যেভাবে হস্তান্তর করা হলো মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ জনকে 

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
| আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৫ | প্রকাশিত : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:২০

আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতে টিকতে না পেরে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (বিজিপি), সেনাবাহিনী, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট থেকে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার নাগরিকদের বিজিপির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সেন্টমার্টিন-টেকনাফ রুটের পর্যটকবাহী দুটি জাহাজে করে তাদের গভীর সমুদ্রে অবস্থান করা মিয়ানমারের জাহাজে নিয়ে যাওয়া হবে। জাহাজটি রাত ১টায় মিয়ানমার সিটু বন্দর থেকে বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছেছে।

এর আগে সকালে তাদের বান্দরবানের ঘুমধুম স্কুল ও টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজিবির বিশেষ ১১টি বাস নিয়ে নিরাপত্তায় ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাটে আনা হয়। সেখানে ইনানী ঘাটে তাঁবু স্থাপন করে তাদের রেখে নাম ও ছবি শনাক্ত করে জাহাজে তোলা হয়। নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক।

এর আগে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে স্পিডবোটে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল মিউ থুড়া নাঙয়ের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধি দল ইনানী নৌবাহিনী জেটিঘাটে এসে পৌঁছে।

বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-বিজিবি মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অ কিউ মোয়ে।

এছাড়া মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

হস্তান্তর শেষে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিককে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি)র কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপির সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুজন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক।’

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। অতিসম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তেও এসে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বিজিবির তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সদস্যদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আগত ৯ জন বিজিপি সদস্যকে বিজিবির তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবির টহল ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজিবি সীমান্তের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক, সীমান্ত দিয়ে আর একজন মিয়ানমারের নাগরিককেও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘১১ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজেপিসহ ৩৩০ জন সদস্যকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিজিবি'র রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল মোয়ে তোরা নাঙ এর নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ইনানীর নৌ-বাহিনীর জেটিঘাটে আসে এবং বিজিবির নিকট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে গ্রহণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যায়।

অস্ত্র হস্তান্তর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি বলেন, এটা আলাদা একটা প্রক্রিয়া, আগে ব্যক্তি হস্তান্তর করার পরে অস্ত্র নিয়ে দু’দেশের সফল আলোচনা করে এটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অ কিউ মোয়ে বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র-মন্ত্রণালয়, বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র‌্যাব, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও বাইশফাঁড়ী সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি'র তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পে আক্রমণ করে। একইসাথে উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তের বিপরীতে কাইচিংরং, মইদু, গুদুছড়া ও মংডু এলাকায়ও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অস্ত্রসহ বিজিবি'র কাছে আত্মসমর্পণ করে।

(ঢাকাটাইমস/১৫ফেব্রুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :