বান্দরবানে কুকি-চিন নেতার হুমকি, গণপরিবহন বন্ধ

কেএনএফের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ফ্লেমিংয়ের হুমকির জেরে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গণপরিবহন চলাচল বন্ধের হুমকি দেন কুকি-চিন নেতা ফ্লেমিং। তার এ হুমকিতে নতুন করে আবারও সংকট শুরু হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে।
জানা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলায় কেএনএফ সদস্যদের গুলিতে ২নং রুমা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড রিঝুক পাড়া এলাকায় এক যুবক আহত হয়। এ ঘটনার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি নাগরিক সমাজের ব্যানারে কেএনএফের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বম জনগোষ্ঠীর কয়েকটি ঘরবাড়িসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
ভাংচুরের ঘটনার পর কুকি-চিন নেতা ফ্লেমিং ওই হুমকি দিয়েছেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে।
এদিকে রবিবার সকাল ৭টার দিকে রুমা উপজেলায় বাসের লাইনম্যান লুপ্রু মার্মা সদরঘাট থেকে বাজারে যাওয়ার সময় পলি পাড়া কবরস্থান এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা। পরে মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বান্দরবান বাস মালিক সমিতির অফিস সহকারী মিলন দাস বলেন, সকালে আমাদের একজন লাইনম্যানকে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। তাই নিরাপত্তার কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে রবিবার সকালে বম অধ্যুষিত সদরঘাট, কলেজ এলাকা, পলি পাড়া, কবরস্থান, বেথেল ঘাট এলাকায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ফাঁকা গুলি করেছে বলে জানিয়েছেন রুমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ২নং সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈবং মার্মা। তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পাড়ায় এসে অস্ত্রের মুখে মানুষের গবাদিপশু নিয়ে যাওয়া, চাঁদা আদায় করা ও হুমকি প্রদানসহ সাধারণ ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। স্থানীয়রা তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদও করছে। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে বান্দরবান থেকে রুমা ও থানচিতে আসা সকল গণপরিবহনের ওপর ধর্মঘটের নামে হয়রানি শুরু করছে তারা।
সরেজমিন জানা যায়, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীরা। বেশি ভাড়ায় মোটরসাইকেল ও লেগুনা দিয়ে গন্তব্যে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৌয়দ মাহবুবুল হক বলেন, সকালে একদল সন্ত্রাসী বাসের লাইনম্যানকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে বলে শুনেছি। এর ফলে বান্দরবান ও রুমা উপজেলায় বাস চলাচল করেনি। সন্ত্রাসীরা কয়েকটি এলাকায় জনসাধারণকে আতঙ্কগ্রস্ত করার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
তবে জননিরাপত্তার জন্য উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিজিবি, সেনাবাহিনী ও পর্যাপ্ত পুলিশের টহল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে কেএনএফ সৃষ্টি হয়।
তারা রাঙামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে বলে দাবি করে। অঞ্চলগুলো হলো- বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমি। এ ছাড়া রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম-এই উপজেলাগুলো নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করছে।
(ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/পিএস)

মন্তব্য করুন