেলায় প্রায় ৫০০টি মাছের দোকান রয়েছে। এই দোকানগুলোতে একদিনে ৫ কোটি টাকার মতো লেনদেন হবে। মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :